আন্তর্জাতিক

যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে নতুন বিপর্যয় এনেছে ভূমিকম্প

যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে নতুন বিপর্যয় এনেছে ভূমিকম্প

গৃহযুদ্ধ, খাদ্য সংকট ও অর্থনৈতিক অবনতির মধ্যে মিয়ানমারে নতুন বিপর্যয় ডেকে এনেছে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভয়াবহ এক ভূমিকম্প। প্রাণঘাতী ধ্বংসযজ্ঞের খবর আসছে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় থেকে শুরু করে রাজধানী নেপিদো থেকেও।

Advertisement

শনিবার (২৯ মার্চ) জান্তা সরকার জানিয়েছে, দেশটিতে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯৪ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৬৭০ জন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এছাড়া প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডেও ১০ জন নিহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও শতাধিক মানুষ।

আরও পড়ুন>>

Advertisement

মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে সেতু-ভবন, রাস্তায় ফাটল মিয়ানমারের ৬ অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর ১৪ আফটারশক

শুক্রবার দুপুরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে, যার কেন্দ্রের গভীরতা ১০ কিলোমিটার বলে জানিয়েছে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)।

ভয়াবহ বিপর্যয়

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারে তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। আক্রান্ত এলাকার মোবাইল নেটওয়ার্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ ও ইন্টারনেট সেবার বাইরে চলে গেছেন লাখ লাখ মানুষ।

ভেঙে পড়েছে বহু এলাকার বাড়িঘর, মসজিদ, উপড়ে গেছে গাছ। ফাটল ধরেছে রাস্তায়, ভেঙে গেছে সেতু, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে। তবে মিয়ানমারে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র এখনও স্পষ্ট নয়। মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটির পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াজ বলেছেন, হাজার হাজার মানুষের জরুরি আশ্রয়, খাবার এবং চিকিৎসা সহায়তা দরকার।

বহু এলাকায় ভূমিকম্পের প্রভাব কতটা পড়েছে তা জানতে কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে বলেও তার ধারণা। রেড ক্রসের আশঙ্কা, মিয়ানমারের বড় বড় বাঁধগুলোতে কম্পনের কারণে ফাটল ধরে থাকতে পারে। ফলে বন্যাও দেখা দিতে পারে। এতে বিপর্যয় আরও বাড়বে।

Advertisement

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবর বলছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর মান্দালয়ের কাছেই। প্রধান ভূমিকম্পের মাত্র ১০ মিনিট পরেই ৬ দশমিক ৪ মাত্রার একটি আফটারশক অনুভূত হয়।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া রাজধানী নেপিদোর বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে, সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত বিভিন্ন ভবন মাটিতে মিশে গেছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে আক্রান্তদের উদ্ধার করা হচ্ছে।

ভূমিকম্প ভয়াবহ আঘাত হানা এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে রক্তের চাহিদা বেড়েছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার সরকার।

মান্দালয়ের সড়কগুলোতে বড় ধরনের ফাটল দেখা গেছে। একটি মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেতু ভেঙে পড়েছে। এতে কিছু এলাকায় উদ্ধারকারীদের পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়বে।

মানবিক সংকটে মিয়ানমার

পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি মিয়ানমারে আগে থেকেই ব্যাপক মানবিক সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পের আঘাতে তা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভূমিকম্পের তীব্রতার বর্ণনা দিতে গিয়ে সিরিনিয়া নাকুতা নামে এক নারী বলেন, কম্পন থামছিল না। ওপরের তলা থেকে পাথরের মতো জিনিস খসে পড়ার শব্দ পাই। তখন বাচ্চাদের বলি, আমাদের এখানে থাকা ঠিক হবে না, বাইরে চলে যাওয়া উচিত।

সন্তানদের নিয়ে নিজের নেপিদোর অ্যাপার্টমেন্টেই ছিলেন নাকুতা। হঠাৎ তীব্র ঝাঁকুনি শুরু হলে বেশ কিছু সময়েও তা না থামায় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসেন তিনি।

মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনের এক বাসিন্দা বলেন, কম্পন ছিল বেশ তীব্র। প্রায় চার মিনিট ধরে ঝাঁকুনি চলে।

আরেক ব্যক্তি ঘটনার বর্ণনায় বলেন, ঘুম থেকে জেগে দেখি ভবন মারাত্মকভাবে দুলছে। কাঁপাকাঁপি প্রায় তিন থেকে চার মিনিট চলে। বন্ধুদের কাছ থেকে মেসেজ পাচ্ছিলাম। দেখলাম কম্পন শুধু ইয়াঙ্গুন নয়, দেশের অনেক এলাকাতেই হয়েছে।

মান্দালয়ে ধ্বংসাবশেষের ছবি ও ভিডিও এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। রয়্যাল প্যালেস, ৯০ বছরের পুরোনো ব্রিজ ধসে পড়ার পাশাপাশি আর মহাসড়কও ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।

সূত্র: এপি, ইউএনবিকেএএ/