জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে রাখতে সরকারের কাছে জোরালো অবস্থান তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
এনআইডি, জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ নিবন্ধন, ইউনিক আইডিসহ নাগরিক সেবা এক জায়গা থেকে দিতে সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন) অধ্যাদেশের খসড়া করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিষয়টি জানার পর গতকাল বুধবার সভা করেছে ইসির কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। বৃহস্পতিবার অ্যাসেসিয়েশনের পক্ষ থেকে সিইসির কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
এর আগে এনআইডি সেবা ইসির অধীনে বহাল রাখার দাবিতে কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সিইসির কক্ষের সামনে অবস্থান নেন। সেখান থেকে অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও ইসির উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সিইসির কক্ষে গিয়ে তার হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন।
Advertisement
আরও পড়ুন
এনআইডি সেবা অবশ্যই ইসির অধীনে থাকা উচিত: সিইসি জুনের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্ভব নয়: সিইসি স্থানীয় সরকার নির্বাচন জনসেবার সুযোগ তৈরি করবে: প্রধান উপদেষ্টাপরে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে সরিয়ে নেওয়া সরকারি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে বলে আমি শুনিনি। আলাপ-আলোচনা হয়েছে৷ কীভাবে হতে পারে সে আলোচনা হয়েছে। আমরা লিখিতভাবে সরকারকে জানাবো যে, এটি ইসির অধীনে থাকা উচিত। সরকারকে সেটি জরুরি ভিত্তিতে জানাবো।
এনআইডি সেবা ইসির অধীনে না রাখার পেছনে কোনো দুরভিসন্ধি আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, কোনো দুরভিসন্ধি আছে কি না, আমি জানি না৷ সরকার হয়তো মনে করছে একটা জায়গা থেকে সার্ভিসটা দেবে। নির্বাচন কমিশনের অধীনেই সেটা হবে এমনটা শুনেছিলাম আমি।
ইসির কাছ থেকে এনআইডি সেবা চলে গেলে ভোটার তালিকায় কোনো সমস্যা হবে কি না- জানতে চাইলে এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, হবে। এনআইডিটা ভোটার তালিকার বাই প্রোডাক্ট। ১৭ বছর ধরে শ্রম, ঘাম দিয়েছে এখানকার লোকজন। এরাই তো এ পর্যন্ত এনেছে। সার্বিক বিষয়গুলো নিশ্চয় সরকার বিবেচনায় নেবে বলে আমি বিশ্বাস করি। হয়তো কমিউনিকেশনের একটা গ্যাপ থাকতে পারে। আমাদের লিখিত মতামত পাওয়ার পর নিশ্চয় গ্যাপ থাকবে না আশা করি।
Advertisement
তিনি বলেন, সরকার তো অনেক উপরের ব্যাপার। আমরা সাংবিধানিক বডি। আইন যদি সরকার পরিবর্তন করে ফেলে আমাদের আইন মানতে হয়। কিন্তু আইন বানানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা আমাদের মতামত জোরালোভাবে তুলে ধরবো। যেখানে যেখানে মতামত দেওয়া দরকার, দেবো। আমাদের পুরো কমিশন এটা চায়।
কমিশন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগ্রহণকারী নই, এটি বুঝতে হবে। আমি নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিত্ব করি। আমি ইসির পক্ষে কথা বলতে পারি, ইসির পক্ষে সরকারের কাছে অবস্থান তৈরি করতে পারি। এটুকু আমি জোরালোভাবেই করবো।
এসময় নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, এনআইডি কাযক্রম যেন ইসি থেকে না যায় সে বিষয়ে কমিশন সব উদ্যোগ নেবে। এনআইডি যদি ইসি থেকে অন্যত্র চলে যায় তাহলে নির্বাচন হুমকির মুখে পড়বে। আমরা আমাদের উদ্বেগ জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। আগের কমিশন আমাদের সঙ্গে ছিল না। বর্তমান কমিশন আমাদের সঙ্গে থাকবে। স্যারেরাও চান, এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকুক।
আরও পড়ুন
ইসির অধীনে থাকবে না এনআইডি, হচ্ছে সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হতে দেবে না বিএনপি বিএনপি-জামায়াতের দ্বন্দ্ব বাড়ছে কেন?বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, এনআইডি নিয়ে একেক সময় একেক রকম সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি হয়। তারা এনআইডি নিয়ে টানাহেঁচড়া করে। এর আগে একাধিকবার চেষ্টা হয়েছিল, মাঝে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। এখন আবার নতুন কমিশন তৈরি করে তাতে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা মনে করি, কোনো না কোনো উদ্দেশে এগুলো করা হচ্ছে। আমরা অ্যাসোসিয়েশেনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।
গত ১৭-১৮ বছর ধরে এনআইডি ইসিতে থাকায় কোনো সমস্যা হয়নি উল্লেখ করে ইসির এ কর্মকর্তা বলেন, আজকে এমন কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি যার কারণে এনআইডি ইসি থেকে অন্য কোথাও নিতে হবে। আমরা কমিশনকে জানিয়েছি, সময় দিয়েছি। আগামী বুধবারের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রত্যাশা করছি। তা না হলে ১৩ মার্চ ইসি সচিবালয়সহ সারাদেশে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১১ থেকে ১টা পর্যন্ত মানববন্ধন করবো। তারপরও দাবি পূরণ না হলে কর্মবিরতিসহ আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবো।
এমওএস/এমকেআর/জিকেএস