প্রকাশ্যে ধূমপান নিন্দনীয় বটে। লালমাটিয়ায় টং দোকানে ধূমপান করার দায়ে নারী হেনস্তার ঘটনা না ঘটলে, আমরা হয়তো জানতামই না যে প্রকাশ্যে ধূমপান, মূত্রত্যাগ একধরনের অপরাধ। তবে আজকের লেখার বিষয় এটি নয়, সম্পূর্ণ অন্য একটি প্রসঙ্গ। বলতে চাইছি সমাজে নারীর প্রতি এই মরাল পুলিশিং আর কতবার, কতভাবে চলবে এবং রাষ্ট্র কি এই মরাল পুলিশিংকে সাপোর্ট করতেই থাকবে?
Advertisement
দুদিন আগে মব জাস্টিসের নামে লালমাটিয়া এলাকায় টং দোকানে যে দুটি মেয়েকে হয়রানি করা হলো, এর কোনো বিচার হতে দেখছি না। উপরন্তু আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রকাশ্যে ধূমপান অপরাধ, তাই ’কেহ প্রকাশ্যে ধূমপান করিবেন না’ বলে বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছেন। যে লোকগুলো মেয়ে দুজনকে হেনস্তা করলো, তাদের নিয়ে ওনার বা সরকারের পক্ষ কোনো বক্তব্য নেই। সরকার যখন কোনো ঘটনা প্রসঙ্গে নিশ্চুপ থাকে, তখন বুঝতে হবে এই ঘটনায় সরকারের সায় আছে। তা না হলে তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধীদের, বিশেষ করে হোতাকে ধরার উদ্যোগ নেয়া হতো।
রিংকু একজন বয়স্ক মানুষ হয়ে রাস্তার পাশে বসে থাকা কন্যাসম দুটি মেয়ের দিকে চোখ দিল কেন? আর চোখ দেয়ার পর তাদের কর্মকান্ডের উপর হস্তক্ষেপ করলো কেন? কেন জনতাকে উস্কে দিলো মেয়ে দুটির উপর হামলা করতে? এটা কি কোনো অপরাধ নয়? নারীর পরণের পোশাক টেনে ছিঁড়ে ফেলা আইনের দৃষ্টিতে শ্লীলতাহানি। এর বিচার করবে কে?
দেশের আইনে কোথাও কি বলা আছে নারীরা ধূমপান করতে পারবে না? ধূমপান নিরোধক আইনে জনসম্মুখে ধূমপান করা দন্ডনীয় অপরাধ। এ যাবতকালে অসংখ্য পুরুষ প্রকাশ্যে ধূমপান করেছেন, পাশে বসে অন্যের মুখের উপর ধোঁয়া ছেড়েছেন, বাসে-ট্রেনে সিগারেট খেয়েছেন ও খাচ্ছেন কিন্তু কখনো কি তাকে বলা হয়েছে এটা আইন বিরোধী। কেন এখন পর্যন্ত রিংকু নামক লোকটা গরাদের বাইরেই ঘুরে বেড়াচ্ছে?
