শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় সন্তুষ্ট নন জানিয়ে কর্মসূচি আরও কঠোর করার ঘোষণা দিয়েছেন ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত কারিগরির শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি অনুবিভাগ) রেহানা ইয়াছমিনের সঙ্গে বৈঠকের পর কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মাসফিক ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তবে অতিরিক্ত সচিব সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলেননি।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে কারিগরি ও মাদরাসার শিক্ষা বিভাগের সম্মেলন কক্ষে দুপুর ১২টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের ১৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। বৈঠক চলে টানা তিন ঘণ্টা। বিকেল ৩টায় বৈঠক শেষ হয়।
মাসফিক ইসলাম বলেন, আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, আজ শিক্ষা উপদেষ্টাসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বৈঠক করানো হবে। কিন্তু আমরা কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে এসে উপস্থিত হয়ে দেখছি শিক্ষা উপদেষ্টা আমাদের মধ্যে উপস্থিত হননি। সচিব যেহেতু রংপুরে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। যারা সংশ্লিষ্ট তাদের সঙ্গে আমাদের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার ফলাফল হিসেবে এটা দেখছি যে, তারা আমাদের কোনো পেপার ওয়ার্ক দেখাতে পারেননি। তারা যে পদক্ষেপ নিচ্ছে সেটার কোনো ডকুমেন্ট তাদের কাছে নেই। তারা বলেছেন নিয়োগ বিধি সংশোধন করেছে, এটা করেছে, এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। কিন্তু আমরা কোনো দৃশ্যমান ফলাফল পাচ্ছি না। সব কিছুতেই তারা বলছে আলোচনায় সময় লাগবে।
Advertisement
তিনি বলেন, আজকের বৈঠকে আমরা কারিগরি ছাত্র আন্দোলন কোনোভাবেই সন্তুষ্ট নই। তারা আমাদের ডেকে কোনো সমাধান দিতে পারেননি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সারা বাংলাদেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সম্মিলিতভাবে, কারিগরি ছাত্র আন্দোলন একত্রিতভাবে সিদ্ধান্তক্রমে কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবে। কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি খুব দ্রুতই জানিয়ে দেওয়া হবে।
আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চলমান রাখবো বলেন মাসফিক ইসলাম।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের-এর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ও প্রধান কার্য-নির্বাহী সদস্য জুবায়ের পাটোয়ারী বলেন, আমরা আট মাস ধরে আন্দোলন করছি। গত ৯ সেপ্টেম্বর যখন আমরা সাত রাস্তা অবরোধ করেছিলাম তখন আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন আজ পর্যন্ত আমরা দেখিনি। আমরা ইচ্ছা করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছি বিষয়টা এমন নয়, আমরা বাধ্য হয়েছি।
তিনি বলেন, বর্তমান যে সচিব বলেছেন তার সঙ্গে বারবার সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। আজ আমাদের সঙ্গে সম্পূর্ণ প্রতারণা করা হয়েছে। গতকাল আমাদের জানানো হয় আপনাদের দাবিগুলো যৌক্তিক এবং সরকার থেকে মেনে নেওয়া হবে। এমন কি বলা হয়েছে, আপনারা যাদের যাদের সঙ্গে বসতে চান, তাদের নাম উল্লেখ করেন, আপনাদের বৈঠকের ব্যবস্থা আমরা করছি। তাই আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত বৈঠকে থাকবো ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন শিথিল রাখার সিদ্ধান্ত নিই। আমরা এখানে আসার পর অতিরিক্ত সচিব রেহানা ইয়াছমিনও জানেন না যে এখানে শিক্ষা উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন।
Advertisement
আমাদের ডেকে কর্মসূচি থেকে উঠিয়ে এনে দীর্ঘ সময় ধরে অযৌক্তিক আলোচনা করা হয়েছে।
জুবায়ের পাটোয়ারী আরও বলেন, অতিরিক্ত সচিব বলেছেন তিনি আমাদের দাবিগুলো নোট নিয়েছেন। এই দাবিগুলো তিনি সচিবের কাছে পাঠাবেন। এরপর সেটি শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে। এরপর সেটি সবাইকে নিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। আমাদের যে রূপরেখা, এটি ছিল না। আমরা দীর্ঘমেয়াদে যেতে চাই না, আমরা চাই দ্রুত বাস্তবায়ন।
আরও পড়ুন
কারিগরি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নতুন অধ্যক্ষ সাহেলা পারভীনগতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। ঢাকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সারাদেশে জেলায় জেলায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
বিকেল সোয়া ৪টার দিকে সাতরাস্তা মোড়ে যান কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শোয়াইব আহমাদ খান। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন।
ডিজি ও অধ্যক্ষের আশ্বাসের পরও সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি করেন, প্রত্যেকটি দাবি পূরণে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা লিখিতভাবে জানাতে হবে। সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়নের লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
ছয় দফা দাবি আদায়ে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারাদেশে রেলপথ ব্লকেডের ঘোষণা দেন সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তবে সরকারের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মসূচি শিথিল রাখেন শিক্ষার্থীরা
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের উত্থাপিত ছয় দফা দাবি১. জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন ও মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
২. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিলসহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিক ভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।
৩. উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের (দশম গ্রেড) পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিচের পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপ-সচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
৫. কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
আরএমএম/এমআইএইচএস/জিকেএস