আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কি আপনার কখনও মনে হয় যে আপনি নিজেকে যতখানি আত্মবিশ্বাসী মনে করছেন, আপনাকে দেখে তা মনে হচ্ছে না? কোনো ভাইভা অথবা চাকরির ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতির সময় কারো কাছে কি শুনেছেন যে আপনার আরও আত্মবিশ্বাসী হওয়া দরকার? যদি শুনে থাকেন তাহলে এই ছয়টি উপায় আপনার জেনে নেওয়া জরুরি।
Advertisement
১. অঙ্গভঙ্গিআপনার হেঁটে যাওয়া থেকে শুরু করে কারো কথা শেনার সময় দাঁড়ানো বা বসার ভঙ্গি – সবকিছুই আপনার মনের অজান্তে আপনার সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশ করে। তাই নিজেকে আত্মবিশ্বাসী দেখাতে আপনার অঙ্গভঙ্গি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আপনি যতি কুঁজো হয়ে হেঁটে যান, মাথা নিচু করে থাকেন তাহলে আপনাকে তুলনামূলক কম আত্মবিশ্বাসী দেখাবে।
অন্যের সামনে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করতে ঘাড় সোজা করে ও মাথা উঁচু করে হাঁটার অভ্যাস করুন। চেয়ারে বসার সময় সোজা হয়ে বসবেন। কারো সঙ্গে কথা বলার সময় হাত কচলানো, নখ খুটরানো বা পা নাড়ানোর মত অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করুন। এই জাতীয় অঙ্গভঙ্গি আপনাকে নার্ভাস হিসেবে উপস্থাপন করবে। দাঁড়ানোর সময় কোমরে হাত রাখাকে অনেক সময় ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়; তবে এমন ভঙ্গির ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা প্রয়োজন যেন আধিপত্য প্রকাশ করতে গিয়ে অহংকার প্রকাশ না পায়।
২. মুখভঙ্গিঅঙ্গভঙ্গির মত মুখভঙ্গিও আপনার ইমেজে একই ধরনের প্রভাব ফেলে। কারো সঙ্গে কথা বলার সময় আপনি তার চোখের দিকে তাকানোর চেষ্টা করবেন। তবে একটানা তাকিয়ে থাকলে অনেকে অস্বস্তি বোধ করে, সে বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার। কাউকে সম্বোধন করা বা পরিচিত হওয়ার সময় গোমড়ামুখো না থাকার চেষ্টা করবেন। সেই সঙ্গে চেহারায় একটি শান্ত ভাব বজায় রাখুন। বিচলিত পরিস্থিতিতেও মুখভঙ্গির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারা আত্মবিশ্বাসের লক্ষণ।
Advertisement
৩. কথার স্পষ্টতাকথা বলার আগে মনে মনে সাজিয়ে নেবেন যেন বলার সময় কথা এলামেলো না হয়ে যায়। আপনি যখন নিশ্চিত থাকবেন যে আপনি কী বলতে চান, তখন আপনার কথা শুনতে স্বাভাবিকভাবেই স্পষ্ট লাগবে এবং আপনাকে আত্মবিশ্বাসী মনে হবে। তবে মনে রাখবেন নিজের কথা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উঁচু গলায় বা চিৎকার করে কথা বলবেন না। এতে আপনাকে বিচলিত ও রাগান্বিত মনে হবে। সবসময় এমন একটি ভলিউমে কথা বলবেন যা শোনার জন্য যথেষ্ট হলেও চিৎকার নয়। সেইসঙ্গে বিনয় যোগ করার চেষ্টা করবেন। তবে বিনয় যেন তোষামোদ না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আপনার কথার মাঝে কেউ থামিয়ে দিলে তা মেনে নেবেন না। তাকে ভদ্রভাবে জানান যে আপনার কথা শেষ হয়নি। নিজের উচ্চরণের দিকে মনোযোগী হউন।
৪. অন্যের কথা শোনার ধৈর্যঅন্যের কথার মাঝে হঠাৎ আপনার কিছু মনে পড়ে গেলে সামনের জনকে মাঝপথে থামাবেন না, এতে আপনার অধৈর্য প্রকাশ পাবে। আপনি তাকে জানাতে পারেন যে ‘তোমার কথার পর আমার কিছু বলার আছে’। অথবা অপেক্ষা করুন কথা শেষ হওয়ার। অন্যের কথা শুধু উত্তর দেওয়ার উদ্দেশ্যে না শুনে তার কথা বোঝার চেষ্টা করুন। এতে আপনার আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি যোগাযোগ দক্ষতাও বাড়বে। একজন মানুষ যখন দেখবে আপনি তার কথা মন দিয়ে শুনছেন, তখন সেও আপনার বক্তব্য শুনতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
৫. জ্ঞানযে বিষয়ে আপনি আপনার মনোভাব সবার সামনে প্রকাশ করতে যাচ্ছেন, আগে চিন্তা করুন সে বিষয়ে আপনার যথেষ্ট জানাশোনা আছে কিনা। এমন বিষয়েই সরব হউন যে বিষয়ে আপনার সাধারণ ধারনা আছে। তাছাড়া ভুলভাল কথা বলে আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করতে গিয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে। যে বিষয়ে আপনার ধারনা কম সে বিষয়ে কেউ প্রশ্ন করলে অকপটে স্বীকার করুন যে মন্তব্য করার মতো যথেষ্ট তথ্য নেই আপনার কাছে। প্রথমে হয়তো আপনার মনে হতে পারে যে এতে অন্যেরা আপনাকে মূর্খ ভাববে। কিন্তু আসলে আপনার সততা আপনাকে আরও আত্মবিশ্বাসী হিসেবে উপস্থাপন করবে।
৬. পোশাকএকজন মানুষকে প্রথমবার দেখার সময় সবার শুরুতে চোখে পড়ে তার পোশাক। সে কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করছে, পরিবেশ সম্পর্কে তার জ্ঞান কেমন, মানুষটির অবজার্ভেশন ক্ষমতা কেমন, সে নিজেকে কতোটা গুরুত্ব দেয় – এসব প্রকাশ পায় তার পোশাকের মধ্য দিয়ে। তাই সঠিক পরিবেশে সঠিক পোশাক নির্বাচন করা খুব জরুরি। এমন নয় যে সবসময় খুব দামী ব্র্যান্ডের পোশাক না পরলে আত্মবিশ্বাসী হওয়া যাবেনা। তবে আপনি যে পোশাকই পরুন, তা পরিস্কার কিনা, আপনার শরীরে ফিট হয় কিনা, এবং পরিবেশের সঙ্গে মানানসই কিনা, এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন।
Advertisement
ভেতর থেকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা ও প্রয়োজনে অন্যের সামনে সেই আত্মবিশ্বাস প্রদর্শন করতে পারা, দুটোই খুব জরুরি। একটির থেকে আরেকটিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া মুশকিল। যেমন চাকরির ইন্টারভিউ, প্রেজেন্টেশন, ভাইভা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবনে নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া ও পরিবারে গুরুত্ব পাওয়া, সব ক্ষেত্রেই আত্মবিশ্বাসী হওয়া ও তা উপস্থাপন করা জরুরি। তাই শুরু করে দিন এই ছয়টি অভ্যাস ও পরিবর্তন দেখুন নিজেই।
এএমপি/জিকেএস