ভারতে ভোটারদের বুথমুখী করতে মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) অর্থায়ন ইস্যুতে নতুন তথ্য সামনে এসেছে। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে সাতটি প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে ইউএসএআইডি। আর প্রতিটি প্রকল্পেই সরকার যুক্ত আছে।
Advertisement
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে বলছে, এই সাত প্রকল্পের অর্থায়ন ৭৫ কোটি মার্কিন ডলার বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘বর্তমানে ৭৫ কোটি মার্কিন ডলার বাজেটের সাতটি প্রকল্প ভারত সরকারের অংশীদারত্বে ইউএসএআইডি দ্বারা বাস্তবায়িত হচ্ছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোট ছাড়াও কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি ইস্যুতে এসব অর্থায়ন করে ইউএসএআইডি। এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপণা ও স্বাস্থ্যে নেওয়া হয় প্রকল্প। টেকসই বনাঞ্চল ও জলবায়ু অভিযোজন প্রোগ্রাম এবং কর্মদক্ষতা প্রযুক্তি বাণিজ্যিকীকরণ এবং উদ্ভাবন প্রকল্পের জন্যও তহবিল ছিল।
এদিকে, ভারতে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে আমেরিকার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসআইডির ২১ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন নিয়ে দেশটিতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এর মধ্যেই শনিবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য উৎসবে মার্কিন অর্থায়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
Advertisement
এই বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের লোকজন সেখানে কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন, যা স্পষ্টতই উদ্বেগজনক। ইউএসএআইডিকে ভারতে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা আমাদের এখানে কাজ করছে। কিন্তু ওদের কাজ করতে দেওয়া হয়েছিল সরল বিশ্বাসে, ভালো কাজের জন্য।
‘এখন কথা উঠছে, যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান খারাপ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। যদি এই অভিযোগ সত্যি হয়, দেশের মানুষের এটা জানার অধিকার আছে যে, কারা সেই খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত। বিষয়টি অবশ্যই তদন্তের দাবি রাখে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ভারতে ২১ মিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিল, যা ‘ভোটারদের বুথিমুখী করার’ জন্য বরাদ্দ করা হয়। তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই অর্থ একটি ‘কিকব্যাক স্কিম’ এর অংশ ছিল।
এই প্রসঙ্গে জয়শংকর বলেন, এই তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় এটি আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, বাইরে থেকে কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আমাদের দেশে কিছু কার্যক্রম চালানো হয়েছে, যা আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়।
Advertisement
ভারত সরকার ইতোমধ্যেই এই বিষয়টি তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটসহ (ইডি) অন্যান্য আর্থিক ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।কোন কোন ভারতীয় সংস্থা ও ব্যক্তি এই অর্থের মাধ্যমে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের কাজে যুক্ত ছিল, তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন এনজিও, সমাজকর্মী, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক সংস্থাগুলো এই অনুদান গ্রহণের অভিযোগে তদন্তের আওতায় এসেছে।
ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এই বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে। দলটির অভিযোগ, এই অর্থ ভারতে ‘ডিপ স্টেট’ গঠনের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বরাদ্দকৃত এই অর্থ ভারতীয় নির্বাচনে অনৈতিক হস্তক্ষেপের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, এনডিটিভি
এসএএইচ