জাতীয়

বৈষম্য নিরসনে হরিজন জনগোষ্ঠীর ৮ দাবি

বৈষম্য নিরসনে হরিজন জনগোষ্ঠীর ৮ দাবি

বৈষম্য নিরসন ও অধিকার আদায়ে আট দফা দাবি জানিয়েছে হরিজন অধিকার আদায় সংগঠন। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘সংস্কার ও রাষ্ট্র ভাবনায় হরিজন-দলিত জনগোষ্ঠী’ শীর্ষক সেমিনারে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।

Advertisement

সেমিনারে বক্তারা বলেন, দীর্ঘকাল ধরে রেললাইনের ধারে, মেডিকেলের পাশে, সিটি করপোরেশন-পৌরসভা, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় সরকারি খাসজমিতে আমরা বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছি। ভূমির ওপর আমাদের নিজেদের কোনো অধিকার না থাকায় কখনো সরকারের নানা প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় কাজে আবার কখনো প্রভাবশালীদের ভূমি দখলের ফলে অনেকটা যাযাবর জীবন কাটাতে হয়।

তারা বলেন, ১০/১০ বা ১০/১২ বর্গফুটের একটিমাত্র ঘরের মধ্যে তিন প্রজন্মের ৯-১০ জন লোককে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। এরই মাঝে ছেলেকে বিয়ে করালে বা অতিথি এলে মাঝখানে কাপড় বা পর্দা টানিয়ে অথবা রান্নাঘরে ঘুমাতে হয়। ১০-১২টি পরিবারের জন্য একটি বাথরুম, একটি টয়লেট। লাইনে দাঁড়িয়ে সারতে হয় গোসল ও টয়লেটের কাজ। এ দুর্বিষহ জীবনে মাথা গোঁজার সামান্য ঠাঁইটুকুও আবার কেড়ে নেওয়া হয় নানাছলে। খাওয়ার কিংবা গোসলের পানি-গ্যাস-বিদ্যুৎ, পয়োনিষ্কাশনের সুব্যবস্থার অভাবে অমানবিক জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। একই অবস্থা টিনশেড, কাঁচাপাকা বা বহুতল সব কলোনিগুলোতে। ফলে অস্বাস্থ্যকর ঘিঞ্জি পরিবেশে বেড়ে উঠছে শিশুরা। প্রতিনিয়ত রোগাক্রান্ত হচ্ছেন নারী-শিশু-বৃদ্ধরা।

আট দফা দাবি১. বৈষম্যকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বাধীন কমিশন ও হরিজন-দলিতদের স্বার্থ রক্ষায় ‘বৈষম্য বিলোপ বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করতে হবে।

Advertisement

২. পিছিয়ে পড়া হরিজন-দলিত জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে শিক্ষা ও চিকিৎসা দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোটা এবং উচ্চ শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের সরকারি সব পেশায় সম-অধিকার নিশ্চিত করতে বিশেষ কোটা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৩. দেশের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা, হাট-বাজার-মার্কেট-ক্লিনিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বেতন বৃদ্ধি ও চাকরি স্থায়ীকরণ করতে হবে। সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি, উৎসব বোনাস, অবসর ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা দিতে হবে।

৪. সরকারের খাস জমিতে হরিজন জনগোষ্ঠীকে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বন্দোবস্ত করতে হবে। ১০০/২০০ বছরের পুরাতন জায়গা বসবাসরত হরিজন-দলিতদের নামে দলিল করে দিতে হবে। পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করা যাবে না।

৫. দেশে বসবাসরত হরিজন জনগোষ্ঠীকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।

Advertisement

৬. মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হরিজন-দলিতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও শহীদ পরিবারের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।

৭. জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে হরিজন-দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

৮. একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগে জাত হরিজনদের জন্য ঘোষিত ৮০ শতাংশ কোটা বাস্তবায়ন করতে হবে।

আরএএস/এমএএইচ/জিকেএস