দেশজুড়ে

ময়মনসিংহে এএসপি-পরিদর্শকের বিরুদ্ধে মামলা

ময়মনসিংহে এএসপি-পরিদর্শকের বিরুদ্ধে মামলা

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান ও একই থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দুইজনই পদোন্নতি পেয়ে একজন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ও একজন পরিদর্শক হয়েছেন বলে জানা গেছে।

Advertisement

শনিবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় জাগো নিউজকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪ নম্বর আমলি আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আজহারুল ইসলাম।

তিনি জানান, ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ১৭ এপ্রিল মামলার আবেদন করেন গিয়াস উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। ওইদিনই বিচারক এ.কে.এম ছিফাতুল্লাহ্ আবেদনটি আমলে নেওয়ায় রেজিস্ট্রার খাতায় মামলা (২৭৭/২৫) হিসেবে নথিবদ্ধ করা হয়েছে।

মো. আজহারুল ইসলাম জানান, মামলা সম্পর্কে বিচারক এখনো কোনো আদেশ দেননি। রোববার (২৭ এপ্রিল) আদেশ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

Advertisement

মামলাটি দায়ের করেছেন গিয়াস উদ্দিন (৫৫)। তিনি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মরিচারচর গ্রামের মৃত শাহেদ আলীর ছেলে।

মামলা ও বাদী সূত্রে জানা যায়, গিয়াস উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী নজরুল ইসলামের পরিবারের পূর্ব বিরোধ ছিল। ২০১০ সালের ২৭ নভেম্বর দুই পক্ষের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এসময় প্রতিপক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে শফিকুল ইসলামের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এমতাবস্থায় পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরলে কিছুদিন পর আবারও অসুস্থ হয়ে যান। এমতাবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে দশ দিন চিকিৎসা শেষে আবারও বাসায় নিয়ে আসা হয়। বাসায় কয়েক বছর স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা চলছিল। ২০১৫ সালে গুরুতর অসুস্থ হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে বসায় নিয়ে আসার পরদিন (একই বছরের ২ জানুয়ারি) মারা যান শফিকুল ইসলাম।

এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে থানায় মামলা করতে গেলে ওসি মো. মিজানুর রহমান মামলা নেননি। এমতাবস্থায় ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৪ ধারায় নালিশি অভিযোগ দায়ের করা হয়। ওইদিনই অভিযোগটি থানায় এজহার হিসেবে নথিবদ্ধ করতে থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন বিচারক। ওসি মো. মিজানুর রহমান এজাহার হিসেবে নথিবদ্ধ না করে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাজরুল ইসলামের মাধ্যমে বাদী গিয়াস উদ্দিনকে জানান মামলাটি থানায় এসেছে, আপনার (বাদীর) টিপসই লাগবে। বাদী সরল মনে ওসি ও এসআইয়ের কথা বিশ্বাস করে টিপসই দেন।

পরবর্তীতে আদালত থেকে বাদী মামলার কপি তুলে দেখেন, অন্য একটি মামলা লিখে বাদীর স্বাক্ষর নেওয়া যে মামলাটি এজহার হিসেবে নথিবদ্ধ করেন তাতে বাদীর নালিশি মামলার ১ নম্বর আসামি নজরুল ইসলামের নাম বাদ দিয়ে বাদীর ভাতিজা মো. আবদুর রশিদের নাম লিখে রাখা হয়েছে।

Advertisement

নিহতের ছেলে সুমন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আমার জেঠা গিয়াস উদ্দিন আদালতে নজরুল ইসলামকে এক নম্বর আসামি করে আরও ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছিলেন। অন্যদের নাম ঠিক রেখে ১ নম্বর আসামির নাম কেটে দেন ওসি মো. মিজানুর রহমান ও এসআই মো. মাজহারুল ইসলাম। মামলা করার সময় নজরুল ইসলাম ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চাকরি করতেন। বর্তমানে তিনি অবসরে আছেন।

রাজনৈতিক সুপারিশ আর মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নজরুল ইসলামের নাম বাদ দিয়ে নিরপরাধ আবদুর রশিদকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। আবদুর রশিদকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। তাই আমার পরিবার কষ্ট পেয়ে এত বছর মামলার কোনো খোঁজখবর নেয়নি।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। এখন বৈষম্য দূর করতে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। মানুষ তার আইনগত অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার ফিরে পাওয়ার আশা করছে। তাই সাবেক ওসি মিজানুর রহমান ও সাবেক এসআইকে আইনের আওতায় আনতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আশা করছি, আদালত তাদের গ্রেফতার করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।

মামলার আইনজীবী শাহজাহান কবির সাজু বলেন, বিচারকের নির্দেশে আবেদন মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। বাদী নিশ্চয় ন্যায়বিচার পাবেন বলে প্রত্যাশা করছি।

বক্তব্য জানতে নজরুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈশ্বরগঞ্জ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হয়েছেন। তিনি বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন। একই থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাজহারুল ইসলাম পদোন্নতি পেয়ে পরিদর্শক হয়েছেন। তিনি কোথায় কর্মরত তা জানা যায়নি।

কথা হয় ঈশ্বরগঞ্জ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিষয়টি এখনো জানি না। ঈশ্বরগঞ্জ থানায় ২০০৯ সাল থেকে আড়াই বছর চাকরি করেছি। এ সময়ের মধ্যে কারও সঙ্গে অন্যায় করিনি।

বাদীর দায়ের করা মামলায় ১ নম্বর আসামি নজরুল ইসলামের নাম কেটে ১ নম্বরে বাদীর ভাতিজা আবদুর রশিদের নাম লেখার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ঘটনাটি অনেক আগের। আগের মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্রগুলো দেখতে হবে। এরপর সবকিছু বলা যাবে। এই মুহূর্তে এতকিছু মনে নেই।

একই ধরনের বক্তব্য দিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমিও মামলার বিষয়ে কিছু জানি না। তবে খোঁজ নেব। অনেক আগের ঘটনা হওয়ায় মনে নেই। আমি এখন পদোন্নতি পেয়ে পরিদর্শক হয়েছি।

কামরুজ্জামান মিন্টু/এফএ/জেআইএম