ধর্ম

ইফতারে কারও মেহমান হলে যে দোয়া পড়বেন

রমজানের একটি বিশেষ আমল রোজাদারদের ইফতার করানো। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে যে কোনো রোজাদারকে ইফতার করানো অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। বহু হাদিসে রোজাদারদের ইফতার করানোর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। জায়েদ ইবনে খালেদ আল-জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কোনো রোজাদারকে যে ব্যক্তি ইফতার করায় সে রোজাদারের সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করে এবং এ কারণে রোজাদারের সাওয়াব থেকে একটুও কমানো হয় না। (সুনানে তিরমিজি: ৮০৭)

Advertisement

তাই রমজান মাসে অনেকেই ইফতারে দাওয়াত করেন। কেউ দাওয়াত করলে দাওয়াত গ্রহণ করা উচিত যদি দাওয়াত গ্রহণ করার মতো সময়-সুযোগ থাকে এবং ওই দাওয়াতে গেলে শরিয়তের কোনো বিধান লঙ্ঘিত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে। নবিজি (সা.) মুসলমান ভাইয়ের দাওয়াত গ্রহণ করাকে তার একটি হক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন,

حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ رَدُّ السَّلَامِ وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ

একজন মুসলমানের অপর মুসলমানের ওপর পাঁচটি অধিকার রয়েছে; সালামের জওয়াব দেওয়া, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, জানাজায় অংশগ্রহণ করা, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচিদাতা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা। (সহিহ মুসলিম: ১৮৫)

Advertisement

সাহাবিরা দাওয়াত করলে নবিজি (সা.) সাধারণত দাওয়াতে যেতেন এবং খাওয়ার পর মেজবানের কল্যাণ ও বরকতের জন্য দোয়া করতেন। আমরা ইফতারের দাওয়াতে গেলে নবিজিকে (সা.) অনুসরণ করে এভাবে দোয়া করতে পারি। আমরা এখানে দুটি দোয়া উল্লেখ করছি: ১. কোনো সাহাবির বাড়িতে দাওয়াত খেলে বা ইফতার করলে নবিজি (সা.) দোয়া করতেন,

أَفْطَرَ عِنْدَكُمْ الصَّائِمُونَ وَأَكَلَ طَعَامَكُمْ الْأَبْرَارُ وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلَائِكَةُ

উচ্চারণ: আফতারা ইনদাকুমুস সাইমুন ওয়া আকালা তাআমাকুমুল আবরারু ওয়া সাল্লাত আলাইকুমুল মালাইকা।

অর্থ: রোজাদারগণ আপনাদের নিকট ইফতার করেছেন, নেককারগণ আপনাদের খাবার খেয়েছেন এবং ফেরেশতাগণ আপনাদের জন্য রহমতের দোয়া করেছেন।

Advertisement

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত একদিনি নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাদ ইবনে উবাদার (রা.) বাড়িতে গেলেন। সাদ (রা.) রুটি ও জয়তুন তেল আনলেন। তা খাওয়ার পর নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দোয়া করেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৫৪)

২. কোনো সাহাবির বাসায় দাওয়াত খেলে নবিজি অনেক সময় এ দোয়াটিও করতেন,

‏ اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِيمَا رَزَقْتَهُمْ وَاغْفِرْ لَهُمْ وَارْحَمْهُمْ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিক লাহুম ফিমা রাজাকতাহুম ওয়াগফির লাহুম ওয়ারহামহুম।

অর্থ: হে আল্লাহ! তাদের যে রিজিক দিয়েছ তাতে বরকত দান করুন, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তাদের প্রতি দয়া করুন।

আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন আমার বাবার কাছে এলেন। আমরা তার জন্য খাবার পরিবেশন করলে তিনি তা খেলেন। তারপর খেজুর আনা হলে তিনি তা খেতে থাকলেন এবং মধ্যমা ও তর্জনী একত্র করে খেজুরের বিচি ফেলে দিতে লাগলেন। তারপর পানীয় আনা হলে তিনি তা পান করলেন, তারপর পানপাত্র তার ডান পাশের ব্যক্তিকে দিলেন। বিদায় নেওয়ার সময় আমার বাবা তার সওয়ারীর লাগাম ধরে বললেন, আমাদের জন্য দোয়া করুন। তখন তিনি এ দোয়া করলেন। (সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭৬)

ওএফএফ/এএসএম