আইন-আদালত

একমাত্র আসামি হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি-পা অকেজো, পেয়েছেন খালাস

একমাত্র আসামি হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি-পা অকেজো, পেয়েছেন খালাস

• শ্লীলতাহানিতে চিহ্নিত ৮ জনের ৭ জনই অধরা• ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দেন মাত্র ৯ জন

Advertisement

২০১৫ সালে নববর্ষের উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বেশ কয়েকজন নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় সমালোচনার ঝড়। শাহবাগ থানায় দায়ের করা হয় মামলা। মামলার নয়মাস পর ২০১৬ সালের ২৯ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর চকবাজার থানাধীন খাজির দেওয়ান এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় তদন্তে প্রাপ্ত একমাত্র আসামি কামালকে (৩৫)। কামাল খাজির দেওয়ান এলাকায় সপরিবারে বসবাস করতেন। তিনি মূলত কাঁচামাল ব্যবসায়ী। গ্রেফতারের পর তাকে দুইদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে কারাগারে পাঠানো হয়। ছয়মাসের মতো কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্ত হন তিনি। এরপর মামলার রায়ে খালাসও পেয়েছেন।

কামালের আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আসামি কামাল ডায়াবেটিসের রোগী। একপর্যায়ে তার চোখের অসুখ ধরা পড়ে। পরে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান কামাল। একইসাথে পচন ধরে পায়ে। এর ফলে এক পা পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়। সম্প্রতি এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় রায়ে মামলার একমাত্র আসামি কামালকে খালাস প্রদান করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. শওকত আলী।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, তদন্তে আট লাঞ্ছনাকারীর মধ্যে একজনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। অন্য সাতজনকে খুঁজে না পাওয়ায় তাদের নাম অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাদের খুঁজে পাওয়া গেলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। এ মামলায় ৩৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন

আট বছর ধরে ঝুলে আছে বর্ষবরণে শ্লীলতাহানি মামলার বিচার টিএসসির নববর্ষের উৎসবের ৭ লাঞ্ছনাকারী এখনো অধরা

জানা যায়, ২০১৫ সালের পহেলা বৈশাখের ওই ঘটনায় সেদিন সন্ধ্যায় শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আট নারী লাঞ্ছনাকারীকে শনাক্ত করা হয়। তাদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণাও দেন তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। তবে সে বছরের ৯ ডিসেম্বর এ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার দাস। প্রতিবেদনে আসামি খুঁজে না পাওয়ার কথা বলা হয়। তবে ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার।

টিএসসি সেদিনের শ্লীলতাহানির ফাইল ছবি

পিবিআইয়ের তদন্ত চলাকালে ২০১৬ সালের ২৯ জানুয়ারি গ্রেফতার হন শ্লীলতাহানির ঘটনায় অভিযুক্ত কামাল (৩৫)। তবে চিহ্নিত আট আসামির সাতজনকে খুঁজে না পেয়ে এ মামলায় গ্রেফতার হওয়া একমাত্র আসামি কামালকে অভিযুক্ত করে ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

Advertisement

আসামি কামাল ডায়াবেটিসের রোগী। একপর্যায়ে তার চোখের অসুখ ধরা পড়ে। পরে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান কামাল। একইসাথে পচন ধরে পায়ে। এর ফলে এক পা পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়। সম্প্রতি এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় রায়ে মামলার একমাত্র আসামি কামালকে খালাস প্রদান করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. শওকত আলী।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, তদন্তে আট লাঞ্ছনাকারীর মধ্যে একজনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। অন্য সাতজনকে খুঁজে না পাওয়ায় তাদের নাম অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাদের খুঁজে পাওয়া গেলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। এ মামলায় ৩৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।

পরে ২০১৭ সালের ১৯ জুন আসামি কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন নির্ধারণ করেন আদালত। কিন্তু অভিযোগ গঠনের পর অর্ধযুগের বেশি সময় ধরে সাক্ষ্যগ্রহণ চললেও ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র নয়জনকে আদালতে উপস্থিত করতে সক্ষম হয় রাষ্ট্রপক্ষ। অনেক সাক্ষীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও তারা আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেননি। এ নয়জনের সাক্ষী নেওয়ার পর সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলার রায় ঘোষণার জন্য ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত। সেদিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত ১৩ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন। এদিন আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মামলাটি রায় ঘোষণা থেকে উত্তোলন করে পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণ করার জন্য আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন। তবুও নতুন কোনো সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিতে উপস্থিত হননি। ফলে ফের বিলম্বিত হয় বিচার। পরে দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে সম্প্রতি এ মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে একমাত্র আসামি কামাল খালাস পান।

চিহ্নিত ৮ জন আসামির ৭ জনই অধরা-ফাইল ছবি

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর শরিফ উদ্দিন মামুন বলেন, আমরা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। এ মামলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা নেই। জেনে পরে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য জানাবো।

আমার আসামি কামাল ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তাকে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। বিচার চলাকালে তদন্ত কর্মকর্তাসহ নয়জন সাক্ষী দিয়েছেন। তাদের জেরা করা হলে তারা আমার আসামির বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কোনো অভিযোগের বিষয়ে বলতে পারেননি। ফলে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আমার আসামি খালাস পেয়েছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আনিছুর রহমান বলেন, আমার আসামি কামাল ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তাকে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। বিচার চলাকালে তদন্ত কর্মকর্তাসহ নয়জন সাক্ষী দিয়েছেন। তাদের জেরা করা হলে তারা আমার আসামির বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কোনো অভিযোগের বিষয়ে বলতে পারেনি। ফলে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আমার আসামি খালাস পেয়েছেন।

এমআইএন/এসএইচএস/এমএস