হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ বা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বিধানের অন্যতম। সামর্থ্য থাকলে জীবেন একবার হজ পালন করা ফরজ। কোরআনে অনেকগুলো আয়াতে হজের বিধিবিধান আলোচিত হয়েছে। হজ আবশ্যক করে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
Advertisement
اِنَّ اَوَّلَ بَیۡتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِیۡ بِبَکَّۃَ مُبٰرَکًا وَّ هُدًی لِّلۡعٰلَمِیۡنَ فِیۡهِ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ مَّقَامُ اِبۡرٰهِیۡمَ ۬ۚ وَ مَنۡ دَخَلَهٗ کَانَ اٰمِنًا وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الۡعٰلَمِیۡنَনিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা মক্কায়। যা বরকতময় ও হিদায়াত বিশ্ববাসীর জন্য। তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহিম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। আর যে কুফরি করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী। (সুরা আলে ইমরান: ৯৬, ৯৭)
যাদের হজে যাওয়ার সামর্থ্য আছে তাদের কর্তব্য তার কর্তব্য দ্রুত হজ আদায় করে নেওয়া। অযথা দেরি করা ঠিক নয়। হাদিসে এ ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
مَنْ أَرَادَ الْحَجَّ فَلْيَتَعَجَّلْ فَإِنَّهُ قَدْ يَمْرَضُ الْمَرِيضُ وَتَضِلُّ الضَّالَّةُ وَتَعْرِضُ الْحَاجَةُযে ব্যক্তি হজ্জের সংকল্প করে সে যেন অবিলম্বে তা আদায় করে। কারণ মানুষ কখনও অসুস্থ হয়ে যায়, কখনও প্রয়োজনীয় জিনিস হারিয়ে যায় এবং কখনও অপরিহার্য প্রয়োজন সামনে এসে যায়। (সুনানে ইবনে মাজা: ২৮৮৩)
Advertisement
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন,
إنَّ عبدًا أصحَحتُ لهُ جسمَهُ، ووسَّعتُ عليهِ في مَعيشتِهِ ، تمضي عليهِ خمسةُ أعوامٍ لا يَفِدُ إليَّ لمَحرومٌআমার যে বান্দার শরীর আমি সুস্থ রেখেছি, তার রিজিক ও আয়-উপার্জনে প্রশস্ততা দান করেছি, সে যদি এ অবস্থায় পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও আমার ঘরে হজের উদ্দেশ্যে না আসে, তবে সে হতভাগ্য, বঞ্চিত। (সহিহ ইবনে হিববান: ৩৬৯৫)
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন,
مَنْ لَمْ يَمْنَعْهُ عَنِ الْحَجِّ حَاجَةٌ ظَاهِرَةٌ ، أَوْ سُلْطَانٌ جَائِرٌ، أَوْ مَرَضٌ حَابِسٌ فَمَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ ، فَلْيَمُتْ إِنْ شَاءَ يَهُودِيًّا، وَإِنْ شَاءَ نَصْرَانِيًّاহজ পালনের ক্ষেত্রে যে ব্যক্তির সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি কোনো গুরুতর সংকট, কোনো জুলুমকারী শাসকের বাধা কিংবা চলাচলে অক্ষম করে দেওয়া কোনো রোগ, এরপরও সে হজ না করে মারা যায়, সে চাইলে ইহুদি হয়ে মরুক, কিংবা চাইলে খ্রিস্টান হয়ে মরুক! (সুনানে দারেমি: ১৮২৬)
Advertisement
অনেকেই হজ ফরজ হওয়ার পরও দেরি করতে থাকেন। মনে শয়তানের এ রকম ওয়াসওয়াসা আসে যে হজের জন্য যে অর্থ ব্যয় করবো তা দিয়ে যদি আরও কিছুদিন ব্যবসা-বাণিজ্য করি, তাতে অনেক লাভ হবে। হজ করলে অনেকগুলো টাকা ব্যয় হয়ে যাবে।
হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, হজ মানুষকে দরিদ্র্য বানায় না বরং দারিদ্র দূর করে। হজ যেমন গুনাহ দূর করে, দারিদ্র্যও দূর করে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلَّا الْجَنَّةَধারাবাহিকভাবে হজ ও ওমরার করতে থাক। কারণ এ দুটি দারিদ্র্য ও গুনাহ এমনভাবে দূর করে, যেমনভাবে হাঁপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে। মাবরুর হজের (সব রকম গুনাহ ও অশ্লীলতা থেকে পবিত্র) সাওয়াব জান্নাত ব্যতীত আর কিছু নয়। (সুনানে নাসাঈ: ২৬৩১, সুনানে তিরমিজি: ৮১০)
এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, হজ-ওমরাহ করলে সম্পদ কমার বদলে বরং বেড়ে যায়। অভাব আসার বদলে অভাব মোচন হয়। হজ করলে সম্পদ কমে যাবে বা দরিদ্র্য আসবে এই আশংকা শয়তানের ধোঁকা বা ওয়াসওয়সা ছাড়া কিছু নয়।
ওএফএফ/এমএস