জাতীয়

‘ইয়ামিনের দৃশ্য মনে করলে স্বাভাবিক থাকার সুযোগ নেই’

‘ইয়ামিনের দৃশ্য মনে করলে স্বাভাবিক থাকার সুযোগ নেই’

শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঢাকার সাভারে প্রথম শহীদ। তিনি রাজধানীর মিরপুরের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তার মৃত্যু পুলিশি নির্যাতনের নির্মমতার সাক্ষী।

Advertisement

ইয়ামিনের মৃত্যুর মর্মান্তিক দৃশ্য নেটদুনিয়া কাঁদিয়েছে। ১৮ জুলাই সাভারে প্রথমে পুলিশের এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার) থেকে, পরে সড়ক বিভাজক পার করিয়ে সার্ভিস লেনে ফেলে দেওয়া হয় গুলিবিদ্ধ এই তরুণের দেহ। ভিডিও দেখে মনে হচ্ছিল কোনো মানুষ নয় বরং কোনো পণ্যের বস্তা ফেলা হচ্ছে। করুণ, মর্মান্তিক ও অমানবিক এ দৃশ্য কাঁদিয়েছে অনেককে। শুধু তাই নয়, তার দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতেও দেয়নি পুলিশ। টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে উদ্ধারকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিশ্বব্যাপী অমানবিকতার নজির স্থাপন করেছে এই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সেই নির্মম হত্যাযজ্ঞের আট মাস পার হলেও পরিবার ভুলতে পারেনি সে দৃশ্য। পবিত্র ঈদুল ফিতরে শহীদ পরিবারে ঈদ আয়োজনে জাগো নিউজের কথা হয় ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ওই চিত্র মনে করলে তো স্বাভাবিক থাকার সুযাগ নেই।’

সবার মতো ইয়ামিনের পরিবারেও ঈদ এসেছে। কিন্তু বাবা, মা ও বোনের জন্য ইয়ামিনহীন ঈদ উদযাপন কত কষ্টের, তা প্রকাশ করার মতো না।

Advertisement

শহীদের বাবা মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘এটা তো অনুভবের বিষয়। ভাষায় প্রকাশ করার কিছু নেই। এটা যত চিন্তা না করবো, ততই মানসিক দিক থেকে ভালো।’

তিনি বলেন, ‘আমি একভাবে এটাকে দেখি। ওর বোন-মা তাদের সামনে এটা প্রকাশ করলে তারা মেহমানদারি করতে পারবে না, বা দৈনন্দিন কাজও করতে পারবে না।’

আরও পড়ুন শিক্ষার্থী ইয়ামিন হত্যায় শেখ হাসিনাসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা এপিসি থেকে ফেলে ইয়ামিনকে হত্যা: ১০ জনের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা পরিবারের বাধার মুখে কবর থেকে তোলা গেলো না শহীদ ইয়ামিনের মরদেহ

মো. মহিউদ্দিন আরও বলেন, ‘এটা যেহেতু আল্লাহর পক্ষ থেকে ফায়সালা। সূতরাং আমরা মেনে নিয়েছি। শোক কাটানোর জন্য ভরসার কোনো জায়গা তো নেই। জায়গা একটাই, আল্লাহ। আল্লাহ অন্তরে শান্তি দিন।’

উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন ১৮ জুলাই দুপুর ১টা ৪৫ মিনিট থেকে ২টা ২০ মিনিটের মধ্যে, সাভার বাসস্ট্যান্ডের পুরাতন ওভারব্রিজের কাছাকাছি পুলিশের এপিসিটি অবস্থান করছিল। সেই সময়, মহাসড়কের বিপরীত দিক থেকে আন্দোলনকারীদের মধ্যে ইয়ামিন কোনো এক ফাঁকে প্রথমে সার্ভিস লেন, পরে মূল সড়কের বিভাজক টপকে এপিসিটির ওপরে উঠে যান। এপিসির ওপর ওঠার পরপরই বুকের বাম পাশে ছররা গুলির আঘাতে এপিসির ছাদেই লুটিয়ে পড়েন। সাভারের রানাপ্লাজা ও ভ্যাট অফিসের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছানোর পর, এপিসির ভেতর থেকে একজন পুলিশ সদস্য একটি দরজা খুলে এবং আরেকজন হ্যাচ খুলে ওপরে উঠে এসে ইয়ামিনকে রাস্তার ওপর ফেলে দেন, যা ছিল অত্যন্ত নির্মম ও অমানবিক।

Advertisement

ওই সময় সতীর্থরা তাকে উদ্ধার করতে এলে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কাছেও ভিড়তে পারেননি কেউ। প্রায় এক ঘণ্টা পর তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন ২০০১ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতৃনিবাস কুষ্টিয়ার কুমারখালী। পিতার নাম মো. মহিউদ্দিন, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা। ইয়ামিনের এক বোন আছে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে ইয়ামিন ছিলেন ছোট। তিনি সাভারের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। পরে মিরপুরের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হন।

শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনের স্মরণে সাভারের পাকিজা মোড়ে শহীদ ইয়ামিন চত্বর নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল গেটসংলগ্ন ফুট ওভারব্রিজের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ আসহাবুল ইয়ামিন ওভারব্রিজ।

এসইউজে/বিএ/এএসএম