অর্থনীতি

অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে সশস্ত্র হামলায় জড়িতরা বহিরাগত সন্ত্রাসী

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে সশস্ত্র হামলায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে অর্থনীতি সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির নেতারা। তাদের অভিযোগ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট সমিতির কিছু সদস্য বহিরাগত যুবলীগ সদস্যদের নিয়ে কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছেন। তারা লুটপাট ও হামলা চালিয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজগুলোও নিয়ে যায়। সমিতির নেতারা হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে শাস্তির দাবি জানান।

Advertisement

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব দাবি জানান।

এসময় অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, সদস্যসচিব ও ঢাবি অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ইনভেস্টমেন্ট করপারেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান আবু আহমেদ, সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম ফজলুল হক মিলন এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আইসিবি চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেন, আমরা বিগত ১৫ বছর কোনো কথা বলতে পারিনি, কোনো লেকচার দিতে পারিনি। টেলিভিশনে আমাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অর্থনীতি সমিতির বহু মত ছিল, এ কারণে আমরা সেখানে যেতাম না। এক-এগার সরকারের সময়ও আমরা লুজার ছিলাম। ড. খলীকুজ্জামানরা যখন নির্বাচিত হয়েছিলেন পরবর্তীতে পটপরিবর্তন হয়। সবার পরামর্শে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের নিয়ে এই অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করা হয়।

Advertisement

তিনি বলেন, এই সমিতিতে ড. সালেহউদ্দিন, ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদসহ দেশ বরেণ্যরা আছেন। সমিতিতে যা হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায়েও তা জানেন সবাই। স্বঘোষিত অ্যাডহক কমিটি, যা গঠনতন্ত্র বিরোধী ও বিধিবহির্ভূতভাবে গঠিতদের বলবো, আপনারা একটি নির্বাচন চাইতে পারেন, যার মাধ্যমে আপনারা আসবেন। আমরা সেটাই করতে চাই।

মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, অর্থনীতি সমিতিকে কেন্দ্র করে চলমান ঘটনাবলির পেছনে তারাই জড়িত যারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে সচিবালয় প্রাঙ্গণে জনতার মঞ্চ সৃষ্টি করে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অর্থনীতি সমিতিকে দিয়ে বাংলাদেশে আবারও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে এসব লোকজন একত্র হয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সব সমালোচনাকে ছাড়িয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে জনতার মঞ্চের সাবেক যুগ্ম সচিব, আওয়ামী সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগী কয়েকজন সচিব, ঘোর আওয়ামীপন্থি একজন অধ্যাপক এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৫০-৬০ জন সশস্ত্র ক্যাডারের নেতৃত্বে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সমিতির কার্যালয় দখলের ঘটনা। সশস্ত্র দখলের নেতৃত্বে ছিলেন বিতর্কিত জনতার মঞ্চে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী সাবেক যুগ্ম সচিব সৈয়দ মাহবুব-ই-জামিল, যিনি ছাত্রলীগের হয়ে চাকসুর মিলনায়তন সম্পাদক হিসেবে ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সভায় সদ্য দেশে ফেরত আসা শেখ হাসিনাকে পাশে রেখে তাকে যে কোনো মূল্যে প্রাণ দিয়ে রক্ষা ও আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করেছিলেন।

সেখানে আরও বলা হয়, আওয়ামী লীগের ভোট কারচুপির প্রত্যক্ষ সহযোগী সচিব গ্রুপের সদস্য ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিতর্কিত সাবেক চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ; রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক ছাত্রলীগের নেতা ও ভিপি প্রফেসর ড. আজিজুর রহমান, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এবং জনতার মঞ্চের নেতৃত্বদানকারী সাবেক সচিব ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীরের একান্ত সহযোগী ও ব্যক্তিগত পিএস পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির গবেষণা পরিচালক ড. নুরুজ্জামান এবং সিদ্ধেশ্বরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রলীগ নেতা এবং বর্তমানে যুবলীগের সক্রিয় নেতা মুসলেহ উদ্দিন রিফাত।

Advertisement

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সৈয়দ মাহবুব-ই-জামিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর একান্ত সচিব হিসেবেও দীর্ঘ কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অনেক অর্থ লোপাট করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের একান্ত প্রিয়ভাজন সাবেক সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া, দুর্নীতির দায়ে ২০২৪ সালের ২২ আগস্ট যাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাদের গঠিত তথাকথিত অ্যাডহক কমিটিতে আট থেকে দশ জনের নাম আছে, যারা অর্থনীতি সমিতির সদস্যই না। আমরা হামলাকারী সবার শাস্তি চাই, একই সঙ্গে সুশৃঙ্খলভাবে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাই।

ইএআর/এমকেআর/এমএস