Advertisement
দেশের আইনে কোথাও কি বলা আছে নারীরা ধূমপান করতে পারবে না? ধূমপান নিরোধক আইনে জনসম্মুখে ধূমপান করা দন্ডনীয় অপরাধ। এ যাবতকালে অসংখ্য পুরুষ প্রকাশ্যে ধূমপান করেছেন, পাশে বসে অন্যের মুখের উপর ধোঁয়া ছেড়েছেন, বাসে-ট্রেনে সিগারেট খেয়েছেন ও খাচ্ছেন কিন্তু কখনো কি তাকে বলা হয়েছে এটা আইন বিরোধী? এভাবে প্রকাশ্যে সিগারেট খাওয়ার অপরাধে কোনো পুরুষকে কি ধিক্কার জানিয়ে শাসন করা হয়েছে? অথচ আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে ভারতে ট্রেনে বিশাখাপত্তানাম যাওয়ার সময় আমাদের এক বন্ধু ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে ধূমপান করছিলেন। হঠাৎ দুজন যাত্রী এসে বললেন ট্রেনে সিগারেট খাওয়া নিষেধ। এমনকি দরজায় দাঁড়িয়েও খেতে পারবেন না। তাহলে আমরা অভিযোগ করতে বাধ্য হবো। এটা পাবলিক প্লেস। এটি আইন দ্বারা সংরক্ষিত এলাকা। কিন্তু আমাদের দেশে এমনটা দেখিনি।
পুরুষ হরেদরে প্রকাশ্যে ধূমপান করলে নারী পারবেন না কেন? আইনে কি কোনো ভিন্ন নিয়ম আছে মেয়েদের জন্য? আর ধূমপান করছে বলে কেউ কি নারীর পোশাক ধরে টানাহেঁচড়া ও মারপিট করে রক্তাক্ত করতে পারে? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে সিগারেট খাওয়ার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলেন ওই মেয়ে দুটি। আর পার পেয়ে গেল তাদের নির্যাতনকারী ব্যক্তিরা। উপদেষ্টা অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে মব জাস্টিসকে জাস্টিফাই করেছেন। কিন্তু কেন, কাদের ভয়ে?
এর আগেও দিনাজপুরের হিলিতে নারী ফুটবল ম্যাচ খেলতে দেয়া হলো না স্থানীয় কিছু লোকজনের দাবির মুখে। এ ছাড়া জয়পুরহাটে তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নারীদের একটি প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও টিনের বেড়াসহ প্যান্ডেল ও মঞ্চ তছনছ করে স্থানীয় কয়েকজন। একইদিন বিকেলে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে কওমি উদ্যোক্তাদের আয়োজনে এক সম্মেলনে নারী সাংবাদিককে প্রবেশে বাধা দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এক্ষেত্রে নারী অবমাননার ও নারীর অধিকার ক্ষুন্ন করার কারণ কী?
গত প্রায় ১০/১২ বছর ধরে নারী বিদ্বেষ লক্ষ্য করছি আমরা। নারীকে পিটানো, গালাগালি করা, চুল ধরে টানা, নারীর সাজ পোশাক নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করা, এমনকি নারীকে বিবস্ত্র করে সামাজিক মাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনা বারবার ঘটছে। এসব নিয়ে সমাজে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ছিল এবং ক্রমশ তা বাড়ছে।
Advertisement
