দেশজুড়ে

সামাজিক বিচারে ধর্ষণের শাস্তি ৪০ হাজার টাকা জরিমানা!

 

বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরীকে ধর্ষণের অপরাধে অভিযুক্তকে সামাজিক বিচারে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ধর্ষণের মতো অপরাধে বিচারের নামে এমন সমঝোতায় বিস্মিত হয়েছেন স্থানীয়রা।

Advertisement

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রোয়াংছড়ি খামতাং পাড়ার খিয়াং সম্প্রদায়ের সমাজপতিরা তাদের সম্প্রদায়ের এক মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে এ মূল্য নির্ধারণ করেন।

অভিযুক্ত মো. জামাল হোসেন (৩২) বরিশালের দশমিনা উপজেলার দক্ষিণ দাস পাড়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে।

আপসনামায় উল্লেখ করা হয়, ‘খামতাং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খিয়াং সম্প্রদায়ের এক কিশোরীকে ধর্ষণের অপচেষ্টা করার কারণে খিয়াং জাতির রীতিনীতি অনুযায়ী আসামি মো. জামাল হোসেনকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা ও জুতার মালা পরিয়ে পুরোগ্রাম সাতবার ঘোরানোর রায় ধার্য করা হয়।’

Advertisement

আপসনামায় ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করা হলেও অভিযুক্ত জসিমকে এই ঘটনায় স্থানীয়রা আটকের পর অভিযুক্ত নিজেই ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন।

বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও নারীনেত্রী ডনাই প্রু নেলী বলেন, ধর্ষকের কোনো জাত-ধর্ম নাই, কোনো ধর্ষক কারো সন্তান হতে পারে না, ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। কোনো কারবারি-হেডম্যান ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে পারে না। তাই হত্যা ও ধর্ষণসহ ফৌজদারি অপরাধের বিচার দেশের প্রচলিত আইনেই দ্রুত করার আহ্বান জানান তিনি।

৮ সদস্য বিশিষ্ট সামাজিক এই বিচার কমিটির সদস্য ও ভিডিপি কমান্ডার পাইগ্য খিয়াং বলেন, ধর্ষণের শিকার কিশোরীর মা ও ভাই মামলা করতে রাজি না হওয়ায় তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় রতন খিয়াং যেভাবে বিচার চেয়েছেন ঠিক সেভাবেই বিচার করা হয়েছে। বিচারে আসামি মো. জামাল হোসেনকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা ও জুতার মালা পরিয়ে ৭ বার পুরোগ্রাম ঘোরানোর রায় দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে রতন খিয়াংয়ের মোবাইল নম্বরে একাধিক বার ফোন করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

Advertisement

রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে কিন্তু ভিক্টিম ও তার আত্মীয়স্বজন মামলা করতে ইচ্ছুক নয়। পুলিশের পক্ষ থেকে তারপরও ভিক্টিম ও তার মা-বাবাকে বুঝিয়ে মামলা নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভিক্টিমকে ডাক্তারি পরীক্ষা করা সম্ভব না হলে ধর্ষণের আলামত বা মামলার কার্যকারিতা থাকে না। ভিক্টিম ও তার স্বজনরা মামলা না করলে আসামিকে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠানো হবে।

গত ১০ মার্চ সন্ধ্যায় বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে মানসিক ভারসাম্যহীন খেয়াং সম্প্রদায়ের এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় ১১ মার্চ সড়ক নির্মাণ শ্রমিক মো. জামাল হোসেনকে (৩২) আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করে স্থানীয়রা। পরে সামাজিক বিচারে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে অভিযুক্তকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে জুতার মালা পড়িয়ে ৭ বার গ্রামটি ঘোরানো হয়।

নয়ন চক্রবর্তী/এফএ/জেআইএম