সময়ের দেশসেরা সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য দুই বছর ধরে রয়েছেন থাইল্যান্ডে। দেশটির ফুকেটে ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়েটিকসের ট্রেনিং সেন্টারে নিবিঢ় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন রাজবাড়ী শহরের এই যুবক। এ নিয়ে তিনটি ঈদ তিনি করছেন মাকে ছাড়া থাইল্যান্ডে।
Advertisement
আজ ( সোমবার) ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়তে পায় ৪ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে গিয়েছিলেন রাফি। সঙ্গী ছিলেন ক্যাম্পেরই আফ্রিকান এক মুসলিম যুবক। সকালে অনুশীলন সেরেই ঈদের সালাত আদায় করতে তারা চলে গিয়েছিলেন দুরের সেই মসজিদে।
থাইল্যান্ডে এ নিয়ে তিনটি ঈদ কাটালেন সামিউল। জুলাইয়ে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হবে ওয়ার্ল্ড সুইমিং চ্যাম্পিয়নশিপ। বাংলাদেশ থেকে সামিউলের সাথে একজন মেয়ে অংশ নেবেন। সামিউল সেই চ্যাম্পিয়নশিপেরই প্রস্তুতিই নিচ্ছেন। সকালে নামাজ শেষ করে রুমে এসে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সাথে। বিদেশে ঈদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন ১৯ বছর বয়সী এই সাঁতারু। রাজবাড়ী শহরে সামিউলের মা একাকী ঈদ করবেন। সামিউলদের সংসার বলতে তিনি আর মা।
‘আমার বয়স যখন ৮ মাস তখন একটি সড়ক দূর্ঘনায় আমার বাবা মারা যান। তাই বাবার কোনো স্মৃতি আমার মনে নেই। মা আমাকে অনেক কষ্ট করে বড় করেছেন। আমার নানা বাড়ি আর দাদা বাড়ির সবাই আমাদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। এখন সেই মাকে রেখে টানা তিনটি ঈদ আমি থাইল্যান্ডে করছি।’
Advertisement
‘ঈদের অনেক কিছুই মিস করছি। রাজবাড়ী শহরে সবাইকে নিয়ে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া, মায়ের হাতের নানা ধরণের রান্না করা খাবার খাওয়া এবং আনন্দ করা। এখানে তো কিছুই নেই। অনেক কিছু মিস করছি। তবে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে মায়ের কথা। মাকে রেখে অনেক দুরে ঈদ করছি। ভাবলেই চোখে পানি চলে আসে’- থাইল্যান্ড থেকে বলছিলেন সামিউল ইসলাম রাফি।
এখানে ঈদের দিনটা কিভাবে কাটে? সামিউলের জবাব, ‘আসলে নামাজ পড়া ছাড়া ঈদের আর কোনো আনন্দ এখানে নেই। পুরো ক্যাম্পে আমরা দুইজন মুসলিম প্রশিক্ষণার্থী আছি। আরেকজন আফ্রিকার। তাকে নিয়েই সকালে নামাজ পড়ে এসেছি। এসেই বিশ্রাম নিচ্ছি। ঈদের কোনো আয়োজন নেই এখানে। খাবার-দাবার অন্যান্য দিনের মতোই। বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে আবার পুলে নেমে পড়তে হবে। উঠবো সন্ধ্যার দিকে। ঘুরতেও যাওয়া হবে না। সেই সুযোগও নেই।’
দেশসেরা তারকা সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফির ঈদে বিশেষ খাবারের তালিকায় রয়েছে পায়েস। এবারো তিনি তার পছন্দের পায়েস মিস করবেন। সেমাই, পোলাও, কোর্মা, গরুর মাংসও চোখে দেখেন না ঈদে। এদিন তাকে শাক-সবজি, মাছ-ভাত, ডাল খেয়ে থাকতে হয়। ঠিক অন্য দিনগুলোর মতো। ‘ঈদ বলে কোনো বিশ্রাম নেই। প্রতিদিনের মতো অনুশীলন করতে হয়। ফলে আমার জীবন থেকে ঈদ হারিয়ে যাচ্ছে। ঈদের কেনাকাটা ভুলে যাচ্ছি। এখানে ঈদে বিশেষ কোনো ছুটির ব্যবস্থা নেই। তাই ইচ্ছে থাকা সত্বেও দেশে গিয়ে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করার সুযোগ নেই’ -বললেন রাফি। ঈদের দিন সাদা রঙ্গের যে কোনো পোষাকই বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই সাঁতারুর প্রিয়। সেই প্রিয় পানজাবি পরেই তিনি গিয়েছিলেন দুরের মসজিদে নামাজ পড়তে। উপায় ছিল না। তাদের ট্রেনিং সেন্টারের কাছাকাছি কোনো মসজিদ নেই। টানা তিন ঈদে তিনি ৪ কিলোমিটার হেঁটে গিয়েই নামাজ পড়লেন।
মাকে রেখে দুরের থাইল্যান্ডে ঈদ করার কষ্ট থাকলেও রাফির লক্ষ্য ট্রেনিংয়ে ভালো করা। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে নিজের সেরাটাই করার ইচ্ছা তার। অনুশীলন যেভাবে চলছে এবং টাইমিং যা হচ্ছে তাতে খুশি দেশের এই সেরা সাঁতারু।
Advertisement
আরআই/আইএইচএস/