বিগত সরকারের আমলে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে নানান সমালোচনা ও অসন্তোষ দেখা যেত। কেবল আলোচনা-সমালোচনাই নয়, শিল্পীকে দেওয়া পুরস্কারের সিদ্ধান্তে আদালতে হয়েছে রিটও। একপর্যায়ে এ নিয়ে উচ্চবাচ্যও থেমে যায়। বরং ভারসাম্য রক্ষা, রাজনৈতিক বিবেচনা ও তদবিরের মাধ্যমে সেসব পুরস্কার পেতে এই পথগুলোই বেছে নেন পুরস্কারপ্রত্যাশীদের অনেকে।
Advertisement
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন তথা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। জাতীয় পুরস্কারের ক্ষেত্রে কি পরিবর্তন আসবে, নাকি এখনো সক্রিয় থাকবে ভারসাম্য রক্ষা, রাজনৈতিক বিবেচনা ও তদবির? এ নিয়ে কথা হয় চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট কয়েকজন অংশীজনের সঙ্গে।
সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২৩-এ সম্ভাব্য পুরস্কারজয়ীদের নাম। সেসব নাম দেখে অনেকে মন্তব্য করেছেন, বেশ ভারসাম্যপূর্ণ হয়েছে এই পুরস্কারের তালিকা। যদি এটি সত্যি হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও পুরস্কার স্বৈরাচার আমলের মতো হতে যাচ্ছে।
গত বছরের নভেম্বর মাসে পুনর্গঠনের পর প্রায় চার মাস ধরে পুরস্কারের সিনেমাগুলো দেখেছেন জুরিবোর্ড সদস্যরা। এরই মধ্যে বোর্ড সদস্যরা তাদের মতামত তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। জানা গেছে, এ সপ্তাহেই পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
Advertisement
পুরস্কারের জন্য জুরিবোর্ড সুপারিশ করেছে, জানা গেছে এ রকম বেশ কয়েকটি নাম। সম্ভাব্য সেই তালিকা অনুযায়ী আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পেতে পারেন দুই জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী শবনম ও জাভেদ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জুরিবোর্ডের একজন সদস্য বলেন, শবনম ও জাভেদ দুজনই বর্ষীয়ান অভিনেতা। বিশেষ করে জাভেদ সাহেব অসুস্থ, তাই তার নামটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে এগিয়ে আছে যুবরাজ শামীম পরিচালিত ‘আদিম’ এবং খন্দকার সুমন পরিচালিত ‘সাঁতাও’। অন্যদিকে শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে নাম এসেছে ‘সুড়ঙ্গ’র জন্য রায়হান রাফি, ‘আদিম’-এর জন্য যুবরাজ শামীম ও সবশেষে খন্দকার সুমনের নাম।
সেরা অভিনেতা হিসেবে এগিয়ে আছেন ‘সুড়ঙ্গ’র অভিনেতা আফরান নিশো ও সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ‘সাঁতাও’-এর আইনুন পুতুল। পার্শ্ব চরিত্রের সেরা অভিনেতা হিসেবে শোনা গেছে ‘ওরা ৭ জন’-এর শিবা শানুর নাম। এ শাখায় একই ছবির জন্য ইমতিয়াজ বর্ষণের নামও রয়েছে। ‘প্রহেলিকা’ ছবির জন্য সেরা খলনায়ক হিসেবে পুরস্কার পেতে পারেন রাশেদ মামুন অপু।
গানের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ‘প্রিয়তমা’ সিনেমাটি। শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ সুরকারের সম্ভাব্য পুরস্কার পেতে পারেন প্রিন্স মাহমুদ। একই ছবির ‘ঈশ্বর’ গানের জন্য সোমেশ্বর অলি ‘শ্রেষ্ঠ গীতিকার’ এবং ‘শ্রেষ্ঠ গায়ক’ হিসেবে রিয়াদ এগিয়ে আছেন। ‘ও প্রিয়তমা’ গানের জন্য শ্রেষ্ঠ গায়িকার পুরস্কার পেতে পারেন কোনাল ও শ্রেষ্ঠ গায়কের পুরস্কার পেতে পারেন বালাম।
Advertisement
শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার হিসেবে ‘প্রিয়তমা’র ফারুক হোসেন, শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচিয়তা হিসেবে ‘সাঁতাও’-এর খন্দকার সুমন ও একই ছবির জন্য সুজন মাহমুদ শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক হিসেবে পুরস্কার পেতে পারেন। শ্রেষ্ঠ সাজসজ্জাকর হিসেবে ‘প্রিয়তমা’র সবুজ খান অথবা ‘সুড়ঙ্গ’-এর মো. খোকন মোল্লা পুরস্কার পেতে পারেন।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ পুরস্কারে কেমন শিল্পীদের হাতে পুরস্কার দেখতে চান। সম্ভাব্য নামগুলো জানিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে চলচ্চিত্র পরিচালক বদিউল আলম খোকন বলেন, ভারসাম্য রক্ষা, রাজনৈতিক বিবেচনা, তদবির আগে ছিল। আশা করছি এ বছর থেকে সেসব হবে না। আমরা আসলে চাই প্রকৃত মেধাবী শিল্পীরাই তাদের সেরা কাজের জন্য স্বীকৃতি ও সম্মান পাক। সম্ভাব্য তালিকা নিয়ে কথা বলতে চাই না। আগে প্রজ্ঞাপন হোক।
আরও পড়ুন:
‘বীর’ সিনেমার গানে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বিব্রত প্রযোজক ইকবাল তিনবার চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতলেন অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হিসেবে কী পান বিজয়ীরা? ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে আমাকে জড়িয়ে কেঁদেছিলেন শাম্মী আপা’এমআই/আরএমডি/জেআইএম