খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) প্রশাসন, বিশেষত উপাচার্য শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিএনপির দলীয় স্বার্থের পক্ষে অন্যায্য অবস্থান করছেন বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস)।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে দুপুর ২টায় সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করে বাগছাস। সংবাদ সম্মলনে উপস্থিত ছিলেন বাগছাসের সদস্য সচিব জাহিদ আহসান, মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসিরসহ বাগছাসের অন্যান্য নেতারা। সংবাদ সম্মলনে লিখিত বিবৃতি পড়ে শোনান জাহিদ আহসান।
বিবৃতিতে বাগছাসের সদস্য সচিব জাহিদ আহসান বলেন, কুয়েটের ভিসি ড. মোহাম্মদ মাছুদ কুয়েট শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। আমরা উপাচার্যের শিক্ষার্থীবিরোধী অবস্থান প্রত্যাখ্যান করছি।
কুয়েটে ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদল-যুবদল-বিএনপির যৌথ হামলার ঘটনা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল এবং বহিরাগত বিএনপি-যুবদলের ক্যাডাররা সাধারণ ছাত্রদের ওপর নির্মম হামলা চালায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও ছাত্রদলের জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জের ধরেই ওই হামলার ঘটনা ঘটে। দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও কুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর ড. মোহাম্মদ মাছুদের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্রদল কার্যক্রম পরিচালনা করে। এমনকি ছাত্রদল-যুবদল-বিএনপির যৌথ হামলার সময়েও ভিসিকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। সেই হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। শিক্ষার্থীরা বারবার প্রশাসনের সাহায্য চেয়েও নিরাশ হয়।
Advertisement
হামলার শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবিতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে, সেই সময়েই গত ১০ এপ্রিল ২২ জন শিক্ষার্থীর নামে মিথ্যা মামলা করা হয়। যদিও এখন পর্যন্ত হামলাকারী কারো বিরুদ্ধেই কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষার্থীদের নামে মামলার প্রতিবাদ জানায় এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি তোলে। মামলার পরপরই সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বাগছাসের কেন্দ্রীয় সদস্য মাহিন আহমদের ওপর হামলার ঘটনা ব্যক্ত করে বিবৃতিতে বলা হয়, কুয়েটের এই বিভীষিকাময় অবস্থায় গতকাল রাতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য মাহিন আহমদের ওপর মিরপুরে বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীরা নির্মম হামলা চালিয়েছে। হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক সদস্য আহত হয়েছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ছিলো সহিংস রাজনীতির বদলে সমাজে সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থান বজায় রাখা। কিন্তু, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিএনপি পূর্বের মতই সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। দলীয় হাইকমান্ড থেকে বারবার আমরা আশার কথা শুনলেও তৃণমূলের আচরণ পুরাপুরি বিপরীত। চাঁদাবাজি, দখলদারি, হামলা, মামলা বাণিজ্য কোনোকিছুই বন্ধ থাকছে না।
এমন অবস্থায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দফাগুলো নিম্নরূপ-১. কুয়েটে ছাত্রদল-যুবদলের হামলা, মামলা এবং শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের বিষয়ে পূর্ণ নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা।
২. আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের নামে হওয়া মামলা এবং বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা।
Advertisement
৩. কুয়েটের ভিসি ড. মোহাম্মদ মাছুদকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করা, পদত্যাগ না করলে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে অপসারণ করা।
৪. আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কুয়েটের সব হল খুলে দেওয়া।
৫. মাহিন আহমদের ওপর হামলাকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করা।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই দাবিগুলো মেনে না নেওয়া হলে কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
এফএআর/এএমএ/জেআইএম