জাতীয়

ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনের পর সংসদ নির্বাচনের কাজ করতে বলল এনসিপি

ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনের পর সংসদ নির্বাচনের কাজ করতে বলল এনসিপি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সংসদ নির্বাচনের কাজ করতে বলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। কেননা ইসিতে বর্তমানে যারা আছেন, তারা থাকবেন কি থাকবেন না তা নির্ভর করছে ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর। সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার আগে নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে ইসিকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

Advertisement

দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের এই কথা জানিয়ে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠন আইনের বিরোধিতা করি আমরা। কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে নতুন পদ্ধতিতে যেতে চাই।

রোববার (২০ এপ্রিল) সকালে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন এনসিপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। বৈঠকে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, খালেদ সাইফুল্লাহ, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও তাজনূভা জাবীন।

আরও পড়ুন বিগত ৩ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে  সিইসির সঙ্গে বৈঠকে এনসিপির ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আগে ইসি কথা বলায় সন্দেহ প্রকাশ করছে নতুন দলটি। মনোনয়নপত্র সশরীরে জমা দেওয়া, দল নিবন্ধন নবায়ন, দল নিবন্ধনের সময় বাড়ানো, ঋণখেলাপি ও হলফনামায় ভুল তথ্য দিলে সদস্যপদ বাতিলসহ অন্তত ১০টি দাবি সিইসির কাছে তুলে ধরে এনসিপি।

Advertisement

দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে নির্বাচন কমিশন, আইন সংস্কারসহ অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এনসিপির প্রতিনিধিরা। ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন আসার পরই তা বাস্তবায়নের বিষয়ে জোর দিয়েছে নতুন দলটি।

বৈঠক শেষে এনসিপির সার্বিক আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা অনেকগুলো কথা ইসি থেকে শুনতে পাই, যেগুলো আমাদের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুনিনি। রোডম্যাপের কথা শুনিনি, ইসি থেকে এসেছে। এজন্য আমরা বলবো, কোনো জায়গায় কথা বলার জন্য ইসি নিজেদের জায়গায় সতর্ক থাকবেন।’

প্রধান উপদেষ্টা যে কথা বলেছেন ‘ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন’ সে বিষয়ে কাজ শুরু করতে পারেন বলে মন্তব্য করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘কিন্তু রোডম্যাপ বা সরকার থেকে কোনো দিকনির্দেশনা আসার আগেই যখন তারা নিজেদের থেকে কথা বলেন সেজন্য আমরা সন্দেহ পোষণ করি।’

ইসি পুনর্গঠন ঐকমত্য কমিশনের ওপর নির্ভর করবে জানিয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, ১৭ এপ্রিলের চিঠিতে সংস্কারের বিষয়গুলো ফোকাস করা হয়েছে। সংস্কারের মাধ্যমে যেন নতুন নির্বাচন আসে, ইসি যেন সেদিকে ধাবিত হয়- জনদাবির মুখে সেটা যেন হয় তা জানিয়েছি।

Advertisement

মৌলিক সংস্কারসহ ইসির পুনর্গঠন চেয়েছেন। সেক্ষেত্রে বর্তমান ইসি নাকি পুনর্গঠন বা বর্তমান ইসির প্রতি আস্থা আছে কি না? এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘...আমরা বরাবরই বলেছিলাম, ২০২২ এর যে আইন (সিইসি ও ইসি নিয়োগ) বিএনপিও বিরোধিতা করেছিল, সবগুলো দলই বিরোধিতা করেছিল, ফ্যাসিস্ট সরকার সে নিয়মগুলো বানিয়েছিল। এর অধীনে এ ইলেকশনটা না হয়ে সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশে নির্বাচন হয় সে বিষয়ে বলেছি।’

বৈঠকে ভোটের সময়কাল নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির এই মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা স্পেসিফিক বলেছিলাম, ২০২২ সালের যে আইনে সার্চ কমিটির মাধ্যমে যে প্রক্রিয়া আমরা ওই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করি। যাতে সংস্কারের মধ্য দিয়ে, একটা সুন্দর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সেখানে যদি ঐকমত্য কমিশন সম্মত হয়, তারা যদি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়। তার পরে যদি হয় এটা সরকারের সিদ্ধান্ত।’

