চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন রিফাত বিন সাজ্জাদ (২৩)। স্থানীয়রা তাকে গণধোলাই দেন। এসময় তার মোবাইলে এক তরুণীকে বেঁধে রাখা ও নির্যাতনের ভিডিও দেখতে পান তারা। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অজ্ঞাতপরিচয় ওই তরুণীকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন তিনি।
Advertisement
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে সাজ্জাদ জানান, তার মাকে নিয়ে গালি দেওয়ায় প্রথমে ইট দিয়ে ওই তরুণীর মাথায় করেন। পরে গোপনাঙ্গ, স্তনসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাকু দিয়ে কেটে হত্যা করা হয়। তারপর মরদেহ ফেলে দেন রেললাইনে। তার আগে পরিচয় লুকাতে ইট দিয়ে মুখ থেঁতলে দেওয়া হয়।
পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার কিসমত রেলঘুন্টি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শনিবার (৮ মার্চ) ইজিবাইক চুরি করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক সাজ্জাদের মোবাইল ফোনে পাওয়া ভিডিওর সূত্র ধরেই বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
সোমবার (১০ মার্চ) দুপুরে পঞ্চগড় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সী।
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ধর্ষণ ও হত্যাকারী রিফাত বিন সাজ্জাদ পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাঝগ্রামের আকতার হোসেনের ছেলে। গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকা থেকে পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে ওই তরুণীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর আটোয়ারীর কিসমত স্টেশনে কৌশলে নামিয়ে পাশের এলাকায় তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গোপনাঙ্গ, স্তনসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান কেটে তাকে হত্যা করেন তিনি।
পরদিন আটোয়ারী উপজেলার কিসমত এলাকায় রেললাইনে ওই তরুণীর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়। খবর পেয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের ভুল্লি এলাকার একটি পরিবার তাদের মেয়ে মনে করে মরদেহ গ্রহণ করে দাফন সম্পন্ন করে।
পুলিশ আরও জানায়, শনিবার দিনগত রাতে আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর এলাকার তাহিরুল ইসলামের বাড়িতে ইজিবাইক চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন সাজ্জাদ। এসময় স্থানীয়রা তাকে উত্তম-মধ্যম দেন। এসময় তার মোবাইলে এক তরুণীকে বেঁধে রাখা ও নির্যাতনের ভিডিও দেখতে পান তারা। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি অজ্ঞাতপরিচয় ওই তরুণীকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে সাজ্জাদ জানান, তার মাকে নিয়ে গালি দেওয়ায় প্রথমে তাকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। পরে যৌনাঙ্গ, স্তনসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাকু দিয়ে কেটে হত্যা করা হয়। তারপর মরদেহ ফেলে দেন রেললাইনে।
Advertisement
তার এমন স্বীকারোক্তি পর স্থানীয়রা তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তার বিরুদ্ধে আটোয়ারী থানায় ধর্ষণের পর হত্যা ও চুরির দুটি মামলা হয়েছে। রোববার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সী বলেন, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার ওই তরুণীর এখনো সঠিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। আমরা তার পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। তবে তাকে নৃশংসভাবে হত্যার সঙ্গে জড়িত আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি দায় স্বীকার করেছেন।
আসামির স্বীকারোক্তির বরাতে এসপি আরও জানান, একাধিকবার ধর্ষণের পর ওই তরুণী বড় অঙ্কের টাকা দাবি করেন এবং তার মাকে নিয়ে গালিগালাজ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হত্যা করেন সাজ্জাদ।
সফিকুল আলম/এসআর/জেআইএম