আমাদের বিচিত্র স্বাস্থ্য সমস্যার কিছু সহজ সমাধান আছে প্রকৃতিতেই। তার মধ্যে কলা অন্যতম। কলা যেসব স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানের কাজে আসে তার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ একটি। এটি এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যা নিঃশব্দে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করে। এটি কোনো সতর্কতা দেয় না। যখন সমস্যা টের পাবেন, ততদিনে হয়তো অনেকটা ক্ষতি হয়ে গেছে।
Advertisement
অতীতে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের একেকসময় একেকটি খাবার খাওয়ার ও এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিতেন চিকিৎসকগণ; ফলে তৈরি হতো বিভ্রান্তি। তবে সেই পরিস্থিতি এখন অনেক বদলে গেছে। উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক নিয়ে নানান গবেষণা হয়েছে। অতঃপর ডাক্তাররা এখন উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের প্রতিদিন অন্তত একটি কলা খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
আমেরিকান জার্নাল অফ ফিজিওলজি-রেনাল ফিজিওলজিতে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চমাত্রায় সোডিয়াম গ্রহণের পরও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এই গবেষণা চিকিৎসকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে কলার দিকে, কারণ কলা পটাশিয়ামের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। সেই সঙ্গে এটি একটি সাশ্রয়ী মূল্যের ফল এবং সহজলভ্য।
শুধু উচ্চরক্তচাপ নয়, আরও অনেক গুণ আছে কলার। জেনে নিন এর ৫টি উপকার-
Advertisement
একটি মাঝারি আকারের কলায় প্রায় ৪০০-৪৫০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে, যা দৈনিক চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করে। পটাশিয়াম শরীরে সোডিয়ামের (লবণ) নেতিবাচক প্রভাব কমায়। অতিরিক্ত লবণ রক্তের আয়তন বাড়িয়ে রক্তচাপ বাড়ায়, কিন্তু পটাশিয়াম কিডনির মাধ্যমে অতিরিক্ত সোডিয়াম বের করে দেয়। তাই সকালের নাশতায় কলার সঙ্গে এক গ্লাস পানি ও এক মুঠো বাদাম যোগ করুন।
২. হৃদয়ের জন্য উপকারী সলিউবল ফাইবারকলায় রয়েছে সলিউবল ফাইবার, যা খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমায় এবং ধমনীতে প্লাক জমা হওয়াকে রোধ করে। ধমনীতে প্লাক জমা হওয়া মানে হলো – চর্বি, কোলেস্টেরল এবং ক্যালসিয়াম জাতীয় বস্তু ধমনীর ভেতরের দেয়ালে লেগে থাকা বা জমা হওয়া। এটি সময়ের সঙ্গে বেড়ে রক্ত প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে।
কলার সলিউবল ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে, যা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিসের রোগীরা তাই সকালের ওটমিলে কলা কেটে যোগ করতে পারেন।
৩. ম্যাগনেসিয়ামের প্রাকৃতিক উৎসকলায় থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তনালীগুলোকে শিথিল করে এবং রক্তচাপ কমায়। এটি হৃদস্পন্দন ও স্নায়ুক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। অনেক উচ্চ রক্তচাপের রোগী অজান্তেই ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতিতে ভোগেন। তাই শরীরে সঠিক পুষ্টি সরবরাহ করতে প্রতিদিন একটি করে কলা ও কলার সঙ্গে শাকসবজি, বীজ ও গোটা শস্য খান।
Advertisement
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের প্রায়ই পায়ে বা গোড়ালিতে ফোলাভাব দেখা দেয়। কলার পটাশিয়াম অতিরিক্ত সোডিয়াম বের করে দিয়ে এই সমস্যা কমায়। এটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং কিডনিকে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে সাহায্য করে।
৫. স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক শর্করাকলায় প্রাকৃতিক শর্করা থাকলেও এতে ফাইবার, পটাশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ধীরে হজম হয়। তাই শরীরে শক্তি জোগালেও কলা আপনার গ্লুকোজ স্পাইক নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে কম পাকা বা সামান্য সবুজ কলা বেছে নিন, কারণ এতে শর্করা কম এবং রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ বেশি।
ডাক্তাররা কলার সুপারিশ শুধু লোকজ্ঞান দিয়ে নয়, বরং বিজ্ঞানের ভিত্তিতেই দিচ্ছেন। পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার – প্রতিটি উপাদান হৃদয় ও রক্তনালীর স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করে। ওষুধ ও ব্যয়বহুল স্বাস্থ্য ট্রেন্ডের যুগে, কলা একটি সহজ, সাশ্রয়ী ও পুষ্টিকর সমাধান।
সূত্র: টাইমস্ অফ ইন্ডিয়া
আরও পড়ুন
চিয়া সিডের পানি কেন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে চা নাকি কফি, সকাল শুরুর জন্য কোনটা ভালো?এএমপি/এমএস