নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে কিট সংকটে অন্তত পাঁচ মাস ধরে ডোপ টেস্টের (মাদক পরীক্ষা) কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে করে লাইন্সেস পেতে ভোগান্তি হচ্ছে গাড়ি চালকদের।
Advertisement
পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্তদেরও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। কারণ, সরকারি চাকরিতে যোগদান এবং গাড়িচালকদের নতুন লাইসেন্স ইস্যু, নবায়ন ও সংযোজন করতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়। আর ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি থেকে পেশাদার চালকের লাইন্সেস পেতে হলেও ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক। নেত্রকোনায় আধুনিক সদর হাসপাতালে এ পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় কিট শেষ হয়ে যাওয়ায় পাঁচ মাস ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেবাটি বন্ধ রেখেছে।
এজন্য জেলায় সরকারি চাকরি এবং চালকদের লাইন্সেস পেতে ডোপ টেস্ট করাতে বাইরের জেলার হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। এতে বাড়তি খরচের পাশাপাশি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদের। আবার যেসব চালকরা আর্থিকভাবে অসচ্ছল তারা বাইরের জেলা থেকে ডোপ টেস্ট করাতে পারছেন না।
Advertisement
হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, শুধু পেশাদার চালক বা সরকারি চাকরিপ্রার্থীরা নন, বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানেও এখন ডোপ টেস্টের সনদ লাগে। অনেক আসামিরও পরীক্ষা করাতে হয়। কিট শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ জন এসে ফিরে যাচ্ছেন। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নেত্রকোনা বিআরটিএতে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ৯ মার্চ পর্যন্ত ২ হাজার ২১২ জন নতুন লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের জন্য আবেদন করেন। তাদের মধ্যে পেশাদার চালক হিসেবে আবেদন করেন অন্তত ৫৬১ জন। তারা ডোপ টেস্টের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে গেলে কিট সংকটের কারণে করতে পারেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরে তাদের মধ্যে ৮৫ জন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে করিয়েছেন। এতে বাড়তি খরচের পাশাপাশি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
সদর উপজেলার আমতলা এলাকার রফিক মিয়া বলেন, দেশের বাইরে গিয়ে গাড়ি চালানোর জন্য আমি যুব উন্নয়ন থেকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিয়ে লাইন্সেসের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু কিট সংকটে ডোপ টেস্ট করাতে ময়মনসিংহে দুদিন যেতে হয়েছে।
Advertisement
নেত্রকোনা জেলা মোটরযান কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মো. বজলুর রহমান বলেন, আগে ৯০০ টাকা দিয়ে নেত্রকোনা হাসপাতালে ডোপ টেস্ট করানো যেত। কিন্তু এখন ময়মনসিংহ হাসপাতাল থেকে করাতে গেলে সিরিয়াল দেওয়া এবং রিপোর্টে দুদিন চলে যায়। রিপোর্টের ৯০০ টাকা ছাড়া যাওয়া-আসা আনুষঙ্গিক মিলে আরও দুই হাজার টাকা চলে যায়।
বিআরটিএ নেত্রকোনা কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক মো. রহুল আমীন বলেন, প্রতিদিনই এ বিষয়ে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। হাসপাতালে এখনো টেস্ট কিট আসেনি। এতে লাইন্সেস পেতে চালকদের ঝামেলা হচ্ছে।
জানতে চাইলে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু সাঈদ মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট থেকে কিট ক্রয়ের বরাদ্দ দেয়। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় চার-পাঁচ মাস ধরে ডোপ টেস্ট বন্ধ। এর আগে দু-এক মাস আমরা হাসপাতালের ফান্ড থেকে কিট কিনে এই সেবা চালু রেখেছিলাম। এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে বাইরে থেকে কেউ কিট কিনে এনে দিলে আমরা ৯০০ টাকা ফিস রেখে সেবা দিয়ে থাকি।
এইচ এম কামাল/জেডএইচ/এএসএম