মহিষকে বৈষম্যের শিকার প্রাণী হিসেবে উল্লেখ করে মহিষের দুধ থেকে তৈরি দইকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
Advertisement
তিনি বলেছেন, মহিষ আমাদের সম্পদ। মহিষ পালনকারীরা আমাদের সম্পদ। মহিষের মাংসে কোলেস্টেরল কম, তাই মহিষের মাংসকে জনপ্রিয় করতে হবে। দেশের নানা স্থানে মহিষের দুধ থেকে তৈরি দইয়ের নানা বৈচিত্র্য দেখা যায়। মহিষের দইকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য কাজ করতে হবে।
মহিষ পালনকারী খামারিদের সব প্রকার সহাযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, সংগৃহীত তথ্য নিয়ে গবেষণা করতে হবে।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) বাস্তবায়নাধীন ‘মহিষ গবেষণা ও উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত)’ শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
Advertisement
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ক্লাইমেট চেঞ্জ এখন বাস্তব। তাই ক্লাইমেট চেঞ্জের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এমন প্রাণী হিসেবে মহিষকে অনেক গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। মহিষ বৈষম্যের শিকার একটি প্রাণী। তাই মহিষ পালনকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে কমিউনিটি পর্যায়ে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, অভিজ্ঞ মহিষ খামারিরা মহিষের হিটে আসা শনাক্ত করতে পারেন, মহিষ সংক্রান্ত নানাবিধ জ্ঞান ধারণ করেন। তাদের জ্ঞানকে বিজ্ঞানের ভাষায় প্রকাশ করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্প শেষে গবেষণা কার্যক্রমগুলোকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোনো গ্যাপ না থাকে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা যদি খাদ্যে আমিষের জোগানের ক্ষেত্রে এমনকি দুধের ক্ষেত্রে বৈচিত্র আনতে চাই সেক্ষেত্রে আমরা পর্যাপ্ত সহায়তা পাই না। দেশের গরু, ছাগল, মহিষ, হাঁস,মুরগির যদি উন্নয়ন করতে না পারি তাহলে কীসের উন্নয়ন। আসলে উন্নয়নের ধারণার পরিবর্তন হওয়া উচিত। যারা মহিষ পালন করেন তাদের প্রতি যদি কোনো সহায়তা না করতে পারি তাহলে কীসের উন্নয়ন।
তিনি বলেন, এ ধরনের গবেষণা হচ্ছে বলেই আমরা মহিষ সম্পর্কে জানতে পারছি। একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে তাদের আচরণ কী হবে তা নির্ভর করবে প্রতিষ্ঠানকে তারা কিভাবে দেখে। সেক্ষেত্রে বিএলআরআইয়ের প্রতি গবেষকদের আবেগ, ভালোবাসা আমাদের মুগ্ধ করেছে।
Advertisement
প্রাণিজ আমিষের ক্ষেত্রে বিএলআরআইয়ের গবেষণার ফলাফল জনগণকে জানানোর আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এ ধরনের গবেষণার ফলাফল ছোট পরিসরে নয়, বরং আরও বড় পরিসরে হওয়া উচিত। আমি অতিথি হয়ে নই, বরং সঙ্গে থাকতে চাই। সঙ্গে থাকার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে চাই না।
এসময় তিনি বিএলআরআইয়ের নানাবিধ সংকট নিরসনে মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস ব্যক্ত করেন।
বিএলআরআই মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুকের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া, বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম ওপ্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- বিএলআরআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ড. এ বি এম মুস্তানুর রহমান। পরে মহিষ গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, অগ্রগতি ও অর্জন তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক ও বিএলআরআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গৌতম কুমার দেব।
কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএলআরআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ড. তালুকদার নুরুন্নাহার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক, বিএরআরআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এবং বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
এনএইচ/এমকেআর/জিকেএস