বিদেশি অপারেটর নিয়োগের বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেছেন, অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, স্বত্ব বিক্রি হচ্ছে না।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরে শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল অপারেশন বিদেশিদের হাতে দেওয়ার পাঁয়তারার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
১৩৮তম বন্দর দিবস উপলক্ষে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বিদেশিরা তাদের লাভের জন্য বিনিয়োগ করবে। চট্টগ্রাম বন্দরে যাদের অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হবে তারাও নিজেদের টাকা বিনিয়োগ করবে। নিজেদের লাভের জন্যই তারা বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসবে। তাদের বিনিয়োগ থেকেই বন্দর কর্তৃপক্ষ ক্যাপিটাল চার্জ, হ্যান্ডেল চার্জসহ রাজস্ব আয় হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করবে।
Advertisement
তিনি বলেন, গত ১৩-১৪ বছরে বন্দরে অনেক জটিলতা ছিল। এখন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের কারণে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিজনেস সামিটে নতুন বিনিয়োগ আসছে। আমাদের দেশে আসার জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীরা প্রস্তুত। কিন্তু তাদের আনার বিষয়ে আমাদের সক্ষমতা নেই। সেজন্য বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, প্রতিযোগী বিশ্বে টিকতে হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। পাঁচ বছর পর পাঁচ মিলিয়ন টিইইউস কনটেইনারে হ্যান্ডলিং করতে হবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে টার্মিনাল ও বে-টার্মিনাল নির্মাণে চুক্তি হয়েছে। ২০২৯ সালে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর অপারেশনে চলে যাবে। মাতারবাড়ী, বে-টার্মিনাল, লালদিয়া হবে গ্রিন পোর্ট। গ্রিন মেরিটাইম করিডোর হবে চট্টগ্রাম বন্দর। এ টার্মিনালগুলো চালু হলে নতুন শিপিং রুট খুলে যাবে।
বন্দরকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে দাবি করে বন্দর চেয়ারম্যান জানান, ই টিকিটিং চালু করায় সব সিস্টেমে চলে আসছে। মেরিটাইম সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করছি। এতে বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। পেমেন্ট ডিজিটাল হয়ে যাবে। ডিজিটালাইজেশন ও ডি কার্বোনাইজেশনের বিকল্প নেই। জুনের মধ্যে বন্দরের পুরো কার্যক্রম অটোমেশন করে ফেলব।
বছরে ৫-৬ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি হয় জানিয়ে তুলার জন্য ফ্রি ট্রেড জোন গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বন্দর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এটা করতে পারলে দারুণ সম্ভাবনা তৈরি হবে। বছরে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার আয় হবে। আমরা এক নম্বর তুলা ব্যবহারকারী দেশ। ফ্রি ট্রেড জোন হলে তুলা খাতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, শিল্পাঞ্চল থাকায় এ জোন চট্টগ্রামে হওয়া যৌক্তিক।
Advertisement
সভায় জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত রপ্তানি আয়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৩৭ হাজার ১৯১ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়েছে। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের চেয়ে ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দর চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ৯ মাসে ৯ কোটি ৭১ লাখ ১৩ হাজার ১৬১ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৩ হাজার ৫৮টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। একই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করেছে বলে সভায় জানানো হয়।
এ সময় বন্দর সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. হাবিবুর রহমান, সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর কাওছার রশিদ, সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক।
এমডিআইএইচ/ইএ