যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্মকর্তাদের হাতে গ্রেফতার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল নিজেকে রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে দাবি করেছেন। মার্কিন প্রশাসনের অভিবাসীদের এভাবে আটকে রাখার প্রক্রিয়াকে ইসরায়েলের বিচারবহির্ভূত আটক ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন এই ফিলিস্তিনি যুবক।
Advertisement
গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার আটককেন্দ্র থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন তিনি। গ্রেফতার হওয়ার পর প্রকাশ্যে দেওয়া এটিই তার প্রথম কোনো বিবৃতি। গত ৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবন থেকে খলিলকে গ্রেফতার করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন>>
গাজায় ইসরায়েলি হামলা: নিহত বেড়ে ৪০৪ ট্রাম্পের সঙ্গে পরামর্শ করেই গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল নেতানিয়াহুর গদি বাঁচাতেই গাজায় ফের হামলা?বিবৃতিতে খলিল বলেন, আমি একজন রাজনৈতিক বন্দি। লুইজিয়ানার শীতের সকালে ঘুম ভাঙার পর আমার দীর্ঘ দিন কাটে এখানে আটক বহু মানুষদের দেখে, যারা আইনের সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত।
Advertisement
খলিল বর্তমানে লুইজিয়ানার জেনা শহরে একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রে রয়েছেন। সেখানেই তিনি বিচারের মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। এভাবে আটকে রাখার ঘটনাকে তিনি ইসরায়েলের কারাগারে বিনা বিচারের বছরের পর বছর ফিলিস্তিনিদের আটকে রেখে নির্যাতনের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
খলিল বলেন, ফিলিস্তিনের ভূমি থেকে দূরে থাকলেও ভাগ্য সেই সীমানা অতিক্রম করে ফেলেছে। নিজেদের অধিকারের জন্য তাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হয়।
বিনা অপরাধে, বিনাবিচারে তাদের আটক থাকতে হয়, তিনিও এর বাইরে নন বলে মন্তব্য করেন খলিল। যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিবাসন কেন্দ্রে কেউই নিজের অধিকার পেতে পারেন না বলেও নিজের অভিমত জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউজে ফিরেই অঙ্গীকার করেছিলেন, গত বছর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থি প্রতিবাদী আন্দোলনে জড়িত কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন। এই আন্দোলনকে তিনি ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করেন।
Advertisement
ট্রাম্পের তথাকথিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদিবিদ্বেষী বিক্ষোভ বন্ধের অভিযানের প্রথম শিকার ৩০ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি যুবক। মাহমুদ খলিল কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের শিক্ষার্থী। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের গ্রিনকার্ড রয়েছে তার। কিন্তু তার গ্রিনকার্ড বাতিলের প্রক্রিয়া চলমান বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। আপাতত তাকে নির্বাসিত করার প্রক্রিয়া স্থগিত করেছেন এক ফেডারেল জজ।
নিজের বন্ধু ও পরিবারের মাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে আটককেন্দ্রে অভিবাসীদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের অমানবিক আচরণের প্রতিবাদ করেছেন মাহমুদ খলিল। গাজায় ফের ইসরায়েলের হামলা শুরু করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে নতজানু হয়ে নিজেদের শিক্ষার্থীকে শাস্তির মুখে ঠেলে দেওয়ায় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনাও করেছেন খলিল।
ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত ও ফিলিস্তিনপন্থি মতামত দমনের চেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন অনেক মানবাধিকার কর্মী ও খলিলের আইনজীবীরা।
বিবুতিতে খলিল বলেছেন, তাকে গ্রেফতারের ঘটনা সরাসরি তার বাকস্বাধীনতা লঙ্ঘন। তিনি কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন না। তিনি বলেন, আমি শুধু চেয়েছিলাম ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ হোক। সেজন্য আমাকে গ্রেফতার করা হলো।
সূত্র: ইউএনবিকেএএ/