শুধু জাতীয় নয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ভোটেও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার হবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
Advertisement
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) কয়েক ধাপে দেড় লাখ ইভিএম কিনেছিল। এই ইভিএম পরবর্তীতে কী করা যায় সেটা নিয়ে একটি কমিটি গঠন করবে ইসি।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) অষ্টম কমিশন সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
ইসি আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ইভিএম আর কোনো নির্বাচনেই ব্যবহার হবে না। এজন্য পৃথক কমিটি গঠনের মাধ্যমে ইভিএমের বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।
Advertisement
নির্বাচন কমিশন জানায়, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুসারে, দেড় লাখ ইভিএম সেট ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, ৬টি সফটওয়্যার, ৫টি যানবাহন এবং ৯ হাজার ২০০টি র্যাক কেনা হয়। ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুই চুক্তির আওতায় ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৯৯৯টি ইভিএম সেট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া, বিএমটিএফ প্রয়োজন অনুসারে ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ সাপোর্ট দিচ্ছে। জেলা পর্যায়ে ভাড়া গুদামে এবং বিএমটিএফের ওয়্যারহাউজে ইভিএম সেট সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
ইভিএম এখন গলার কাঁটা, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ জোগাতে পারছে না ইসি ইভিএম কেজি দরে বিক্রির পরামর্শ খসরুরনির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৭৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। প্রকল্পের ডিপিপি অনুসারে আর্থিক অগ্রগতি মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৯৬ শতাংশ এবং বাস্তব ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতি ৯৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে বুয়েটের তৈরি ইভিএম প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়। পরে স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহার শুরু হয়। এরপর ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমের সমস্যার কারণে পরে আর সেটি ব্যবহার করা হয়নি। পরে কে এম নূরুল হুদা কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের জন্য ইভিএম তৈরি করে বিএমটিএফ। ২০১৭ সালে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডের ছয়টি কক্ষে পরীক্ষামূলক ওই ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এরপর দেড় লাখ ইভিএম সেট কিনতে ২০১৮ সালে প্রকল্প নেয় সরকার। এ প্রকল্পে খরচ ধরা হয় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। পরে মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়, তবে ব্যয় বাড়ানো হয়নি। চলতি বছরের জুনে শেষ হয়েছে প্রকল্পের কাজ।
Advertisement
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেড় লাখ ইভিএম কেনা হলেও মাত্র ছয়টি আসনে এই যন্ত্র দিয়ে ভোটগ্রহণ হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে চেয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এজন্য ২ হাজার ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্পও হাতে নিয়েছিল ইসি। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তাতে সায় দেয়নি সরকার। পরে সংরক্ষণে থাকা দেড় লাখ ইভিএমের ওপর ভরসা রাখে ইসি।
কিন্তু তখন দেখা যায়, ৪০ হাজার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাকি এক লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেরামতে এক হাজার ২৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এই টাকা দিতেও সরকার অপারগতা প্রকাশ করলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করে ইসি। এই ইভিএম এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসির।
এমওএস/ইএ