অর্থনীতি

গুলশান-বনানীর অভিজাত শপিংমলে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীর গুলশান-বনানীর বিভিন্ন শপিংমলে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। অভিজাত এই এলাকার বিভিন্ন নামিদামি শপিংমলের শোরুমে শোভা পাচ্ছে হাজার থেকে লাখ টাকা মূল্যের পোশাক। প্রতিদিন ইফতারের পর কোটি টাকা দামের গাড়ি হাঁকিয়ে কেনাকাটার জন্য বেরিয়ে পড়ছেন বিত্তবানরা। গুলশান-বনানীর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, হালের ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের প্রতিটি শোরুমে পোশাকের পসরা সাজানো হয়েছে। যা দেশ-বিদেশের বিখ্যাত সব ফ্যাশন ডিজাইনাররা তৈরি করেছেন।  সরেজমিনে দেখা যায়, শাড়ি, পাঞ্জাবি, মেয়েদের পোশাকের দোকান, নতুন কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে জুতা, কসমেটিক্সের দোকানগুলোতে তুলনামূলক ভিড় বেশি। এ ধরনের পণ্যের চাহিদাও বেশি। গুলশান-বনানীর শীততাপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি শপিংমল সাজানো হয়েছে হরেক রঙের বাতি দিয়ে। ক্রেতাদের আনন্দ দিতে প্রায় প্রতিটি শোরুমে বাজানো হচ্ছে আধুনিক ইসলামিক গান। তবে বনানীর চেয়ে গুলশানের শপিংমলগুলো বেশি সাজানো গোছানো।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের পিংক সিটি শপিং কমপ্লেক্সে তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। বেশিরভাগ শোরুম বা দোকানে দুই-চারজন ক্রেতা। আবার কোনোটি একদম খালি। তবে সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রমেই ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 পিংক সিটি শপিং কমপ্লেক্স থেকে পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদের পোশাক কিনে বের হচ্ছিলেন এক বেসরকারি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক শাহরিয়ার আলম। আলাপকালে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, সাধারণত ১৫ রমজানের পর থেকেই শপিংমলগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে। তাই প্রতিবছরই রমজানের শুরু দিকে পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পরিবারের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জন্য পোশাকসহ সবার জন্য কেনাকাটা করেছি।  গুলশান অ্যাভিনিউয়ে বরাবরের মতোই ক্রেতাদের ভিড় ছিল ইয়োলোর শোরুমে। এখানে প্রতিটি ক্যাটাগরিতে নতুন কালেকশন এসেছে, বিশেষ করে পাঞ্জাবি, লন-সালওয়ার-কামিজ ও কুর্তিতে। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মীরা জানান, এবার ক্রেতাদের পছন্দের বৈচিত্র্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। পাশাপাশি, আমাদের ব্র্যান্ড প্রমিজ অনুযায়ী, প্রিমিয়াম ফেব্রিক ও কমফোর্ট নিশ্চিত করাটা সবসময়ই আমাদের অগ্রাধিকার।  ইয়োলোর উপমহাব্যবস্থাপক সুমিত তরফদার জাগো নিউজকে বলেন, ঈদ আমাদের জন্য শুধুমাত্র একটি সিজন নয়, এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উৎসব। তাই, প্রতিবারের মতো এবারও আমাদের প্রস্তুতি পরিকল্পিত ও সুসংগঠিত। আমরা চাই, ক্রেতারা তাদের ঈদের লুককে আরও ফ্যাশনেবল করে তুলতে পারেন। সেই লক্ষ্যেই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।

আরও পড়ুনক্রেতার অপেক্ষায় বিক্রেতা, বোনাসের অপেক্ষায় চাকরিজীবী ফল আমদানিতে কমলো উৎসে কর 

তিনি বলেন, আমরা পোশাকের ডিজাইন করার সময় বয়সের চেয়ে ব্যক্তির রুচিকে বেশি গুরুত্ব দেই। ফ্যাশন সচেতন যে কোনো বয়সের নারী ও পুরুষ আমাদের কালেকশন পছন্দ করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। শিশুদের জন্যও প্রতিটি স্টোরে আমাদের স্পেশাল কর্নার রয়েছে।  বর্তমান পরিস্থিতিতে এবার আপনাদের ব্যবসা কেমন হবে বলে আশা করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সুমিত তরফদার বলেন, বাংলাদেশের মানুষ উৎসবপ্রিয়। পরিবার, বন্ধু ও আপনজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়াই আমাদের সংস্কৃতির সৌন্দর্য। ফ্যাশন তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই বরাবরের মতো এবারও আমরা আশাবাদী যে, ঈদে ক্রেতাদের কাছ থেকে দারুণ সাড়া পাবো।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, আমাদের বিক্রি প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালোই চলছে। আমরা প্রোডাক্ট ও সার্ভিস, দুই দৃষ্টিকোণ থেকেই ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি, আরও নিচ্ছি। প্রতিদিন স্টোরে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক আসছে। সাধারণত রমজানের শেষ ১০ দিন ক্রেতাদের ভিড় সবচেয়ে বেশি হয়। ইনশাআল্লাহ ক্রেতারা প্রতিবারের মতো এবারও ইয়েলোমুখী হবেন।

 বনানী ১১ নম্বর রোডের দুপাশে দেশের নামকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পোশাকের শোরুম রয়েছে। এখানেও ইয়োলো, ইনফিনিটি, আড়ং, নৈর ক্লথিং, অঞ্জনসে প্রচুর ক্রেতাকে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে।  ইনফিনিটি থেকে ঈদের পাঞ্জাবি ও শাড়ি কিনেছেন বনানী ১৪ নম্বর রোডে বসবাস করা নবদম্পতি মোস্তাফিজর। আলাপকালে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গত ডিসেম্বরে আমরা বিয়ে করেছি। দাম্পত্য জীবনে এটাই প্রথম ঈদ। গত কয়েকদিন ধরেই ঘুরেঘুরে বনানীর বিভিন্ন শোরুম থেকে পোশাক, জুতা, এক্সেসরিজ, কসমেটিক্স কিনেছি। বিগত যে কোনো বছরের চেয়ে এবার কেনাকাটা অনেকটা স্বস্তিদায়কই মনে হচ্ছে।  বনানীর এক পোশাকের শোরুমের ব্যবস্থাপক কামাল আহমেদ বলেন, অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় এবার ঈদে বেচাকেনা আগেই জমে উঠেছে। কারণ, বিগত বছরগুলোতে ঈদ উপলক্ষে অনেকেই ভারতে কেনাকাটার জন্য যেতেন। কিন্তু এবার ভিসা জটিলতায় অভিজাত এলাকার বাসিন্দারা ঢাকার ভেতরেই কেনাকাটা করছেন। আশা করা যায় এবার ঈদ উপলক্ষে ভালোই বেচাকেন হবে। কথা হয় বনানী ১১ নম্বর রোডের ইনফিনিটির শোরুমের ব্যবস্থাপক মো. অনিক হোসেনের সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, এরই মধ্যে ঈদের বেচাকেনা জমে উঠেছে। ক্রেতারা তাদের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী কেনাকাটা করতে পারছেন। রমজানের বাকি দিনগুলোতে ভালই বেচাকেনা হবে বলে আশা করি।  এমএমএ/কেএসআর