দেশজুড়ে

স্বামীর জন্মদিনে কেক কাটার পরদিন নদীতে মিললো স্ত্রীর মরদেহ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে রাতে স্বজনদের নিয়ে স্বামীর জন্মদিনের কেক কাটার পরদিন নদী থেকে আঞ্জুমান মায়ার (১৬) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (১ মার্চ) সকালে পদ্মা নদীর উপজেলার কালোয়া এলাকা থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

আঞ্জুমান মায়া ওই এলাকার আজিজ শেখের ছেলে আসিফ শেখের (১৮) স্ত্রী। তিনি কুষ্টিয়া সদরের ত্রিমোহনী বারখাদা এলাকার আজিম উদ্দিনের মেয়ে। আসিফ কয়া মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র ও একটি বেসরকারি কোম্পানির খাদ্য পরিবেশক। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ভাষ্য, তার উপস্বর্গজনিত রোগ ছিল। উপস্বর্গ রাতে ঘর থেকে বের করে নিয়ে নদীতে ফেলে মারছে। আর বাবা বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, তিন লাখ টাকা চেয়ে না পেয়ে আঞ্জুমানকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করেছে স্বামী।

স্বজন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রাঁধানগর এলাকায় আঞ্জুমানের নানার বাড়ি। সাত মাস আগে নানাবাড়িতে বেড়াতে এসে আসিফের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ সম্পর্কের প্রায় দুই মাস পরে ঘর ছেড়ে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। সপ্তাহখানেক পর বউ নিয়ে নিজ বাড়িতে ওঠেন আসিফ। পরে দুই পরিবার মিলেমিশে পুনরায় তাদের সামাজিকভাবে বিয়ে দেন। এরপর বেশ ভালই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন।

শুক্রবার ছিল আসিফের জন্মদিন। বাড়িতে ছিল বন্ধু ও স্বজনদের আনাগোনা। বিকেলে আঞ্জুমান তার স্বামীকে নিয়ে বাজার থেকে কেক কিনেন। রাত ৮টার দিকে স্বামী ও শাশুড়িকে নিয়ে ধুমধাম করে কেক কাটেন। রাতে স্বজনদের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া শেষে রাত ১০টার দিকে ঘুমিয়ে পড়েন স্বামী। আর তখনও আঞ্জুমান স্মার্টফোনে ব্যস্ত ছিলেন।

Advertisement

এরপর রাত ১টার দিকে আসিফ জেগে দেখেন তার স্ত্রী ঘরে নেই। ঘরের দরজা খোলা। সে সময় তিনি স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে রাতভর সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও স্ত্রীকে পাননি। পরে শনিবার সকাল ৬টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ মিটার দুরে পদ্মা নদীতে ভাসমান মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা।

আঞ্জুমানের শাশুড়ি ফেরদৌসি খাতুন বলেন, প্রেম করে বিয়ে করলেও সংসারে কোনো অশান্তি ছিল না। শুক্রবার রাতেও সবাই মিলেমিশে জন্মদিন পালন করা হলো। সকালে এক সঙ্গে রাতে খেয়েছিলাম। পরে রাত ১টার দিকে ছেলের কাছ থেকে শুনি বউ ঘরে নেই।

আসিফ শেখ বলেন, সংসার খুব ভাল চলছিল। রাতে ধুমধাম করে আমার জন্মদিন পালন করি। খেয়ে দেয়ে রাত ১০টার দিক শুয়ে পড়ি আমি। তখনও মায়া ফোন চালাচ্ছিল। এরপর রাত ১টার দিকে জেগে দেখি মায়া নেই। রাতে খোঁজাখুঁজি করে না পেলেও সকালে নদীতে মরদেহ পেয়েছি।

কয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, রাতে নিখোঁজ ছিল ওই গৃহবধূ। সকালে নদীতে স্থানীয়রা দেখতে পান মাছধরা জালের সঙ্গে আটকে আছেন।

Advertisement

মেয়ে হারানোর শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আঞ্জুমানের মা পারভিন খাতুন। এ সময় বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, আসিফ আমার মেয়েকে ছলাকলা করে বিয়ে করেছে। তিনদিন আগে ব্যবসা করার জন্য তিন লাখ টাকা চেয়েছিল। টাকা না পেয়ে মেয়েকে নদীতে ডুবিয়ে হত্যা করেছে। আমার মেয়ের কোনো উপস্বর্গ ছিলো না। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান শেখ বলেন, খবর পেয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে নৌ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নৌপুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।

আল-মামুন সাগর/আরএইচ/এমএস