আন্তর্জাতিক

অবশেষে নিজের পছন্দে চুল কাটার স্বাধীনতা পেলো শিক্ষার্থীরা

বহু বছরের বিতর্কের পর অবশেষে থাইল্যান্ডের শিক্ষার্থীরা নিজেদের ইচ্ছামতো চুলের স্টাইল বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা পেলো। গত বুধবার দেশটির সুপ্রিম অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কোর্ট থাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৫০ বছরের পুরোনো একটি নির্দেশনা বাতিল করেছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট চুলের ধরন বাধ্যতামূলক করেছিল।

Advertisement

১৯৭৫ সালে সামরিক শাসনের সময় জারি করা ওই নির্দেশনায় ছেলেদের জন্য ছোট চুল এবং মেয়েদের জন্য কান-সমান বব কাট বাধ্যতামূলক ছিল। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক স্কুলেই এসব নিয়ম শিথিল করা হয়েছিল, তবে কিছু প্রতিষ্ঠান পুরোনো নির্দেশনাকে অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার মতো শাস্তি দিতো।

আরও পড়ুন>>

ঘরে বসেই থাইল্যান্ডের ভিসা নিতে পারবেন বাংলাদেশিরা যা দেখতে হাজারও পর্যটক ছুটে যান থাইল্যান্ড থাইল্যান্ডে বন্যায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি

থাই আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, এই নির্দেশনা সংবিধান সুরক্ষিত ব্যক্তিগত স্বাধীনতার পরিপন্থি এবং বর্তমান সমাজের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

Advertisement

২০২০ সালে ২৩ জন সরকারি স্কুলশিক্ষার্থী এই নিয়মের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, ১৯৭৫ সালের নির্দেশনা অসাংবিধানিক এবং এটি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে।

অনেক দিন ধরেই শিক্ষার্থীরা এই নিয়ম শিথিলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল, এটি মানবিক মর্যাদা ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার লঙ্ঘন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন পন্থিন আদুলথানানুসাক, যিনি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের চোখে এটা অসম্ভব মনে হলেও আমরা কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম। যদি থাইল্যান্ডের ইতিহাসে কোনো শিক্ষার্থী প্রাপ্তবয়স্কদের দমনমূলক ক্ষমতার বিরুদ্ধে না দাঁড়াতো, তাহলে সেটাই আজীবন লজ্জার বিষয় হয়ে থাকতো।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে ২০২০ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চুলের ধরন শিথিল করে নতুন নিয়ম চালু করে। তবে তখনো কিছু বিধিনিষেধ ছিল—ছেলেদের চুল ঘাড় ছোঁয়া যাবে না এবং মেয়েদের দীর্ঘ চুল হলে তা বাধতে হবে।

Advertisement

২০২৩ সালে এই নিয়ম বাতিল করা হয় এবং তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ত্রিনুচ থিয়েনথং ঘোষণা করেন, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে চুলের ধরন নির্ধারিত হবে। তবুও, কিছু স্কুল ১৯৭৫ সালের আদেশ অনুসরণ করেই চলছিল।

থাইল্যান্ডে ঐতিহ্যগতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছোট চুলকে শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতীক হিসেবে দেখে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চুলে রং করাসহ বিভিন্ন স্টাইল নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা দেখা গেছে।

দেশটির কিছু অঞ্চলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা শিক্ষার্থীদের চুল ইচ্ছামতো কেটে দেন। এমনকি সকালে অ্যাসেম্বলির সময়ও এ ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়। শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষ থেকে এমন আচরণ বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হলেও এসব ঘটনা ঘটছিলই।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ফের ঘোষণা দেয়, শিক্ষার্থীদের চুলের দৈর্ঘ্য নিয়ে আর কোনো বিধিনিষেধ নেই। মন্ত্রণালয় জানায়, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈচিত্র্য ও সমতা নিশ্চিত করতে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বুধবারের আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষা করার ক্ষেত্রে স্কুলগুলোর চুলের নিয়ম পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

তবে আন্দোলনকারী পন্থিন মনে করেন, পুরোনো নির্দেশনা বাতিল হলেও কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব নিয়ম চালু রাখতে পারে। বিশেষ করে রক্ষণশীল মনোভাবাপন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো বিধিনিষেধ জারি থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, আমি আনন্দিত যে, আমাদের দীর্ঘদিনের লড়াই স্বীকৃতি পেলো এবং বাস্তব পরিবর্তন এলো। আশা করি, এই রায় স্কুলগুলোতে মৌলিক মানবাধিকার সম্পর্কে নতুন মানদণ্ড তৈরি করবে।

সূত্র: বিবিসিকেএএ/