জাতীয়

ঈদের বিকেল-সন্ধ্যায় ফুড কার্টে তরুণ-তরুণীদের ভিড়

ঈদের বিকেল-সন্ধ্যায় ফুড কার্টে তরুণ-তরুণীদের ভিড়

‘সকালে ঈদের নামাজ পড়ে বাসায় ফিরে লম্বা ঘুম দিয়েছি। বিকেলে বের হলাম। হাঁটাহাঁটি করে ক্ষুধা লেগেছে। ফুড কার্ট দেখে বসে পড়লাম। কিছু খেয়ে নিয়ে আরও কিছুক্ষণ ঘুরবো।’

Advertisement

কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাকিন আহসান। রাজধানীর হাতিরঝিলে ‘ওয়াও মমো’ ফুড কার্টে খাবার অর্ডার করে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। সঙ্গে রয়েছেন আরও দুই বন্ধু-বান্ধবী।

রাকিন বলেন, ‘আমাদের সবার ফ্যামিলি ঢাকাতেই থাকে। ঈদে অনেকদিন গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয় না। ফলে ঈদের দিন বিকেলে ঢাকাতেই বন্ধু-বান্ধবী মিলে ঘোরাঘুরি-আড্ডা দিই, খাওয়া-দাওয়া করি। এবারও তেমনি।’

একই ফুড কার্টে খাবার খেতে খেতে কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী আফরোজা আক্তার বলেন, ‘ফাস্ট ফুড খুব কম খাই। কিন্তু ঈদের দিনে বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়া মিস করতে নেই। আজকে কোনো ডায়েট চলবে না।’

Advertisement

রাকিন ও আফরোজার মতো অসংখ্য কিশোর-কিশোরী ও তরুণী-তরুণী ঈদের দিন সোমবার (৩১ মার্চ) বিকেল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ফুড কার্টে ভিড় করছেন। শুধু যে কম বয়সীরা এসেছেন, তা নয়। অনেকে পরিবার নিয়ে ঈদের দিন বিকেলে খোলা আকাশের নিচে ফুড কার্টে বসে খাবার উপভোগ করছেন।

রাজধানীর পুলিশ প্লাজার সামনে ইটালিয়া ফুড কার্ট। সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আগে বিল পরিশোধ করে খাবার অর্ডার করতে রীতিমতো লাইন দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। খাবার রেডি হলে আবার নিজে থেকে নিয়ে এসে খেতে হচ্ছে। তাতেও আপত্তি নেই ক্রেতাদের। খুশির দিনে বন্ধু-পরিবারের সঙ্গে নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটানোর পাশাপাশি খাবার উপভোগ করছেন তারা।

আরও পড়ুন উদযাপনে রঙিন আনন্দ দিন ঈদের দিন চিড়িয়াখানায় মানুষের ঢল নগরের পার্কগুলোতে আনন্দে মেতেছে শিশু-কিশোররা

এ ফুড কার্টে খাবার অর্ডার করতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন আজহারুল ইসলাম। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এবার ঈদে গ্রামের বাড়ি যাননি। বিকেলে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছেন। আজহারুল বলেন, ‘এখানে মাঝেমধ্যে আসা হয়। খাবারটা ভালো। বনশ্রীতে থাকি। ওটার ট্যাক্সিতে করে চলে এলাম। খাবার খেয়ে ঘোরাঘুরি করে বাসায় চলে যাবো। ঢাকাতে তো এটাই ঈদের আনন্দ।’

ক্রেতাদের ভিড় থাকায় কাজের চাপ বেশি হলেও খুশি কর্মীরা। ইটালিয়ার কর্মী সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, ‘বিকেল থেকে কাস্টমারের অনেক বেশি চাপ। অর্ডার মতো খাবার দিতে হিমশিম অবস্থা। কাস্টমারের এমন চাপ থাকাটা আমাদের জন্য আনন্দের। যত বেশি বিক্রি হবে, মালিক আমাদের তত বেশি বকশিশ দেবেন।’

Advertisement

পুলিশ প্লাজার সামনে এবং হাতিরঝিল ঘিরে গড়ে ওঠা ফুড কার্টগুলোতে খাবার দাম বেশি। সেখানে যারা যেতে পারেননি, তারা বেছে নিয়েছেন মেরুল বাড্ডা থেকে পুলিশ প্লাজা যাওয়ার সংযোগ সড়কের আগে বসা ফুড কার্টগুলো। সেখানে ভ্যানের ওপর তুলনামূলক কম দামে খাবার বিক্রি হচ্ছে।

দোকানগুলোতে ফুচকা, চটপটি, চিকেন ক্রিসপি, গার্লিক চিকেন, স্পাইসি চিকেনের বেশি চাহিদা। বিসমিল্লাহ চটপটি অ্যান্ড ফুচকার মালিক জোবায়ের বলেন, ‘ঈদের দিন বেচাবিক্রি ভালো। একা মানুষ, অর্ডার ডেলিভারি করতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

সেখানে ফুচকা খেতে খেতে মধ্যবয়সী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘মেয়েটা ফুচকা খেতে চায়। সেজন্য ওর মাকেও সঙ্গে নিয়ে এলাম। তিনজন মিলে তিন প্লেট ফুচকা খেলাম; দম কমই। খাওয়াটা তো শুধু উপলক্ষ্য। ঈদের দিনের বিকেল ও সন্ধ্যাটা পরিবারের সঙ্গে কিছুটা একান্তে কাটলো, এটাই ভালো লাগা এবং সার্থকতা।’

এএএইচ/বিএ