শুধু আকর্ষণ-জৌলুসই কমেনি। মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও কমেছে অনেক। এক সময়ে সাদা-কালো আর আকাশি-হলুদ লড়াই মানেই ছিল টানটান উত্তেজনা। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। কিন্তু সময়ের প্রবাহতায় এখন আর তা নেই। মোহামেডান-আবাহনী দ্বৈরথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমতে কমতে তলানিতে। কারণ এক ও অভিন্ন। আবাহনীর সাথে আর শক্তিতে পেড়ে ওঠে না মোহামেডান।
Advertisement
গত এক যুগে বিশেষ করে ২০১২-২০১৩ মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ লিস্ট ‘এ’ স্ট্যাটাস পাওয়ার পর মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচে আবাহনীর জয়ের পাল্লা অনেক ভারি। মোহামেডানের জয় ছিল একদম হাতে গোনা, ২টি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর সাথে এককথায় সেভাবে একদমই পেরে ওঠেনি মোহামেডান।
ইতিহাস সাক্ষী, লিস্ট-এ যুগে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে আবাহনীর সাথে মোহামেডানের শেষ জয়টি ছিল ২০১৬ সালের মে মাসে। শেরে বাংলায় হওয়া সে ম্যাচে আবাহনীকে ৮ উইকেটে হারিয়েছিল মোহামেডান। খেলা শেষ হয়েছিল ৩৭ বল আগে। আজ ১২ মে প্রায় ৯ বছর পর প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে আবার আবাহনীর বিপক্ষে জিতলো মোহামেডান।
কেউ কেউ হয়তো বলবেন, সে কি কথা! সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে না মোহামেডান কয়েক বছর আগেই আবাহনীকে হারিয়েছে? হ্যাঁ, হারিয়েছে। তবে সেটা ছিল টি -টোয়েন্টি ফরম্যাটের লিগে।
Advertisement
আবাহনীর বিপক্ষে ২০২১ সালে হওয়া টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে শেষবার জিতেছিল মোহামেডান। কিন্তু ৫০ ওভারের লিগে সাদাকালোরা জিতলো ৯ বছর পর। ইতিহাস জানাচ্ছে, ২০১৩ সেপ্টেম্বর মাসে লিস্ট-এ স্ট্যাটাস পাওয়া প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে মোহামেডান তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর ৩ উইকেটে হারিয়েছিল আবাহনীকে। শেষ বলে নিষ্পত্তি হয়েছিল সেই ম্যাচের। কাকতালীয়ভাবে দুটি ম্যাচই হয়েছে শেরে বাংলায়। আজ শনিবার সেই হোম অব ক্রিকেটে আবাহনীর বিপক্ষে ৩৯ রানের স্বস্তির জয়ে মাঠ ছাড়লো মোহামেডান। হার্ট অ্যাটাকের পর মাঠের বাইরে ছিটকে পড়া তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে এই দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাওহিদ হৃদয়।
নাজমুল হোসেন শান্তর আবাহনী আর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তাওহিদ হৃদয়ের মোহামেডানের ম্যাচ দেখতে শেরে বাংলায় আজ শনিবার ১০০ দর্শকও হাজির ছিলেন না। গ্যালারি খাঁ খাঁ করেছে।
কিন্তু এই খালি মাঠে আকর্ষণ কমে যাওয়া মোহামেডান-আবাহনী দ্বৈরথকে স্মরণীয় করে রাখলেন এক তরুণ ওপেনার; আনিসুল ইসলাম ইমন। আবাহনীর বিপক্ষে দারুণ এক সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের এই ২৫ পার করা যুবা।
১১৮ বলে আনিসুলের করা ১১৪ রানের ওপর ভর করে ২৬৪ রান সংগ্রহ করে মোহামেডান। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪৮.২ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় তারা।
Advertisement
ইমন ছাড়াও দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন ফর্মে থাকা মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন (৪৮)। জবাবে ২২৫ রানে অলআউট হয় আবাহনী। আবাহনীর হয়ে একা লড়াই করেছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
ফর্মের তুঙ্গে থাকা পারভেজ হোসেন ইমন (১৬), তরুণ জিসান আলম (৩), মোহাম্মদ মিঠুন (১৯), মুমিনুল হক (২৫), মাহফুজুর রহমান রাব্বি (১) আর আবাহনীর এবারের তুরুপের তাস মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের (২৪) কেউ বলার মতো অবদান রাখতে পারেননি।
মোহামেডানের পেসার এবাদত হোসেন (৪/৩৬) আর অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ (২/৩১) আবাহনী ব্যাটারদের পথের কাঁটা হয়ে দেখা দিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন।
গত ২৪ মার্চ হার্ট অ্যাটাকের পর রিং লাগানো তামিম ইকবালের বদলে দল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন তাওহিদ হৃদয়। মোহামেডান যখন আজ আবাহনীর সাথে ঐতিহাসিক জয়ের সুঘ্রাণ পাচ্ছিল, ঠিক তখন কিছু সময়ের জন্য মোহামেডানের ড্রেসিংরুমেই অবস্থান করেছেন সাদাকালো শিবিরের এবারের নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সিঙ্গাপুর থেকে আগের রাতে (শুক্রবার রাত ১০ টা নাগাদ) দেশে ফিরে আজ দুপুর গড়াতেই শেরে বাংলায় চলে আসেন তামিম।
সংক্ষিপ্ত স্কোরমোহামেডান: ৪৮.২ ওভারে ২৬৪/১০ (রনি তালুকদার ১৬, আনিসুল ইসলাম ইমন ১১৪, মাহিদুল অঙ্কন ৪৮, তাওহিদ হৃদয় ৩, মুশফিকুর রহিম ২০, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৭, মেহেদী হাসান মিরাজ ১৮; নাহিদ রানা ৩/৪৯, রাকিবুল হাসান ২/২৩, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ২/৫২, মাহফুজুর রাব্বি ২/৬০, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ১/৩৫)।
আবাহনী: ৪৭.২ ওভারে ২২৫/১০ (পারভেজ ইমন ১৬, জিসান আলম ৩, নাজমুল হোসেন শান্ত ৮০, মোহাম্মদ মিঠুন ১৯, মুমিনুল হক ২৫, মাহফুজুর রাব্বি ১, মোসাদ্দেক হোসেন ২৪, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ২৪; এবাদত হোসেন ৪/৩৬, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ২/৪৪, মেহেদী মিরাজ ২/৩১)।
ফল: মোহামেডান ৩৯ রানে জয়ী।
এআরবি/এমএমআর/জেআইএম