বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বরিশাল নগরীর বাসিন্দারা। অবস্থা এমন যে, শুধু রাতে নয় দিনেও কয়েল জ্বালিয়ে বা মশারির মধ্যে থাকতে হচ্ছে নগরবাসীকে। মশা নিধনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) চলমান কার্যক্রম কোনো কাজে আসছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর। ফলে দিন দিন মশা বাড়ছে বলে দাবি তাদের।
Advertisement
নগরবাসীর মত, বর্ষা শুরুর আগেই মশা নিধনে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব পুনরায় বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ড সোহরাব হাউজিং এলাকার বাসিন্দা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ছয়তলায় একটি ফ্লাটে স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকি। মশার উৎপাত এতই বেশি যে সন্ধ্যার পর ছেলে-মেয়েকে মশারির মধ্যে রাখতে হয়। মশার যন্ত্রণায় বাসায় কোথাও একটানা বসে থাকা যায় না। মশার কামড়ে স্বাভাবিক কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু মশা মারতে করপোরেশনের লোকজন স্প্রে করে গেলেও তা কোন কাজে দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, নগরীর অন্য এলাকার তুলনায় এটি নিম্নাঞ্চল। প্রায় সারা বছরই এ ওয়ার্ডে পানি জমে থাকে। এর মধ্যে নতুন নতুন বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। এছাড়া রূপতলী হাউজিং এলাকার পাশেই বাস টার্মিনাল। যার কারণে টায়ার ও পরিত্যক্ত টিউব যন্ত্রপাতি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। টার্মিনালের রাস্তার দুই পাশের ড্রেন ও নালায় অসংখ্য প্লাস্টিকের কাপ, পানির বোতল, কর্কশিটের বাক্স, ডাবের খোসা, ঠোঙা জমে আছে। এখানে প্রচুর মশা জন্মায়।
Advertisement
নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা ফারুক হোসেন জানান, দিনেও ঘরের মধ্যে মশার যন্ত্রণায় থাকা যায় না। কয়েল জ্বালালেও মশা যায় না। সন্ধ্যার পর তো এই অবস্থা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। মনে হয় যেন মশা উড়িয়ে নিয়ে যাবে। ২৪ ঘণ্টা ঘরে কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। বাচ্চাদের তো মশারির মধ্যেই রাখতে হয়।
নগরীর বান্দ রোড এলাকার স্কুল শিক্ষক বারেক হাওলাদার বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে গেছে, আর বৃষ্টিতে এডিস মশা বৃদ্ধি পায়। তাতে ডেঙ্গুর প্রকোপও বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। সাধারণত বর্ষার সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি। এ সময়কে ডেঙ্গুর মৌসুম বলা হয়। তবে সিটি করপোরেশন যে ওষুধ ছিটাচ্ছে, তা মশা মারতে কতটা কার্যকর পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
আরও পড়ুন:জনজীবন ঝুঁকির মুখে ফেলছে মশা ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত যে ৭ রোগ থেকে সাবধান থাকবেন মশা তাড়ানোর কয়েকটি সহজ উপায়নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি শাহ্ সাজেদা বলেন, নগরীর সবখানেই মশার উৎপাত। সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কার্যক্রম চালালেও মশা কমছে না। মশা নির্মূলে আগাম ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গুর প্রদুর্ভাব বেড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিটি নাগরিক নিয়মিত ট্যাক্স দেই। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া আমার অধিকার। সেই জায়গা থেকে মশা থেকে রেহাই পেতে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে মশক নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
Advertisement
বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ৫৮ বর্গকিলোমিটারের নগরীতে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের বাস। ৩০টি ওয়ার্ডে বিভক্ত এ সিটির মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন মাত্র ৪৬ কর্মচারী। আধুনিক সরঞ্জাম বলতে রয়েছে ১৮টি ফগার মেশিন। আর রয়েছে ৬০টির মতো হস্তচালিত স্প্রে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস জাগো নিউজকে বলেন, মশক নিধনে আমরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রোগ্রাম নিয়েছি। প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি টিম মশার লার্ভা শনাক্তে কাজ করেন। লার্ভা শনাক্ত হলে সেখানে হ্যান্ড স্প্রে ব্যবহার করে লার্ভা ধ্বংস করা হয়। এছাড়া বিকেলে ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধনে স্প্রে করা হয়।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী জাগো নিউজকে বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। তবে জনবল সংকটের মধ্য দিয়েও প্রতিদিন ৪টি ওয়ার্ডে মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। মশা নিধনে নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। যার যার বাড়ির আঙিনা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নগরবাসী শুধু এইটুকু সহযোগিতা করলে মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
শাওন খান/এমএন/জেআইএম