’চরিত্রহীন ও বেআব্রু নারীকে শায়েস্তা করা’ প্রসঙ্গে একটি ঘটনার কথা মনে পড়লো। গর্ত খুঁড়ে, হাত পা বেঁধে একটি মেয়েকে সেই গর্তে নামানো হলো, পরণে তার সাদা কাপড়। গর্তে মেয়েটিকে কোমর পর্যন্ত পুঁতে চারপাশ মাটি দিয়ে ভরাট করা হলো। এরপর দূর থেকে পাথর ছোঁড়া হলো তাকে লক্ষ্য করে। প্রথম পাথরটি ছুঁড়ে সুরাইয়া নামের মেয়েটির বাবা। তারপর এক এক করে সবাই। এমনকি সুরাইয়ার দুই নাবালক ছেলেকেও পাথর ছুঁড়তে বাধ্য করা হলো মায়ের দিকে। ক্রমশ সুরাইয়ার দেহ লুটিয়ে পড়ে। চারিদিক ছিটকে পড়লো রক্ত। মাথা ফেটে মগজ বেরিয়ে এলো। শেষ নিঃশ্বাস ফেলা পর্যন্ত সবাই অপেক্ষা করলো এবং ইট মারতেই থাকলো।
ইরানের একটি ছোট গ্রামের গৃহবধূ সুরাইয়াকে ব্যভিচারের দায়ে এভাবেই হত্যা করা হয়েছিল। তার স্বামী ১৪ বছরের একটি শিশুকে দ্বিতীয় বিয়ে করবে বলে সুরাইয়ার বিরুদ্ধে ব্যভিচারের মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল। দেশের নিয়ম অনুযায়ী সুরাইয়াকে এভাবেই মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল। ইরানে সুরাইয়াকে দেয়া শাস্তির উপর ভিত্তি করে "দ্য স্টোনিং অফ সুরাইয়া এম" নামে ২০০৮ সালে একটি সিনেমা হয়। এর প্রায় ১৮ বছর আগে এই কষ্টদায়ক ঘটনার উপর বই লিখেছিলেন একজন ইরানি লেখক।
যেকোন তুচ্ছ অপরাধে ইরানে নারীকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার হার অনেক বেশি। সাথে আছে অনার কিলিং ও সতীত্বের সার্টিফিকেট গ্রহণ। পরিবার ও সমাজ নারীকে অন্তরীণ করে রাখে এবং সময়ে সময়ে শাস্তি দেয়। যেমনটা দিয়েছিল মাশা আমিনকে। মাশা যদি মারা না যেতেন, তাহলে হয়তো এভাবেই চলতো সবকিছু। ইরানের প্রসঙ্গ টেনে আনার কারণ হচ্ছে বাংলাদেশেও নারীকে এতোটাই মানসিক ও শারীরিক নিপীড়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয় যে, নারী ট্রমাটাইজড হয়, লজ্জিত হয়, পথ হারিয়ে ফেলে, স্বাধীনতা খর্ব হয় এবং এক পর্যায়ে সুইসাইডাল হয়ে পড়েন। নির্যাতিত হয়ে দেশে অসংখ্য নারী মারা যান। এগুলোও পরোক্ষ অনার কিলিং।
২০১২ সালে এক প্রোগ্রামে ব্যাংকক গিয়ে দেখা হয়েছিল ইরানি কমিউনিকেশন স্পেশালিষ্ট জাহরার সাথে। ওর পরণে ছিল স্কার্ট টপস, হাইহিল। ব্রাউন কালার করা কোঁকড়া চুলে ওকে অপূর্ব লাগছিল। ইরানি মেয়ে হিসেবে ভেবেছিলাম বোরকাধারী হবে। কিন্তু না, ও পুরোই বিপরীত ধরনের ছিল। বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে বলতে জাহরাকে জিজ্ঞাসা করলাম সে ইরানের মেয়ে হয়েও এরকম পোশাক পরছে কিভাবে? জাহরা বলেছিল, এইধরনের পোশাক আমাদের পছন্দের পোশাক হলেও দেশে মোল্লাতন্ত্র আসার পর আমাদের উপরে বোরকা লেবাস চাপিয়ে দিয়েছে। জাহরা বলেছিল জোর করে বিধিনিষেধ পালন করানো যায় না মানুষকে?
জাহরার কথা সত্যে প্রমাণিত হয়েছিল ২০২২ তে এসে। মাশা আমিনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে গড়ে ওঠা বিক্ষোভ প্রতিবাদ, দেশটিকে বহু বছরের মধ্যে সেবারই মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল। বাংলাদেশে যারা মরাল পুলিশিং এর পক্ষে, তাদের অনেককেই দেখেছি ইরানে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় মাশা আমিনের মৃত্যুতে আনন্দ প্রকাশ করছে। এও একধরনের বিকৃতি এবং অপরাধ। আমরা যদি এখন আমাদের সমাজের দিকে চোখ রাখি, দেখবো সেখানেও নারী বিদ্বেষ চরম আকার ধারণ করছে। দেশের নানাধরনের সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে একটি গোষ্ঠী শুধু নারীর চলাফেরা ও পোশাককে দায়ী করে যাচ্ছে। এই গোষ্ঠী মনে করে নারীকে দমিয়ে রাখতে পারলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
