বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ এলডিসি বা নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। তাই স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি (এসটিএস) অ্যালাইনমেন্টের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব রোড ম্যাপ তৈরি করতে হবে, যেন আমরা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারি।
Advertisement
বুধবার (১৯ মার্চ) দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের রপ্তানি বৈচিত্র্য: এলডিসি স্নাতক পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআই সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ট্রেড ও ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব) ড. মইনুল খান ও বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।
Advertisement
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আমরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েট হই বা না হই, আমাদের রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ করতেই হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েট হতে হবে এটা একটা বাধ্যবাধকতা। আমাদের এটা আত্মস্থ করতে হবে। আমি মনে করি এরকম সেমিনার না করে আমাদের ওয়ার্কশপ করতে হবে যেখানে আমরা বিশ্লেষণ করবো কীভাবে স্মুথলি গ্র্যাজুয়েট হতে পারি। আমরা আলোচনা করি মাইক্রো লেভেলে তবে আমাদের আরও বেশি মাইক্রো লেভেলে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমি চার বছর আগে সিরামিক রপ্তানি করা শুরু করি। আজ আমি দেশের সবচেয়ে বড় সফল সিরামিক রপ্তানিকারক। যখন আমি এই ব্যবসায় আসি তখন কিছু তথ্য খুঁজেছিলাম যে এখানে অ্যানার্জি খরচ কত, কত লোক কাজ করে, কী পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে। আমি এসব তথ্য নিয়ে তার ৫০ শতাংশ কাজে লাগিয়ে ১০০ শতাংশ উৎপাদন করার চেষ্টা করি। এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ কম্প্লায়েন্ট ছিল। তবুও আমি খুশি না কারণ মাত্র আড়াইশ কোটি টাকা রপ্তানি করতে পেরেছি। তবে এটা ৫০০০ কোটি টাকা করা সম্ভব।
‘এখানে অনেকেই দুর্নীতি নিয়ে অনেক কথা বলেন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ২৮ লাখ কোটি টাকা চুরি হয়ে গেছিল। কিন্তু এখন তো হচ্ছে না। দুর্নীতি বন্ধ না করা গেলেও দুর্নীতি করার রাস্তা কঠিন করা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, সবার সমন্বিত কাজের ফলে কিছু দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো সম্ভব হয়েছে তবে এখনো কিছু পণ্যের দাম অস্থিতিশীল যেমন- চাল। চালের দাম স্থিতিশীল করতে আমি খাদ্য উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলব।
Advertisement
‘একটা জিনিস ভাবার আছে যে আমাদের দেশীয় বাজার বড় হচ্ছে, কিন্তু রপ্তানি বাজার বড় হচ্ছে না কেন? এর প্রধান কারণ একই শিল্পের অনেকগুলো ব্যবসায়ী সংগঠন। এর কারণে কারও কোনো কালেক্টিভ ভয়েজ নেই।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, অনেকে এফটিএ, সিইপিএ নিয়ে কথা বলেছেন। আমি বলব এগুলো করা এত সহজ নয়। এফটিএ সিইপিএ ইত্যাদি করলে আমাদের ছাড় দিতে হবে। মনে রাখতে হবে ব্যবসার ক্ষেত্রে কেউ আমাদের বন্ধু না, সবাই প্রতিযোগী। আমি মনে করি সামনে যে সুযোগ আমাদের আছে তা এই চ্যালেঞ্জের থেকে অনেক বড়। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের করপোরেট ফাইন্যান্স পরিচালক উজমা চৌধুরী, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এম মাশরুর রিয়াজ, বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামিম আহমেদ, স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) মো. মিজানুর রহমান, ক্রিয়েটিভ কানেকশনসের স্বত্বাধিকারী মাশরাকা বিনতে মোশাররফ প্রমুখ।
এসআরএস/এমআরএম