জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে পাঁচটি দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ফ্যাসিস্টদের দোসর ও দুর্নীতিপরায়ণ ক্যাডার ও নন-ক্যাডারসহ সব কর্মকর্তাকে অবিলম্বে চাকরি থেকে অপসারণ এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতি করা।
Advertisement
শনিবার (১৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
পাঁচ দফা দাবি• সিভিল প্রশাসনে কর্মরত সব ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা ফ্যাসিস্টদের দোসর ও দুর্নীতিপরায়ণ তাদের অবিলম্বে চাকরি থেকে অপসারণ এবং আইনের আওতায় আনতে হবে।
• নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিত করার স্বার্থে সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
Advertisement
• ফ্যাসিস্ট আমলে বৈষম্যের শিকার বর্তমানে কর্মরত সব ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য সংস্থা/দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করতে হবে।
• বৈষম্যের শিকার এখনো বঞ্চিত সব ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পদোন্নতিসহ প্রাপ্য সুবিধা প্রদান করতে হবে।
• ফ্যাসিস্টের দোসর ও দুর্নীতি পরায়ণ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পদোন্নতি/পদায়নে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছেন এবং করবেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
আরও পড়ুন
Advertisement
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যদিয়ে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। জাতির ক্রান্তিকালে তার এই দায়িত্ব গ্রহণকে কর্মচারী ঐক্য ফোরাম স্বাগত জানিয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতারা আরও বলেন, জাতির কাঙ্ক্ষিত গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদী শাসন অবসানের পর পুরো দেশবাসীর মতো জনপ্রশাসনের বঞ্চিত কর্মকর্তারাও আশায় বুক বেঁধেছিলেন—এবার নিশ্চয়ই তাদের বঞ্চনার অবসান ঘটবে। সরকারের সিভিল প্রশাসনের প্রত্যেকটি স্তর দুঃশাসন-দুর্বৃত্তায়নের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হবে।
‘প্রশাসনে আওয়ামী দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে জড়িত সব সুবিধাভোগীর অপসারণ ঘটবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসনযন্ত্র গড়ে উঠবে, যা ছিল ৩৬ জুলাই ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের মূল চেতনা। বলাবাহুল্য, বঞ্চিত এসব কর্মকর্তার অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। যদিও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে কর্মকর্তাদের বঞ্চনার অবসানে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবুও অভ্যুত্থান পরবর্তী আট মাস চলে গেলেও অনেকের বঞ্চনার অবসান হয়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ অনেকে এখনো জনপ্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। অথচ এরাই নানাভাবে মদদ দিয়ে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট শাসককে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের সহায়তা করেছেন। শুধু তাই নয়, এখনো নানা কায়দায় তারা সব ধরনের সুবিধা বাগিয়ে নিতে সচেষ্ট। শেখ হাসিনার আস্থাভাজন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত এবং সুবিধাবাদীরা এখনো নানা কৌশলে যেমন পদোন্নতি-পদায়ন বাগিয়ে নিচ্ছেন, তেমনি বঞ্চিত-বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে উপদেষ্টাদের বিভ্রান্ত করছেন। কিছু কিছু উপদেষ্টাও দুর্নীতিপরায়ণ আওয়ামী আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের কথা শুনে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের উপযুক্ত পদে পদোন্নতি-পদায়ন না করে বরং আওয়ামী আস্থাভাজনদের শীর্ষ আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ডিও লেটার লিখছেন।
বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের উত্থাপিত দাবিসমূহ অবিলম্বে পূরণ করা না হলে শিগগির কঠোর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
এএএইচ/ইএ/এমএস