জাতীয়

সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি

সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। চারদিক থেকে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটপাট, ধর্ষণ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড- ইত্যাদির খবর আসছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন সুজনের নেতারা।

Advertisement

‘অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং সংস্কারের মধ্যদিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ’-এর দাবিতে শনিবার (১ মার্চ) রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

মানববন্ধনে সুজন সম্পাদক ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী মুসবাহ আলীম, সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন, সুজন ঢাকা জেলা কমিটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট রাশিদা আক্তার শেলী, সুজন ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি ক্যামেলিয়া চৌধুরী, সুজন ঢাকা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুল হক, সুজন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুবাইরুল হক নাহিদ, ঢাকা মহানগর কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম, সুজন ঢাকা জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক কানিজ ফাতেমা, সুজন কেরানীগঞ্জ উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি কাউসার আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে সুজনের নেতারা বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। চারদিক থেকে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটপাট, ধর্ষণ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের খবর আসছে। ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চলা অবস্থাতেও সৃষ্ট অরাজকতা নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

Advertisement

বরং দৃষ্টিভঙ্গিগত সীমাবদ্ধতার কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে এবং নিরপরাধ মানুষকে গ্রেফতার ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। অসহনীয় এ অবস্থা ও অরাজকতা থেকে আমরা মুক্তি চাই। একই সঙ্গে সংস্কারের মধ্যদিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’

সুজন সম্পাদক ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ করে জনকল্যাণমুখী-আদর্শভিত্তিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনার এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে, যাতে দেশে আর ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা ফিরে না আসে এবং সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্যে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। একই সঙ্গে নিত্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’

মানববন্ধন থেকে অন্তর্বর্তী সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি সুজনের পক্ষ থেকে কিছু আহ্বান ও দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে-

Advertisement

>> অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে আনা

>> নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

>> সারাদেশে সৃষ্ট অরাজকতা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা

>> অপরাধ দমনে জিরো-টলারেন্স নীতি নেওয়া

>> অপরাধীদের রক্ষার বদলে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা

>> অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা

>> অবিলম্বে ‘মব কালচার’ বন্ধ করা

>> নিরপরাধীদের গ্রেফতার-হয়রানি বন্ধ করা

>> ফ্যাসিবাদ দমনে ফ্যাসিবাদী আচরণ পরিহার করা

>> বিশৃঙ্খলা উসকে না দিয়ে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা

>> সংঘাতের বদলে ঐক্যের বাংলাদেশ গড়ে তোলা

>> বহুমত ও পথের অনুসারীদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা

>> সব ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করা

>> গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা

>> দ্রুত সংস্কার করে পরিচ্ছন্ন রাজনীতি ও শোষণমুক্ত দেশ গড়ে তোলা

>> গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা

>> সংস্কারের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করা

>> সংস্কারের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত অঙ্গীকার নিশ্চিত করা

>> রাজনৈতিক দল স্বাক্ষরিত জাতীয় সনদ (সমঝোতা স্মারক) তৈরি করা, যে জাতীয় সনদই হতে পারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মূল দলিল

>> রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার নিষিদ্ধ করা

>> ধর্মীয় উপাসনালয়ে রাজনৈতিক প্রচারণা নিষিদ্ধ করা

>> দ্রুত সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা

>> সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে নাগরিকদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া

>> সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যের সংবিধান রচনা করা

>> অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ না করা

>> জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয়করণমুক্ত করা।

এমএএস/এমএএইচ/