বিবিধ

জনজীবন ঝুঁকির মুখে ফেলছে মশা

জনজীবন ঝুঁকির মুখে ফেলছে মশা

মোহাম্মদ জাকারিয়াঢাকার মতো জনবহুল শহরে মশার প্রকোপ এখন শুধু মৌসুমি সমস্যা নয়, এটি একটি স্থায়ী দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। দিন দিন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। দেশজুড়ে ভয়ংকরভাবে বেড়েছে মশার উৎপাত। শুধু ২০২৪ সালেই, বাংলাদেশে ১০১,২১৪টি ডেঙ্গু আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে ও ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ঢাকাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বর্তমানে, কিউলেক্স মশার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরবাসীর জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এক সময় মৌসুমি সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হলেও, এখন এটি বছরব্যাপীই জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি হিসেবে পরিণত হয়েছে।

Advertisement

মশা দমনে বিভিন্ন পদক্ষেপের পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। লার্ভানাশক ও ফগিং স্প্রে করেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলাবদ্ধতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। তাছাড়া ঢাকা শহরের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা নালা-নর্দমায় পানিপ্রবাহের অভাবও এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী। অনেক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে নর্দমা পরিষ্কার করা হয় না, যার ফলে সেখানে মশার বংশবিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। বিশেষ করে, নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জন্য এটি সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মশার উৎপাত থেকে বাঁচতে মানুষ বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, যার মধ্যে মশারি, ইলেকট্রিক ব্যাট, লিকুইড ভ্যাপোরাইজার রয়েছে। এবং এক্ষেত্রে মশার কয়েল অন্যতম।

ব্যক্তিগত সচেতনতার মাধ্যমে মশার বিস্তার কমানো সম্ভব। যেমন- বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখা, ফুলের টব বা পানির পাত্রে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিবর্তন করা, এবং দীর্ঘ সময় ধরে পানি জমতে না দেওয়া। তবে, বাংলাদেশে মশার সংকট শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়, বরং প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণের।

Advertisement

তবে, গবেষণায় দেখা গেছে যে, মশার কয়েলের ব্যবহার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। একটি কয়েল থেকে নির্গত ধোঁয়া ৭৫ থেকে ১৩৭টি সিগারেট ধূমপানের সমান। এর ধোঁয়ায় ক্ষতিকর রাসায়নিক নির্গত হয়, যা শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটি নবজাতকের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এই কয়েলের ধোঁয়া গর্ভবতী মায়ের শরীরে যাওয়ার কারণে জন্মের পর শিশুর শরীরে অতিরিক্ত বিলিরুবিন জমতে পারে, যা জন্ডিসের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার অনুসারে, দীর্ঘ সময় ধরে স্বল্প মাত্রায় হলেও কয়েলের ধোঁয়ায় থাকা ফরমালডিহাইড ও বেনজিনের সংস্পর্শে থাকলে ক্যান্সারের, বিশেষ করে ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

মশার কয়েলের বিকল্প হিসেবে কার্যকর একটি উপায় হলো লিকুইড ভ্যাপোরাইজার। এটি ধোঁয়াবিহীন হওয়ায় পরিবেশের জন্যও ভালো এবং বাসার ভেতরে দীর্ঘ সময় ধরে কোনো ধরনের দুর্গন্ধ ছাড়াই মশা দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। যেহেতু, সারাদিন মশারির ভেতরে থাকা সম্ভব নয়, তাই এটি অনেক বেশি বাস্তবসম্মত ও কার্যকর সমাধান।

বর্তমানে, ঢাকা শহরে মশা দমন করা অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধু মানুষের বিরক্তির কারণ নয়, বরং ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এবং চিকুনগুনিয়ার মতো মারাত্মক রোগ ছড়ায়। এডিস ও কিউলেক্স মশার বিস্তার রোধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। জলাবদ্ধতা দূর করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, কার্যকর কীটনাশক ব্যবহার এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি, গবেষণা ও উন্নত কীটনাশক প্রযুক্তির ব্যবহার করে মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

ব্যক্তিগত সচেতনতার মাধ্যমে মশার বিস্তার কমানো সম্ভব। যেমন- বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখা, ফুলের টব বা পানির পাত্রে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিবর্তন করা, এবং দীর্ঘ সময় ধরে পানি জমতে না দেওয়া। তবে, বাংলাদেশে মশার সংকট শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়, বরং প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণের। স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিষয়ক ইনস্টিটিউট ও সংস্থা এবং জনসাধারণের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমেই এ সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিরাপদ ও কার্যকর মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

Advertisement

লেখক : কমিউনিকেশন প্রফেশনাল

এইচআর/জেআইএম