ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও নারী নিপীড়নের ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ’ গড়ে তোলা হয়েছে। শনিবার (৮ মার্চ) দিনগত রাতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে এ মঞ্চের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়।
Advertisement
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাবি মুখপাত্র রাফিয়া রেহনুমা হৃদি এ ঘোষণা দেন। শুরুতে তারা দুটি দাবি জানিয়েছেন। সেগুলো হলো—ধর্ষণের বিচার নিশ্চিতে দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে এবং ধর্ষকদের প্রকাশ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।
নতুন গঠিত ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ রোববার (৯ মার্চ) কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী—রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আবাসিক হল থেকে মশাল মিছিল বের করা হবে। মিছিল শেষে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গণজমায়েত হবে। সেখান থেকে ধর্ষকের প্রকাশ্যে শাস্তি ও দ্রুত বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানানো হবে।
ধর্ষকে বিচারের মুখোমুখি করতে আলটিমেটামএদিকে, মাগুরায় আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার দেখিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে আলটিমেটাম দিয়েছেন ঢাবির ছাত্রীরা। এসময়ের মধ্যে দাবি মেনে না নেওয়া হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি করবেন তারা।
Advertisement
শনিবার দিনগত রাত সোয়া ২টার দিকে ছাত্রীদের পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা এ আলটিমেটাম দেন। এরপর তারা দুই ঘণ্টার বেশি সময় বিক্ষোভ সমাবেশ করে রাজু ভাস্কর্য ছেড়ে আবাসিক হলে ফিরে যান।
উমামা ফাতেমা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নারীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। পুলিশ-সেনাবাহিনীসহ কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। মাগুরায় আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের মতো অমানবিক ও নৃশংস ঘটনার পরও এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধর্ষককে আদালতে উপস্থাপন করেনি। বাধ্য হয়ে আমরা মধ্যরাতে রাস্তায় নেমে এসেছি।
তিনি বলেন, আমাদের স্পষ্ট ঘোষণা—মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকসহ জড়িতদের অবিলম্বে আদালতে হাজির করতে হবে। আমরা ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিচ্ছি। যদি সরকার ধর্ষককে বিচারের মুখোমুখি করতে না পারে, তাহলে আগামীকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টায় আমরা আবারও এ রাজু ভাস্কর্যে আসবো, বিক্ষোভ করবো; প্রতিবাদ জানাবো। আমাদের এ আন্দোলন চলবে।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাবির মুখ্য সংগঠক হাসিবুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার পরও দেশের পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে, হচ্ছে। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অফিসে বসে বসে শুধু বেতন নিচ্ছেন। দেশের নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা আজকের এ সমাবেশ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি।
Advertisement
রাবেয়া আক্তার নামে এক ছাত্রী বলেন, নারীরা আজ একটুও নিরাপদ নয়। আমি আজকে বের হয়েছি, রাষ্ট্র কি আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে? আমাদের দাবি—আমরা যাতে নির্ভয়ে রাস্তায় চলাচল করতে পারি, সেই নিশ্চয়তা রাষ্ট্রকে দিতে হবে।
এর আগে শনিবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে বেরিয়ে আসেন হলটির আবাসিক ছাত্রীরা। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন হলের ছাত্রীরা।
মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে রাত ১টার দিকে তারা সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে ছাত্রীদের এ বিক্ষোভে বিভিন্ন হল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল ছাত্ররাও অংশ নেন।
শিক্ষার্থীরা ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘ধর্ষকের গদিতে আগুন জ্বালো একসঙ্গে’, ‘এক দুই তিন চার, জাহাঙ্গীর গদি ছাড়’, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাই’, ‘জাহাঙ্গীর করে কী, খায় দায় ঘুমায় নাকি’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এএএইচ/এমএএইচ/