ব্যস্ত রাস্তার যানজটে দাঁড়িয়ে প্রচণ্ড হর্নের শব্দের মাঝে আশেপাশে তাকাতে গিয়ে কখনো কি লেখা দেখেছেন ‘অযথা হর্ন বাজাবেন না’? নিশ্চয় দেখেছেন। আপনার মতো প্রতিদিন রাস্তায় বের হওয়া বেশিরভাগ মানুষই কোথাও না কোথাও এ লেখাটি দেখেছেন। তবুও কেন বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা সিগন্যাল ও জ্যাম নির্বিশেষে ভয়াবহ শব্দদূষণে বিষিয়ে তুলছে শহরটিকে?
Advertisement
এর পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। তবে একটি মূল কারণ অধৈর্য, আরেকটি অজ্ঞতা। বাংলাদেশের রাস্তার অসহনীয় শব্দদূষণ এড়াতে হর্নের সঠিক ব্যবহার জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এবং সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুযায়ী হর্নের অপব্যবহার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই চলুন জেনে নিই কখন হর্ন বাজানো উচিত আর কখন নয়-
কখন হর্ন বাজাবেন- ১. সতর্কতা দেওয়ার জন্যযখন কোনো যানবাহন বা পথচারী আপনার গাড়ির লেনে হঠাৎ ঢুকে পড়ে বা বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি করে। এছাড়া বেপরোয়া ওভারটেকিং রোধে সংক্ষিপ্ত হর্ন দেওয়া যেতে পারে।
২. জরুরি অবস্থায়অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস বা পুলিশ গাড়ি পারাপারের সময় সাধারণ যানবাহনকে সতর্ক করতে হর্ন ব্যবহার করা যায়। তবে জরুরি যানবাহন নিজেই সাইরেন ব্যবহার করবে।
Advertisement
পাহাড়ি রাস্তা, শার্প কার্নার বা যেখানে সামনের যানবাহন দৃশ্যমান নয়, সেখানে সংক্ষিপ্ত হর্ন দিয়ে সতর্ক করা লাগে।
৪. ট্রাফিক সিগনালেট্রাফিক পুলিশ ইশারা করার বা লাইট সবুজ হওয়ার পরও সামনের গাড়ি না নড়লে একবার হর্ন দেওয়া যেতে পারে, তবে অনবরত নয়।
৫. পার্শ্বরাস্তা পার হওয়ার সময়আপনার বাম পাশে যদি কোনো রাস্তা চলে যায় ও আপনি সোজা যাবেন, তখন পাশের রাস্তা থেকে আসা গাড়িকে সতর্ক করতে হর্ন দিকে হয়।
কখন হর্ন বাজাবেন না- ১. নীরব এলাকায়হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ বা ধর্মীয় স্থানের সামনে হর্ন বাজানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই আইন ভঙ্গে জরিমানা হতে পারে।
Advertisement
ট্রাফিক জ্যামে ধৈর্য হারিয়ে বারবার হর্ন বাজানো অবৈধ এবং এটি শব্দদূষণের শামিল।
৩. রাতের বেলারাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অনাবশ্যক হর্ন ব্যবহার নিষেধ, যাতে জনসাধারণের অসুবিধা না হয়।
৪. অপ্রয়োজনে লম্বা হর্নহাইড্রোলিক হর্ন বা মডিফাইড হর্ন ব্যবহার করলে জরিমানা এবং গাড়ি জব্দ পর্যন্ত হতে পারে।
৫. গাড়ি চলাকালে বিনাকারণে হর্নকিছু চালক, বিশেষ করে কোনো কোনো মটরসাইকেল চালক দ্রুতগতিরত গাড়ি চালানোর জন্য অনবরত হর্ন চেপে ধরে থাকেন, যেন কেউ সামনে না থাকে। এই ধরনের কাজ সম্পূর্ণ বেআইনী এবং জনজীবনে বিরক্তি তৈরি করে।
হর্ন সংক্রান্ত শাস্তিসড়ক পরিবহন আইন ২০১৮, ধারা ১৪৯ অনুযায়ী এসব বেআইনী কাজের শঅস্তিগুলো জেনে নিন-
১. অকারণে হর্ন বাজানো: জরিমানা ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা
২. নীরব এলাকায় হর্ন বাজানো: জরিমানা এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।
৩. অনুমোদনবিহীন মডিফাইড হর্ন: গাড়ি জব্দসহ অন্য শাস্তি।
মনে রাখবেন, গাড়ির হর্ন শুধু জরুরি সতর্কতা দেওয়ার জন্য, আতঙ্ক বা বিরক্তি প্রকাশের জন্য নয়। ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে শব্দদূষণ একটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। তাই শব্দ দূষণ থেকে আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করতে ট্রাফিক আইন মেনে দায়িত্বশীল ড্রাইভিং করুন।
এএমপি/এমএস