যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ৭৬ কোটি টাকা পাচার ও ঋণের ৩৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান ও তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
Advertisement
এছাড়া কাগুজে প্রতিষ্ঠানে ঋণের নামে ১১৩ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে সালমান এফ রহমানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছে দুদক।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রথম মামলায় বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইনডেক্স পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি লিমিটেডের নামে ঋণ মঞ্জুর করা হয়। মঞ্জুরিপত্রের এলসি শর্তাবলি ভঙ্গ করে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের নামসর্বস্ব কাওয়েজ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৯৮ লাখ ৮২ হাজার ইউএস ডলারের বা ৭৬ কোটি ৩৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকার বিনিময়ে ইনডেক্স পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জির (ইউনিট-২) জন্য ড্রইং ও ডিজাইন নিয়ে আসার জন্য এলসি খোলা হয়। ড্রইং ডিজাইনের বদলে কাগজ নিয়ে এসে ওই টাকা বিদেশে পাচার করে মানিলন্ডারিং হয়েছে।
Advertisement
অন্যদিকে, এলসির টাকা ফোর্স লোন ক্রিয়েট করে এরই মধ্যে ৮ বছর পার হয়ে গেলেও ব্যাংকের বকেয়া ৩৩ কোটি ৬৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা পরিশোধ না করে আত্মসাতের অপরাধ এনে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক কমলেশ মন্ডল বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ মামলাটি দায়ের করেন।
এ মামলার আসামিরা হলেন- ইনডেক্স পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি লিমিটেডের সাবেক এমডি জাকিয়া তাজিন, বেক্সিমকো এলজিপি লিমিটেডের পরিচালক শায়ান ফজলুর রহমান, এসকর্প হোল্ডিংস লিমিটেডের পরিচালক আহমেদ শাহরীয়ার রহমান ও আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর রহমান।
এছাড়াও আসামি হয়েছেন- ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক এক্সিকিউটিভ দীপংকর বড়ুয়া, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট কামরুল ইসলাম চৌধুরী, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনসী ছরোয়ার জান, দিলীপ কুমার দাস, চন্দন কুমার দাস, এসভিপি আনোয়ার হোসেন চৌধুরী ও ম্যানেজার ফরিদ উদ্দিন আহাম্মদ।
Advertisement
গত ১০ মার্চ সালমান এফ রহমান, তার স্ত্রী সৈয়দা রুবাবা রহমান, ভাই আহমেদ সোহাইল ফসিহুর রহমান, ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং আহমেদ সোহাইলের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছরের আগস্টে ঢাকার সদরঘাট থেকে গ্রেফতার হন সালমান এফ রহমান।
দ্বিতীয় মামলার আসামিরা হলেন- অ্যাগ্রো ইনডেক্স লিমিটেডের এমডি জাকিয়া তাজিন, আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক এসইভিপি সৈয়দ ফজলে আহমেদ, মো. বদর কামাল, এফএভিপি মোহাম্মদ সামশুল আলম, ইডিপি মো. রফিকুল ইসলাম, ইভিপি মো. ফখরুল আবেদীন, ডিএমডি মোহাম্মদ মোস্তাফা হাইকেল হাশমী, সাবেক এমডি মোহাম্মদ শাহ আলম সারওয়ার ও ব্যাংকটির চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর রহমান।
দুদকের উপপরিচালক কমলেশ মন্ডল বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ মামলাটি দায়ের করেন।
এ মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি জাকিয়া তাজিন একজন টিভি ব্যক্তিত্ব। ইনডেক্স পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি ইউনিট-২ লিমিটেডের ৮০ শতাংশ শেয়ারের মালিক যথাক্রমে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং আহমেদশাহরীয়ার রহমান। এর থেকে সহজেই অনুমিত হয় যে, জাকিয়া তাজিন বেক্সিমকো গ্রুপ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। জাকিয়া তাজিনের ইলিশ প্রোসেসিং ব্যবসার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না।
এতে বলা হয়, আসামি জাকিয়া তাজিন তার প্রতিষ্ঠান অ্যাগ্রো ইনডেক্স লিমিটেডের নামে আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেডের প্রিন্সিপাল শাখা এবং মতিঝিল শাখার থেকে বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট ১৪৬৮.২৩ মিলিয়ন বা ১৪৬ কোটি ৮২ লাখ টাকার ঋণ গ্রহণের আবেদন করেন। আইএফআইসি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখা ও মতিঝিল শাখার তৎকালীন কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে ঋণগুলোর প্রস্তাব প্রস্তুত করে হেড অফিসে পাঠান। এভাবে জাকিয়া তাজিন তার প্রতিষ্ঠান অ্যাগ্রো ইনডেক্স লিমিটেডের নামে আইএফআইসি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট ১৪৬৮.২৩ মিলিয়ন বা ১৪৬ কোটি ৮২ লাখ টাকার ঋণ গ্রহণ করেন।
এক্ষেত্রে আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর রহমান তার প্রভাব বিস্তার করে তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জাকিয়া তাজিনের নামে ঋণ মঞ্জুর করেছেন। কিন্তু জাকিয়া তাজিন ওই ঋণ গ্রহণের জন্য কোনোমটর্গেজ দেননি।
এজাহারে আরও বলা হয়, জাকিয়া তাজিন বিভিন্ন সময় মর্টগেজ প্রদানের জন্য সময় বৃদ্ধি বা ডেফারেল পিরিয়ড বাড়ানোর আবেদন করেছেন। ব্যাংকে কর্মকর্তারা প্রক্রিয়াকরণ করে বোর্ডের অনুমোদক্রমে ডেফারেল পিরিয়ড বাড়ান। অ্যাগ্রো ইনডেক্স লিমিটেডের ইলিশ প্রোসেসিং ফ্যাক্টরিটি যে জমির ওপর নির্মিত সেই জমির মালিকানা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে বিরোধের জন্য অ্যাগ্রো ইনডেক্স লিমিটেডের তার উৎপাদন কার্যক্রম এখনো শুরু করতে পারিনি।
কিন্তু উৎপাদন শুরুর আগেই ওয়ার্কিং কেপিট্যাল ব্যাংক থেকে প্রভাব খাটিয়ে ছাড় করে নিয়েছে। ইলিশ প্রোসেসিং কারখানায় মোট ১৪৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। যার মধ্যে ১১৩ কোটি ৪১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৬ টাকা স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে লোন ডাইভার্ট করে ঋণের উদ্দেশে ব্যতীত অন্যত্র সরিয়ে মানিলন্ডারিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন।
এসএম/এমকেআর