প্রক্রিয়াজাত কৃষি ও খাদ্যপণ্যের প্রয়োজনীয় যন্ত্র, প্রযুক্তি, কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবার পসরা বসেছে ১০ম বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো ২০২৫’ এ। যেখানে দেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশ নিয়েছে বিশ্বের অন্যতম বেশ কিছু জায়ান্ট কোম্পানি।
Advertisement
এক আঙিনায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসি-বি) চলছে তিনদিনের এ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলার প্রথম দিনই ভিড় নজরকাড়া। মেলার চারটি প্যাভিলিয়ন প্রাঙ্গণে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের স্টলে ছিল দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস। খাদ্যপণ্যের বিভিন্ন উপকরণ জায়গা করে নিয়েছে মেলাজুড়ে, এগুলোতে আগ্রহ বেশিরভাগ ক্রেতা-দর্শনার্থীর।
অন্যদিকে খাদ্য উৎপাদন প্রযুক্তি আর কৃষিপণ্যের কত কিছুই না জায়গা করে নিয়েছে এসব স্টলে, সেখানে ভিড় করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা। দেশি-বিদেশি ক্রেতা-বিক্রেতারা মেলার স্টলগুলোতে ঘুরছেন, জানছেন এবং কিনছেন।
Advertisement
মেলায় এবার যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চায়না, জার্মানি, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া সিঙ্গাপুরসহ প্রায় ২২টি দেশের দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান নিজেদের পণ্য এবং সেবা প্রদর্শন করছে। এর মধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক বেশ কিছু জায়ান্ট কোম্পানি, যারা মেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেলায় আছে ডোলার গ্রুপ, জার্মানির এ কোম্পানিটি ফুড ইনগ্রিডিয়ান সরবরাহে বৈশ্বিক তালিকায় একেবারে প্রথম সারির। ২০১৬ সালে কোম্পানিটি এ দেশে ব্যবসা শুরু করে। এ কোম্পানির হেড অব মার্কেটিং অপরুপা জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ প্রক্রিয়াজাত কৃষি ও খাদ্যপণ্যের কাঁচামাল বিক্রির জন্য অন্যতম একটি বাজার। শুধু ফ্লেবার ও ফুড ইনগ্রিডিয়ানের ৫০ মিলিয়ন ইউরোর বাজার আছে এখানে। যার আমরা প্রায় ১০ শতাংশ সরবরাহ করতে পারছি। আমরা এ দেশে ব্যবসা আরও বাড়াতে চাই। যে কারণে মেলায় অংশ নিয়েছি।
ফুড ইনগ্রিডিয়ান সরবরাহকারী আরেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের মেইন মেলায় এসেছে প্রথমবার। এ দেশে তারা নিজস্ব অফিসও চালু করেছে এ বছর। কোম্পানি এজেন্ট নাদিম ফেরদৌস বলেন, আমরা এ দেশের বড় বাজার ধরতে চাই।
মেলায় সিঙ্গাপুরে সিমরাইজ কোম্পানিও আছে। তারা এ দেশে ১৯৭৮ সাল থেকে ওইসব পণ্য বিক্রি করছে। তারাও নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে মেলায় বিভিন্ন পণ্য প্রদর্শন করছে।
Advertisement
এদিকে মেলায় খাদ্যের সব প্রকার প্যাকেজিং সলিউশন নিয়ে ভারতের পাকোনা ইন্ডাস্টি এসেছে। বিগত ২৫ বছরে এ দেশে এখন পর্যন্ত ৫০টির বেশি কোম্পানির কাছে প্রযুক্তি দিয়েছে তারা। কোম্পানির বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার মাহিন রিজভান বলেন, এ মেলায় এলে আমরা ভালো সাড়া পাই। আমাদের কোম্পানি ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ ডলারের মেশিন বিক্রি করে। মেলায় এসব মেশিন কিনতে আগ্রহীরা আসেন। কিছু মেশিনের ডামি থাকে, সেগুলো দেখেন। বিস্তারিত জানতে পারেন।
এদিকে বিদেশি এসব কোম্পানির পাশাপাশি দেশি খাদ্য ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানিগুলো অংশ নিয়েছে। দেশি প্রায় ৪০টির বেশি কোম্পানি স্টল দিয়েছে। অনেক কোম্পানি দেশি ক্রেতাদের জন্য ছাড়ে পণ্য বিক্রি করছে। নিজেদের পণ্যের প্রচারের জন্য ফ্রিতে পণ্য দিচ্ছে।
মেলা উপলক্ষে প্রাণ তাদের প্রতিটি পণ্যে ১০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। এছাড়া একটি কিনলে আরেকটি ফ্রি এমন বিভিন্ন অফার রয়েছে। মেলায় প্রাণের হেড অব মার্কেটিং (রিটেল সেল) ওমর ফারুক বলেন, ছাড়ের পাশাপাশি আমরা নতুন পণ্য কোরিয়ান রামেন, ল্যাটিনা পিউর জুসের প্রচার করছি। এসব পণ্যে ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের আরেক পণ্য টমেটোর আচার। এখানে আগতরা সেটার টেস্ট নিচ্ছেন। ভালো রিভিউ পাচ্ছি।
মেলায় আহমেদ ফুডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মিনহাজ আহমেদ বলেন, এ মেলায় ৬-৭ বছর থেকে নিয়মিত অংশ নিচ্ছি। ভালো বিদেশি অর্ডার পাই। এছাড়া আমাদের যারা সাপ্লায়ার, তাদের সঙ্গে একটা মিলন হয়। আবার অন্যদের প্রযুক্তি ও কাঁচামাল দেখার সুযোগ হয়। বিদেশি কোম্পানিগুলোর থেকে পণ্য ও প্রযুক্তি নেওয়া যায় সহজে।
বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসর’স অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) এবং রেইনবো এক্সিবিশন অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের (রীমস) যৌথ উদ্যোগে এ মেলা আয়োজন করা হয়েছে।
বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর শুরু থেকে মেলা প্রাণবন্ত। এ বছর আমরা প্রক্রিয়াজাত খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ পণ্য ও প্রযুক্তির বড় আয়োজন রেখেছি। যাতে যেসব ছোট ছোট উদ্যোক্তা বিদেশে যেতে পারে না এসবের জন্য তারা বেশি উপকৃত হয়।
তিনি বলেন, বাপা জন্মলগ্ন থেকেই ফুড প্রসেসিং খাতের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ খাতের জন্য এ মেলা গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম। এ আয়োজনের উদ্দেশ্য বাপা ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাত এগিয়ে নেওয়া।
এ মেলার সঙ্গে ‘১২তম অ্যাগ্রো বাংলাদেশ এক্সপো ২০২৫’, ‘ফুড ইনগ্রেডিয়েন্ট এক্সপো ২০২৫’ এবং ‘বেকটেক এক্সপো ২০২৫’ নামে আরও তিনটি মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বেকটেক এক্সপো ২০২৫ এ বেকারি শিল্পের টেকনোলজি এবং ইনগ্রেডিয়েন্ট প্রদর্শন করা হবে। মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত।
এনএইচ/এমআইএইচএস/জেআইএম