আন্তর্জাতিক

যুদ্ধ শেষ হলেও মরণফাঁদে সিরীয়রা

যুদ্ধ শেষ হলেও মরণফাঁদে সিরীয়রা

সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের অবসান হয়েছে, বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু দেশটির হতভাগা সাধারণ মানুষের আশপাশে এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে মৃত্যুর বিভীষিকা। কে, কখন কীভাবে মারা যাবেন, তা-ও যে নিশ্চিত নয়। এখনো দেশটিতে প্রতিদিন কেউ না কেউ প্রাণ হারাচ্ছেন বা মারাত্মকভাবে জখম হচ্ছেন, তাদের পায়ের তলায় এখনো রয়ে গেছে মরণফাঁদ।

Advertisement

২১ বছর বয়সী তরুণ সুলায়মান খলিল। দুর্বার গতিতে ছুটে চলার বয়স তার। চার মাস আগে দুই বন্ধুর সঙ্গে সিরিয়ার একটি বাগানে জলপাই তোলার কাজ করছিলেন তিনি। তাদের পায়ের নিচের মাটিতে তখনো যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি হিসেবে যে মারণাস্ত্র লুকিয়ে রয়েছে, তা জানতেন না তারা।

আরও পড়ুন>>

সিরিয়ায় আবারও ব্যাপক সংঘর্ষ, নিহত হাজারের অধিক আসাদপন্থিদের বিরুদ্ধে সিরীয় বাহিনীর অভিযান আপাতত শেষ ‘সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করছে ইসরায়েল’

হঠাৎই মাটিতে পড়ে থাকা একটি মাইন তাদের নজরে আসে। আতঙ্কিত খলিল ও তার বন্ধুরা সেখান থেকে পালাতে গেলেন, কিন্তু খলিলের বিধি বাম। একটি ল্যান্ড মাইনের (মাটিতে পুঁতে রাখা মাইন) ওপর পা রাখামাত্রই তা বিস্ফোরিত হয়।

Advertisement

ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বন্ধুরা অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজে ছুটে গেলেন। কিন্তু ২১ বছরের খলিল ভেবেছিলেন, তারা তাকে ফেলে রেখে গেছেন।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেওয়া সাক্ষাৎকারে খলিল বলেন, আমি হামাগুড়ি দিয়ে সরে যেতে শুরু করি। তখনই দ্বিতীয় ল্যান্ড মাইনটি বিস্ফোরিত হয়। প্রথমে মনে হয়েছিল, আমি মারা গেছি। বাঁচবো বলে আশা ছিল না।

তিনি জানান, প্রথম বিস্ফোরণে তার বাম পা গুরুতরভাবে ক্ষত-বিক্ষত হয়। পরের বিস্ফোরণে ডান পা হাঁটুর ওপর থেকে উড়ে যায়। তিনি নিজের শার্ট ছিড়ে কাটা স্থানে বাঁধেন আর চিৎকার করতে থাকেন। চিৎকার শুনে কাছাকাছি থাকা একজন সেনা এসে তাকে উদ্ধার করেন।

খলিল সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের বাসিন্দা। পা হারালেও প্রাণে বেঁচে গেছেন তিনি। একটি কৃত্রিম পায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন এই তরুণ, যেন কাজে ফিরে যেতে পারেন এবং পরিবারকে সহায়তা করতে পারেন।

Advertisement

বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা

প্রায় ১৪ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সময় বাশার আল-আসাদের সেনাবাহিনী, তাদের মিত্ররা ও বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো মাটির নিচে মাইন পুঁতে রাখতেন শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য।

আসাদের পতনের পর বিস্ফোরকে ভরা ওই এলাকাগুলোতে সাধারণ মানুষের আনাগোনা শুরু হয়েছে। এসব মাইন বিস্ফোরিত হয়ে হতাহতের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচএরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ত্রাণকর্মীদের সহায়তাদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএনএসওর তথ্যমতে, গত ৮ ডিসেম্বর আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে এসব ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৪৯ জন, যাদের মধ্যে ৬০ জন শিশু। আহত হয়েছেন প্রায় ৪০০ জন।

মাইনগুলো সরানো সময়সাপেক্ষ কাজ

এইচএরডব্লিউয়ের সংকট ও সংঘাত বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক রিচার্ড ওয়্যার বলেন, জরুরিভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এই মাইনগুলো তুলে ফেলতে হবে। নাহলে এত বছর পর নিজেদের জমি ফিরে পেতে ফিরে আসা বাসিন্দাদের হতাহতের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।

সিরিয়াজুড়ে বিশেষত ইদলিবের গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে এখনো মাটির নিচে কয়েক হাজার মাইন পুঁতে রাখা আছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই মাইনগুলো নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের আহমদ জোমা বলেন. ঠিক কী পরিমাণ মাইন রয়েছে, তার সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে এগুলো সরাতে বেশ সময় লাগবে।

সূত্র: এপি, ইউএনবিকেএএ/