অর্থনীতি

সাইফুর রহমানের দেখানো পথেই আগামী দিনে অর্থনৈতিক সংস্কার হবে

প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের দেখানো পথেই আগামী দিনে অর্থনৈতিক সংস্কার হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

Advertisement

তিনি বলেন, অর্থনীতির উন্নতির জন্য আমাদের চ্যাম্পিয়নের দরকার হয়। সাইফুর রহমান চ্যাম্পিয়ন। তিনি বাজার ব্যবস্থার চ্যাম্পিয়ন, বেসরকারি খাতের চ্যাম্পিয়ন, রপ্তানিমুখী শিল্পে চ্যাম্পিয়ন।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর এক হোটেলে দৈনিক বণিক বার্তা ও বিআইডিএসের যৌথ উদ্যোগে গুণীজন সংবর্ধনা- ২০২৪ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এটি বণিক বার্তা ও বিআইডিএসের যৌথ উদ্যোগ গুণীজন সংবর্ধনার সপ্তম আয়োজন। এবারই প্রথমবারের মতো প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানকে মরণোত্তর সম্মাননা জানানো হয়েছে। আয়োজনে বক্তারা এম সাইফুর রহমানের জীবন ও কর্মের ওপর আলোকপাত এবং স্মৃতিচারণ করেন।

Advertisement

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন ছিল বাংলাদেশে অর্থনীতিকে একদলীয় অর্থনীতি থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে নিয়ে আসা। সব মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। এই ধারণায় বিশ্বাস করতেন সাইফুর রহমান।

তিনি বলেন, সাইফুর রহমান সবসময় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করেননি। অনেক সময় ব্যবসায়ীদের হতাশ করেছেন। তিনি সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। মানুষের জীবনমান উন্নয়নে চিন্তা করতেন।

বিএনপির এ নেতা বলেন, বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা তিনি খুব বেশি চাননি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে তার উদ্যোগ ছিল অসাধারণ।   

আরও পড়ুনপ্রয়াত এম সাইফুর রহমানকে স্মরণ করলেন বিশিষ্টজনরা ১২ মার্চ ৩ হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড ছাড়ছে সরকার 

সাইফুর রহমান কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হতে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আদর্শগত, অর্থনৈতিক, দারিদ্র্য দূরীকরণে বিএনপি যে চিন্তাভাবনা করছে তা জিয়াউর রহমানের চিন্তা থেকে এসেছে। সাইফুর রহমান মানসিকভাকে এ দিকটা বহন করেছেন। আগামীদিনের বাংলাদেশে বিএনপি সেই জায়গা থেকে সরে দাঁড়াবে না। সাইফুর রহমানের দেখানো পথেই আগামী দিনে অর্থনৈতিক সংস্কার হবে। সাইফুর রহমান অর্থনীতিত ডিরেগুলেশন, লিবারাইলেজশন করেছেন। আমরা এরচেয়ে বড় ডিরেগুলেশন ও লিবারালাইজেশন করবো।

Advertisement

অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ফিসক্যাল পলিসি, মনিটারি পলিসিসহ তার মৌলিক সংস্কারের জন্য দুর্বৃত্তায়ন হওয়ার পরও অর্থনীতি বেশ কিছুদূর টেনে নেওয়া গেছে।  

বিআইডিএসের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. কাজী ইকবাল বলেন, সাইফুর রহমান আমাদের ভালো বন্ধু ছিলেন। তিনি গবেষণা পছন্দ করতেন। নব্বইয়ের দশকে অর্থনৈতিক সংস্কারে তার বড় ভূমিকা ছিল।  

দেওয়ান হানিফ মাহমুদ বলেন, এবার যখন সাইফুর রহমানকে সম্মাননার সিদ্ধান্ত নেই তখন আমরা একটু সমালোচনার মুখে পড়ি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা সেরা সময় তাকে সম্মানিত করার। ৫ আগস্টের পর দেশটাকে সংস্কারের কথাবার্তা চলছে। যে মানুষটা দেশের অর্থনীতি সংস্কারে বড় ভূমিকা রেখেছে, আমাদের দৃষ্টিতে মনে হয়েছে সাইফুর রহমানকে যদি সম্মাননা দিতে পারি তাহলে বনিক বার্তা ও বিআইডিএস বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খান বলেন, সাইফুর রহমানের সিদ্ধান্ত গ্রহণে পেশাদারত্ব ছিল। সরকার কীভাবে চলে তিনি ভালো বুঝতেন। এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যেটি সম্পর্কে তার ধারণা ছিল না। 

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, সাইফুর রহমান আলোকিত মানুষ ছিলেন। তিনি কোনোদিন আসবেন না। তিনি দেশকে যা দিয়ে গেছেন তা লালন করতে পারলে দেশকে এগিয়ে নিতে পারবো। তার নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে দেশের পোশাকশিল্পের আজ বিস্তার ঘটেছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।  

এম সাইফুর রহমান ১৯৭৬ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ, বাণিজ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এসব দায়িত্ব পালনকালে তিনি ভ্যাট, পোশাক খাতে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি, বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা চালুসহ অর্থনীতিতে ব্যক্তি খাতের বিকাশ ও নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৭৬-১৯৮০ পর্যন্ত বাণিজ্যমন্ত্রী, ১৯৮০-১৯৮২ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী, ১৯৯১-১৯৯৬ পর্যন্ত টেকনোক্র্যাট অর্থমন্ত্রী এবং ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

এসএম/কেএসআর