দেশজুড়ে

নতুন পোশাক তৈরিতে আগ্রহ কম, ঘুম নেই ফিটিং কারিগরদের

নতুন পোশাক তৈরিতে আগ্রহ কম, ঘুম নেই ফিটিং কারিগরদের

সিলেটে ঈদের সময় ঘনিয়ে এলেও বিগত বছরগুলোর তুলনায় কাজের চাপ তুলনামূলক কম দর্জিপাড়ায়। ২৩ রমজানের পরও নতুন পোশাকের অর্ডার নিচ্ছেন দর্জির দোকানের কারিগররা। অন্য বছর ১৫ রমজানের পরে বন্ধ হয়ে যেত নতুন করে অর্ডার গ্রহণ। এবার ঈদের তিনদিন আগ পর্যন্ত অর্ডার নেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

অবশ্য নতুন পোশাক তৈরির কারিগরদের কাজের চাপ কিছুটা কম হলেও ফিটিং কারিগরদের দম ফেলার ফুরসত নেই। ঈদে তৈরি পোশাকের চাহিদা বেশি থাকায় ফিটিং কারিগরদের কাজের চাপ বেশি। দিনরাতে সমানতালে কাজ করছেন তারা।

রোববার (২৩ মার্চ) সিলেট নগরীর শুকরিয়া মার্কেট, হক সুপার মার্কেট ও কাজি ম্যানশনের দর্জি দোকানগুলো সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতি বছর ঈদের মৌসুমে আমাদের কাজের চাপ সবচেয়ে বেশি থাকে। এবারও কাজের অনেক চাপ রয়েছে। তবে নতুন জামা তৈরির চাপ কম। বেশিরভাগ ফিটিং কাজের চাপ বেশি। ঈদের সময় আরও ঘনিয়ে এলে কাজের চাপ আরও বাড়বে।

Advertisement

এবারের ঈদে ছেলেদের পোশাকের পছন্দের তালিকায় রয়েছে তোপ বা জোব্বা, পাঞ্জাবি-পায়জামা, শার্ট ও প্যান্ট। কারিগরদের কাছে সবচেয়ে বেশি অর্ডার রয়েছে এসব পোশাকের। তবে সবচেয়ে বেশি অর্ডার রয়েছে সৌদি আরবের ডিজাইনে তোপ বানানোর। আর নারীদের ক্ষেত্রে থ্রি–পিস, ব্লাউজ ও টপসের অর্ডার বেশি।

আরও পড়ুন ঈদ বাজারে পোশাকেই ব্যয় ৮০ শতাংশ দম ফেলার সময় নেই দর্জিপাড়ায়

নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার দ্য টপটেন টেইলার্সের বিক্রয় প্রতিনিধি আরিফুজ্জামান বলেন, এবার খুব বেশি কাজের চাপ নেই। এখনো নতুন পোশাক তৈরির অর্ডার নেওয়া হচ্ছে। কাজের চাপ কম থাকলে আরও তিন-চারদিন পর্যন্ত অর্ডার নেওয়া হতে পারে।

তিনি বলেন, এবারের ঈদে ছেলেরা তোপ, পাঞ্জাবি, পায়জামা, শার্ট ও প্যান্টের অর্ডার দিচ্ছেন। ঈদে তৈরি পোশাকের (রেডিমেড) চাহিদা বেশি থাকায় আমাদের কাজের চাপ তুলনামূলক কম, যা কাজ থাকে তা ১৫ রমজানের মধ্যেই শেষ হয়। তবে এবার অন্যান্য বছরের মতো কাজের চাপ নেই।

গত ঈদে ২০ রমজানের পরে নতুন করে অর্ডার নেওয়া বন্ধ ছিল। এবার ঈদের আগের দিন অর্ডার নিলেও হয়তো ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হবে। অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবার কাজের চাপ নেই বললেই চলে।

Advertisement

নগরীর শুকরিয়া মার্কেটের ফেরদৌস টেইলার্স অ্যান্ড ফেব্রিকসের স্বত্বাধিকারী শরীফ উদ্দিন বলেন, গত ঈদে ২০ রমজানের পরে নতুন করে অর্ডার নেওয়া বন্ধ ছিল। এবার ঈদের আগেরদিন অর্ডার নিলেও হয়তো ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হবে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কাজের চাপ নেই বললেই চলে।

