আইন-আদালত

হাতকড়া পরানো নিয়ে পুলিশকে ইনু-শাজাহান খানের হুমকি

হাতকড়া পরানো নিয়ে পুলিশকে ইনু-শাজাহান খানের হুমকি

হাতকড়া পরানোয় ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান ও হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে।

Advertisement

রোববার (২০ এপ্রিল) শুনানির সময় বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই অভিযোগ করেন পুলিশের দুই সদস্য।ট্রাইব্যুনালের বাকি দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এ সময় আদালতের অনুমতি নিয়ে সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান কথা বলেন। তখন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. মোস্তাফিজুর রহমান শুনানি করেন।

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রোববার সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৯ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানির একপর্যায়ে ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের হাতকড়া পরানোর বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন।

হাতকড়া পরানোর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে আদালত দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ডাকেন। এসময় এজলাসের দিকে এগিয়ে যান দুই পুলিশ কর্মকর্তা। তারা আদালতকে বলেন, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী গাড়ি থেকে নামানোর সময় হাতকড়া পরানো হয়। প্রিজনভ্যান থেকে নামানোর সময় শাজাহান খান ও হাসানুল ইনুকে পরাতে গেলে ক্ষেপে যান। বেশ উগ্র মেজাজে তাদের নির্বংশ করার হুমকি দেন। এমনকি ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেও গালি দেওয়া হয়। শাজাহান খান বলেছেন, ‘তোদের নাম নোট করে রাখলাম। রাজাকারের বাচ্চারা। তোদের চৌদ্দ গুষ্ঠী দেখে নেব।’ তাদের আচরণ হিংস্র ছিল।

Advertisement

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আসামিদের আনা–নেওয়া কারাকর্তৃপক্ষের বিষয়। তারা যেভাবে আনেন। গাড়িতে তুলে হাতকড়া খোলা হয়। এটিই প্রাকটিস। আসামিকে হাতকড়া পরিয়ে তোলা হবে কি না তা সিদ্ধান্ত দেয় জেল কর্তৃপক্ষ। আসামিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বা নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলে হাতকড়া পরানো হয়। জিয়াউল আহসান হেলমেট ছুড়ে মেরেছেন। এটা দায়িত্বরত পুলিশদের প্রতি হুমকি।

তবে তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগ অস্বীকার করেন শাজাহান খান ও হাসানুল হক ইনু। শাহজাহান খান বলেন, গাড়ি থেকে নামানোর আগে হাতকড়া ও হেলমেট পরানো হয়েছে। আমি মুক্তিযোদ্ধা। আমার নেতা আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমার পরিবারে ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা। এখানে আরও অনেকে মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র নেতা আছেন। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমাদের আগেও ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছিল। কিন্তু হাতকড়া পরানো হয়নি। আজ এজলাসেও হাতকড়া পরিয়ে আনা হয়। আমরা মর্যাদা পেতে চাই। আপনি বিষয়টি দেখবেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, এই আসামিদের মামলা ছিল তিন নাম্বার ক্রমিকে। ভুলে তাড়াহুড়ো করে আনতে গিয়ে দুই-একজনের হাতকড়া খোলা সম্ভব হয়নি। এখানে সবার হাতকড়া খোলা। এই আদালতে হাতকড়া পরিয়ে আনার রেওয়াজ নেই। তবে তারা যে হুমকি দিয়েছেন, রাজাকারের বাচ্চা বলেছেন সেটা বলেননি। এসময় চিৎকার করে উঠেন সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এরকম কোনো কথা হয়নি।

আদালত বলেন, আপনারা মন্ত্রী ছিলেন। আপনারা ব্যবহার জানেন। পুলিশ জেলকোড অনুযায়ী কাজ করবে। আপনাদের ব্যবহার ঠিক করতে হবে। পুলিশকে বলবো শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে ব্যবস্থা নিবেন, বাড়াবাড়ি করবেন না।

Advertisement

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আসামি হিসেবে মামলার কাগজপত্র পাওয়ার অধিকার রাখি। আমাদের যাতে মামলার কাগজপত্র দেওয়া হয়।

এসময় চিফ প্রসিকিউটর বলেন, তিনি সাবেক আইনমন্ত্রী। এই ট্রাইব্যুনালের আইন তিনি ভালো করেই জানেন। অভিযোগের কপি আসামিদের আইনজীবীদের দেওয়া হয়েছে। আর সব কাগজপত্র পাবেন ফরমাল চার্জ দাখিলের পর। এভাবেই ২০১০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত হয়েছে।

আদালত বলেন, আমরা দেখবো আইন অনুযায়ী যাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে সময় চান চিফ প্রসিকিউটর। ট্রাইব্যুনাল আগামী ২০ জুলাই দিন ধার্য করে দেন।

এদিকে রোববার সকালে আসামিদের পুলিশের প্রিজনভ্যান থেকে নামিয়ে ট্রাইব্যুনালের হাজতে নেওয়ার সময়ের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ট্রাইব্যুনালের হাজতে নেওয়ার সময় হঠাৎ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন শাজাহান খান। মাথায় থাকা হেলমেট খুলে মাটিতে ফেলে দেন তিনি। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে শান্ত করার পাশাপাশি হেলমেটটি পুনরায় তার মাথায় পরিয়ে দেন।

রোববার সকাল সোয়া ১০টার পর প্রিজন ভ্যানে করে আসামিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। আসামিরা হলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, ডা. দীপু মনি, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক মন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী ও সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাংগীর আলম, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান।

এফএইচ/এসএনআর/এমএমএআর/জেআইএম