নারীর প্রতি বিদ্বেষ শুধু আজকের নয়। বিগত সরকারের এক সাংসদ বলে বসলো, "অবশ্যই ধর্ষণের সঙ্গে টি-শার্ট পরে রাস্তায় বের হওয়ার সম্পর্ক আছে। দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে এবং এর জন্যে দায়ী নারীবাদীরা।” যখন একজন সাংসদ নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর মন্তব্য করতে পারে, সেখানে দেশের সাধারণ মানুষ নারীর বিরুদ্ধে কতটা অসম্মানজজক কথা বলতে ও আচরণ করতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
এই সংসদ সদস্যের মতো একইধরনের মন্তব্য করেছিলেন হাইকোর্ট। পোশাকের জন্য নরসিংদী রেলস্টেশনে তরুণীকে হেনস্তার অভিযোগে করা মামলায় আসামির জামিন আবেদনের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট প্রশ্ন রেখেছেন, সভ্য দেশে এমন পোশাক পরে রেলস্টেশনে যাওয়া যায় কি না? আদালত বলেছেন,'গুলশান-বনানীর মতো এলাকায়ও কোনো মেয়ে এ ধরনের পোশাক পরে রাস্তায় বের হয় না।' ২০২২ সালে উচ্চ আদালত যে মন্তব্য করেছেন, তা অনেককেই দুঃখিত ও বিস্মিত করেছে।
'হাইকোর্ট' অবশ্য যে কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে পারেন তবে সেটা রায়ে উল্লেখ্য না থাকলে কার্যকরী হবে না বা আদেশ বলে গণ্য হবে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে হাইকোর্টের এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে যেকোন সময়ে, যেকোন নারী, যে কারো হাতে হেনস্তার শিকার হতে পারেন। মহিলা পরিষদ মন্তব্য করেছিল ”নারীর পোশাক নিয়ে উচ্চ আদালতের একজন বিচারপতির এই পর্যবেক্ষণ জনপরিসরে নারীর স্বাধীন চলাচল ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে।”
যেহেতু আমাদের সমাজের শিক্ষিত, অশিক্ষিত ও নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ মনেকরে, যে নারী স্বাধীনভাবে চলাফেরা করেন, তারা ’ভালো মেয়ে’ নয়। এরা ’মন্দ মেয়ে’। এই ‘মন্দ মেয়ে’র মতো আচরণ সমাজে অনাকাঙ্খিত, কারণ সেটা অন্য ছেলে-মেয়েদের নষ্ট করে ফেলবে। তাই যে নারী ‘মন্দ মেয়ে’র মতো আচরণ করে, তাদের সেটা থেকে বিরত রাখার জন্য হেয় করা, মারধর করা, মন্দ বলা ও তাদের প্রতি অপমানজনক আচরণ করা সমাজের জন্য উপকারী। এইসব বিশ্রী ধারণা থেকেই রিংকু ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা দুই নারীকে অসম্মান ও শ্লীলতাহানি করেছে। বাংলাদেশে বাড়ছে গোষ্ঠীগত ম্যুরাল পুলিশিং। এদের অপতৎপরতা দেখলে মনে হয় এরাও ”বেআব্রু নারী শিকারের সন্ধানে” যাচ্ছে। শুধু পোশাকের ভিত্তিতে নারীকে 'ভাল মেয়ে' বা 'মন্দ মেয়ে'র তকমা এঁটে দেয়া প্রবণতা আর কতদিন চলবে?
মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নারী-পুরুষ যদি এখুনি একত্রিত না হতে পারেন, আওয়াজ তুলতে না পারেন নারী বিদ্বেষের বিরুদ্ধে, নুজহাতের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে একাত্ম হতে না পারেন, রিংকুর মতো অভিযুক্ত আসামীকে আটক করাতে না পারেন, নুজহাতের ঘটনার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ না করেন- তাহলে ভবিষ্যতে আরও অনেক নারী ঘরে-বাইরে একইধরনের নির্যাতনের শিকার হবেন। রিংকু কোনো একক অপরাধী নয়, ঘুনপোকার মতো এধরণের মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
এ প্রসঙ্গে বলতে চাই নারী কী পোশাক পরবেন, কী খাবেন, কিভাবে চলবেন তা তাদের নিজেদের পছন্দের বিষয়। এই অধিকার সংবিধানের মাধ্যমে সুরক্ষিত। পোশাক ও চলাফেরাকে কেন্দ্র করে নারীর প্রতি হয়রানি বন্ধ হোক। মরাল পুলিশিং যারা করে, তাদের লক্ষ্য একটাই, সেটা হচ্ছে নারীকে লাঞ্ছনা করা। এরা ধর্ম, উৎসব, রাজনীতিকে আশ্রয় করে নারীকে হেনস্তা করার উপায় খুঁজে বের করে।
এই ঢাকা শহরে টিএসসি প্রাঙ্গণে বহুবছর আগে নববর্ষ উদযাপনের রাতে যখন বাঁধনকে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল, তখন অনেকেই বাঁধনকে দায়ী করেছিল। এ যাবৎকালে দেশে যতোবার নারী নিগৃহীত, নির্যাতিত ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে, ততোবার সমাজ নারীকেই দায়ী করেছে। মেয়েরা স্বর উঁচু করে যখন ধর্ষণ বিরোধী মিছিলে স্লোগান দেয়, যখন রাত জেগে গণজাগরণ মঞ্চ কাঁপিয়ে স্লোগান দিয়েছে যখন ২৪ এর আন্দোলনে পথে নেমেছে, তখন এইসব মানুষকেই বলতে শুনেছি মেয়েদের কি এভাবে রাস্তায় নেমে গলা বাড়ানো কি ধর্মসম্মত?
তাহলে হিজাব পরা নিয়ে ভারতের কর্ণাটকের মুসকানের প্রতিবাদী ”আল্লাহু আকবার” স্লোগানকে এই মানসিকতার লোকগুলি কী চোখে দেখেছে? কম বয়েসি এই মেয়েটা স্কুটি থেকে নেমে কতগুলো উন্মত্ত ছেলের সামনে গিয়ে চিৎকার করে, হাত উঁচু করে বলেছিল - "আল্লাহু আকবার।" মুসকান এই ধ্বনির মাধ্যমে শক্তি খুঁজে পেয়েছিল তার বিশ্বাসের পক্ষে। মুসকানের এই ভিডিও অনেক শেয়ার হয়েছে। ঘাড় উঁচু করে, হাত উপরে তুলে, কোনরকম ভয় না পাওয়ার এই শক্তিকে অনেকেই প্রশংসা করেছেন, পোস্টার করেছেন ও কবিতা লিখেছেন।
অথচ এই মেয়েটিকেও ফেসবুকে কুরুচিকর মন্তব্য করতে ছাড়েনি সেই দানবেরা, যারা পুরুষ হয়ে দেখেছে মেয়েটির বুক, পিঠ, কোমড়। চোখে পড়েনি তার সাহসিকতা ও বিপ্লব। বাংলাদেশের এক বদমায়েশ ফেসবুকে মন্তব্য করেছে বোনটির প্রতিবাদের ভিডিওটি দেয়া ঠিক হয়নি। এতে বাতাসে তার বুকের কাপড় সরে গেছে। আর এই পোষ্টে লাইক দিয়েছে আরো অসংখ্য শয়তান।
শাপলা চত্বরে ২০১৩ হেফাজত যখন নাদিয়া ছাড়াও ৩ জন নারী সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছিলো, তখন এদেশের অনেকেই মন্তব্য করেছিল হেফাজতীরা ধর্ম নিয়ে কাজ করে, তাদের এসাইনমেন্ট করতে মেয়েদের পাঠানোর দরকার কী ছিল? মুসকান বলেছিলেন, ”আমি হিজাব পরার অধিকার রক্ষার এই লড়াই চালিয়ে যাবো।” আমরাও আশা করবো, বাংলাদেশে যখন নারীর ধর্ম, পোশাক ও অধিকার নিয়ে কুরুচিকর কথা বলা হবে মাইকে, পরিবারে ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, তখন প্রতিবাদ হবে চারিদিক থেকে।
৪ মার্চ ২০২৫
লেখক: যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখক।
এইচআর/এমএস