ফিটিং কারিগরদের ব্যস্ততা-ছবি জাগো নিউজ

তিনি বলেন, ঈদে আমাদের কাজের চাপ তুলনামূলক কম থাকে। তবে শীতকালে প্রচুর কাজ থাকে। এবারের শীতেও প্রচুর কাজ হয়েছে। ভালো গ্রাহক ছিলেন।

আরও পড়ুন এক ছাদের নিচে ঈদের সব কেনাকাটা সাধ্যের মধ্যে ঈদ কেনাকাটা

শুকরিয়া মার্কেটের পাঁচতলায় মেট্রো টেইলার্সের সবচেয়ে বড় কারখানা। ৩৫ জন কারিগর একসঙ্গে কাজ করেন সেখানে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে কারিগরের কাজ করেন ইমাম উদ্দিন।

তিনি বলেন, গত ১০ বছরে সিলেটে অসংখ্য দর্জির দোকান বেড়েছে। অনেক বড় বড় কারখানাও গড়ে উঠেছে। যে কারণে গ্রাহকরা এক দোকানে ভিড় না করে বিভিন্ন দোকানে বিভক্ত হচ্ছেন। এজন্য আমাদের কাজের চাপ কমেছে।

কাজের চাপ কমলেও ব্যবসা খারাপ হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঈদে সবাই নতুন পোশাক বানায় না। বেশিরভাগ মানুষ তৈরি পোশাক কেনেন। তবে পাঞ্জাবি-পায়জামা ও তোপ বানানোর জন্য আমাদের কাছে আসেন। যাদের নতুন করে পোশাক বানানোর ইচ্ছা রয়েছে, তাদের বেশিরভাগই অর্ডার দিয়ে কাজ শেষ করছেন।

কাপড় সেলাইয়ের মজুরি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, একটা তোপ তৈরি করলে একজন কারিগর পারিশ্রমিক পান ২০০-২৫০ টাকা। আর মালিকপক্ষ নেন ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। একইভাবে একটি শার্ট বা প্যান্ট তৈরি করে কারিগর পান ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। দোকান মালিক পক্ষ আদায় করে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। সবকিছুর মজুরি বাড়ে, কিন্তু কারিগরদের মজুরি বাড়ে না।

ঈদে সবাই নতুন পোশাক বানায় না। বেশিরভাগ মানুষ তৈরি পোশাক কেনেন। তবে পাঞ্জাবি-পায়জামা ও তোপ বানানোর জন্য আমাদের কাছে আসে। যাদের নতুন করে পোশাক বানানোর ইচ্ছা রয়েছে, তাদের বেশিরভাগই অর্ডার দিয়ে কাজ শেষ করে ফেলেছেন।

তিনি বলেন, এই সেক্টরে যারা আসেন তারা কখনো আলোর মুখ দেখেন না। যদি কেউ নিজে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করতে পারেন তাহলে সে লাভবান হন। তা না হলে সারাজীবন চাকরিই করতে হয়।

পোশাক সাইজ করতেই ব্যস্ত তারা-ছবি জাগো নিউজ

নগরীর কাজী ম্যানশনের চতুর্থ তলায় অর্ধশতাধিক ফিটিং টেইলার্সের দোকান রয়েছে। এসব দোকানে কয়েক শতাধিক কারিগর কাজ করেন। রোববার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছেন না কারিগররা। তৈরি পোশাক ফিটিংয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

আরও পড়ুন নিরাপত্তা শঙ্কায় মধ্যরাতে ক্রেতা কম ফুটপাতে জমে উঠছে ঈদের কেনাকাটা

কথা হয় হেলাল টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, একটি নতুন প্যান্ট তৈরি করতে কাপড় ও সেলাইসহ সাধারণত ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা খরচ পড়ে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এক হাজার টাকায় দুটি প্যান্ট কিনতে পারেন অনেকে। যার কারণে তৈরি পোশাকে আগ্রহ বেড়েছে মানুষের। এজন্য প্রতিদিন এখানে তৈরি পোশাক ফিটিং করতে আসেন অনেকে।

তিনি বলেন, প্রতি বছর ঈদের মৌসুমে আমাদের কাজের চাপ সবচেয়ে বেশি থাকে। এবারও কাজের অনেক চাপ। তবে নতুন জামা তৈরির চাপ কম। বেশিরভাগ ফিটিং কাজের চাপ বেশি। ঈদের সময় আরও ঘনিয়ে এলে কাজের চাপ আরও বাড়বে বলেন তিনি।

জেএএইচ/এসএইচএস/এএসএম