‘যারা কমিশনার রয়েছেন, সে বিষয়ে না, আমরা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখি। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আকারে সরকার, ঐকমত্য কমিশন থেকে ডিসিশন আসে। সে বিষয়ে ইসি পুনর্গঠন হলে আমরা দেখব। যদি না হয় তখন এ বিষয়ে কমেন্ট করবো।’ যোগ করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘(সিইসি ও ইসি নিয়োগ) ২০২২ এর আইন রয়েছে আমরা পূর্বে জানিয়েছিলাম, আইনটা অবৈধ। অন্যান্য দলও জানিয়েছে অবৈধ। সে আইনের অধীনেই হয়েছে বর্তমান (ইসি)। আমরা এ আইনের বিরোধিতা করি। কিন্তু এখন যারা আছেন, তাদের সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে নিতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট আসার পরে উনারা থাকতে পারলে থাকবেন; না থাকতে পারলে থাকবেন না। এটা ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টের ওপর নির্ভর করবে। কারও প্রতি কোনো অবজেকশন নেই, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টের অনুযায়ী হোক।’

প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন চায় এনসিপি

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জোর দিয়েছে এনসিপি।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট যখন ফাইনাল হয়ে আসবে, তখন সরকার প্রতিটি সাংবিধানিক কমিশনে পাঠাবে। ওই সিদ্ধান্ত যেন বাস্তবায়ন হয়। আমরা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বসেছিলাম, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়েও বলেছি। ফাইনাল হতে তা বাস্তবায়নের জন্য বলেছি।’

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কের মতে, ইসি নিত্য কাজগুলো করতে পারে। অভ্যন্তরীণ কাজগুলো করতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের ফুলফেজের কাজে যাবে সে বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের যে ফাইনাল রিপোর্ট আসবে, তার মতো হওয়া উচিত বলে মনে করি। নতুনভাবে দেশে সুন্দর যাত্রা শুরু হবে।

আরও পড়ুন একবার প্রধানমন্ত্রী হলে পরে রাষ্ট্রপতি নয়, ঐকমত্য কমিশনকে এনসিপি ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে যেসব বিষয়ে আলোচনা করেছে এনসিপি

তিনি বলেন, ডেমোক্রেটিক পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য ইলেকশন রিফর্ম অতি জরুরি। বর্তমানে যে প্রক্রিয়া রয়েছে, ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টটা আসার পরে, সিদ্ধান্তগুলো হওয়ার পরে সে অনুযায়ী ইসি পরিচালিত হয়, তাহলে বাংলাদেশে সুন্দর নির্বাচন হবে। বর্তমান ব্যবস্থায় অনেক সংস্কার জরুরি। অনেক বিষয়ে ইসি সম্মত হয়েছে, আইনগুলো ঐকমত্য কমিশনের হয়ে আসতে হবে।

বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের জানিয়েছিলাম, সংস্কারের প্রত্যেকটি রিপোর্টের পাতা বাই পাতা, ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড প্রয়োগের মধ্য দিয়ে আগামী একটি নির্বাচনে যেতে হবে।...সংস্কার সুপারিশের প্রতিটি লাইন এসেছে সেগুলো নিয়ম-নীতির মধ্য দিয়ে প্রায়োগিক আকারে বাংলাদেশকে সে দিকে যাত্রা শুরু করতে হবে। সিইসি একমত হয়েছেন। ঐকমত্য কমিশনের সাথে ঐকমত্য পোষণ করে, না হলে আমরা আস্থা পোষণ করতে পারবো না।’

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ভাষায়, নির্বাচন কমিশন ১৫ বছরে একটা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ইঞ্জিরিয়ারিং হয়েছে অনেক। নতুন বাংলাদেশে এটা দেখতে চাই না। স্পেসিফিক বক্তব্য পেশ করেছি।

‘নির্বাচন কমিশন করতে হলে একটা সুন্দর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তাহলে পার্থক্য কী থাকল? কমিশন এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেছেন।

এমওএস/এমএমএআর/জিকেএস