দেশজুড়ে

৬০০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস কিনতে তীব্র রোদে দীর্ঘ অপেক্ষা

৬০০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস কিনতে তীব্র রোদে দীর্ঘ অপেক্ষা

ময়মনসিংহ সদরের শেষ সীমানা চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নের বরবিলা গ্রাম। জোসনা খাতুন এই গ্রামের বাসিন্দা। খবর পেয়েছেন শহরে (ডিসি অফিসের সামনে) কম দামে গরুর মাংস ও ডিম বিক্রি করা হচ্ছে। তড়িঘড়ি চলে আসেন তিনি। এসে দেখেন দেওয়া হচ্ছে শুধু মাংস। একেকজন ১ কেজি নিতে পারছেন। দাম ৬০০ টাকা। এতে মনক্ষুণ্ন হন এই নারী। তবুও মাংস নিতে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে যান।

Advertisement

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায় দুইটি আলাদা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকশো নারী-পুরুষ। প্রচণ্ড রোদের তাপের মধ্যে সবাই মাংস কিনতে অপেক্ষা করছেন। কারো কারো হাতে ছাতা থাকলেও বেশিরভাগ মানুষের সঙ্গে ছাতা নেই। অনেকের শরীরের ঘামে পোশাক ভিজে গেছে। গরম সহ্য করতে না পেরে অনেকে সড়কের পাশে বসে আছেন। কয়েকজন কর্মচারী এক এক করে ভেতরে প্রবেশ করিয়ে মাংস বিকিকিনিতে সহায়তা করছেন। পরিবেশ সুশৃঙ্খল রাখতে রয়েছে পুলিশও।

এসময় জোসনা খাতুনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সকালেই এলাকার একজন নারীর কাছ থেকে শুনেছি কম দামে মাংস-ডিম দেওয়া হবে। এজন্য ৩৫ টাকা অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে চলে আসি। এসে দেখি ডিম নেই। মাংসের দামও খুব কম না। তবুও আসছি যেহেতু, তাই মাংস নিতে রোদের মধ্যেই লাইনে দাঁড়িয়েছি। বাড়িতে যাওয়ার সময় আরও ৩৫ টাকা খরচ হবে।

পপি আক্তার এসেছেন নগরীর জেলখানা এলাকা থেকে। তিনি বলেন, বাসাবাড়িতে কাজ করি। আমার স্বামী অসুস্থ। সন্তান কাজকর্ম করে না। ঈদের আর কয়েকদিন বাকি আছে। সারাবছর মন চাইলেও মাংস কেনার সামর্থ্য থাকে না। অন্তত ঈদের দিন মাংস খেতে হবে। তাই এখান থেকেই কম দামে কিনতে এসেছি। যেই দামে বিক্রি করা হচ্ছে, তাতে আমাদের কাছে দাম বেশি মনে হচ্ছে। দাম আরও কমানো দরকার ছিল।

Advertisement

নগরীর বলাশপুর এলাকা থেকে এসেছেন আশা আক্তার। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে মাংস বিক্রি শুরু হয়েছে। সাড়ে ১০টার দিকে লাইনে দাঁড়িয়েছি। লোকজন বেশি হওয়ায় এখনো (দুপুর ১২টা) লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। রোদের কারণে খুব কষ্ট হচ্ছে।

প্রচণ্ড রোদের কারণে লাইন থেকে কিছুটা দূরে ছায়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন যুবক রিফাত মিয়া। তিনি বলেন, নগরীর স্টেডিয়াম এলাকা থেকে এসেছি। এসে দেখি ডিম বিক্রি বন্ধ রয়েছে। বাজারে এক কেজি গরুর মাংসের দাম ৭৫০-৭৮০ টাকা। এখানে রাখা হচ্ছে ৬০০ টাকা। অনেকে কিছুটা দূর থেকেও মাংস কিনতে এসেছেন। খরচসহ ধরলে এই মাংস কিনে লাভ নেই। নিম্ন আয়ের মানুষদের কথা চিন্তা করে দাম আরও কমানো দরকার ছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রমজান মাস উপলক্ষে গত ৪ মার্চ সকালে সুলভ মূল্যে গরুর মাংস ও ডিম বিক্রির এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম। জেলা প্রশাসন ও জেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগ এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিক্রয় ও বিপণনের কাজ করছে ‘বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন’। মাংস বিক্রির প্রথম দিন থেকে প্রতি মঙ্গলবার ও বুধবার গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা ও প্রতি ডজন ডিম ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একেকজন এক কেজি মাংস ও এক ডজন ডিম নিতে পেরেছেন। তবে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) শুধুমাত্র গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। এদিন ৫টি গরু জবাই করা হয়েছে। এসব মাংস কমপক্ষে ১ হাজার ১০০ মানুষ কিনতে পারবে।

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, পুরো রমজান মাসের জন্য এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আজকেই বিক্রির শেষ দিন চলছে। উদ্দেশ্য ছিল, স্বল্পআয়ের মানুষরা যেন সুলভমূল্যে কিনতে পারেন। সরকারি কোনো ভর্তুকি ছাড়া এই কার্যক্রম চলছে। এতে অনেক নিম্ন আয়ের লোকজন উপকৃত হয়েছে।

Advertisement

এফএ/জেআইএম