তুরস্কের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘কুরুলুস উসমান’ বাংলাদেশেও তুমুল জনপ্রিয়। প্রতি বুধবার রাতে তুর্কি টেলিভিশনে এটি প্রচার হয়। আর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পর্বগুলো পাওয়া যায় বাংলা সাবটাইটেলসহ। এই ধারাবাহিকটি উসমানী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা উসমান গাজীকে কেন্দ্র করে নির্মিত। এতে উঠে এসেছে আরতুগ্রুল গাজীর পুত্র উসমান গাজী কায়ি গোত্রের প্রধান থেকে কীভাবে নিজের নামে উসমানি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন সেই গল্প।
Advertisement
বর্তমানে সিরিজটির ৬ষ্ঠ সিজন চলছে। যার মধ্যে মোট ১৮০ পর্ব প্রচার হয়েছে। সর্বশেষ পর্বটি দর্শকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। কারণ এই পর্বে দেখা গেছে সিরিজটির অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র বালা হাতুন আগুনে পুড়ে গেছেন। তার স্বামী উসমান নিথর দেহের বালাকে বুকে জড়িয়ে কাঁদছেন। বালাকে শেষবারের মতো কালিমা পড়তেও দেখা গেছে। তার দুই পুত্র উরহান ও আলাউদ্দিনও কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
আরও পড়ুন মহানগর নাট্যোৎসব স্থগিত একা চলতে পারছেন না ফরিদা, যা জানালেন স্বামীশুধু তাই নয়, ১৮১ পর্বের প্রথম ট্রেলারেও দেখা গেছে বালা হাতুনের মরদেহ ঘিরে কায়ি বসতিতে কান্নার রোল পড়েছে। তার শেষ বিদায়ের প্রস্তুতিও দেখা গেছে। যা দেখে অনুমান করা হচ্ছে সিরিজে আর দেখা মিলবে না প্রিয় চরিত্র বালা হাতুনের।
উসমানের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার যে মহান যাত্রা সেখানে দুর্দান্ত এক সারথির নাম বালা হাতুন। আনন্দ-বেদনায়, সাফল্য-ব্যর্থতায় তিনি ছায়ার মতো সঙ্গী হয়ে ছিলেন উসমানের পাশে পাশে। উসমানও প্রিয়তমা স্ত্রীকে ভালোবেসেছেন মনপ্রাণ হৃদয় উজার করে। যখনই ভেঙে পড়েছেন ছুটে গেছেন বালার কাছে, সাহস ও প্রেরণার সন্ধানে। দিশা হারিয়ে পথের দেখা পেয়েছেন বালার কাছে।
Advertisement
সেই সহধর্মিনীকে হারিয়ে উসমান ভেঙেচুড়ে পাহাড়ের মতো ধ্বসে পড়বেন এটাই তো স্বাভাকিক। তবে বালা হারানোর শোক তিনি কীভাবে সামাল দেবেন সেটাই দেখার বিষয়। পাশাপাশি নিজের সন্তান ও কায়ি গোত্রের মানুষদের কাছে বিশেষ করে নারীদের কাছেও বালা ছিলেন শক্তি ও প্রেরণার প্রতীক। সেই বালার মৃত্যু তাদের জন্য কতোটা বিপর্যয় নিয়ে আসে সেটা ভেবেই অস্থির সিরিজটির ভক্ত-অনুরাগীরা।
তবে অনেকে মনে করছেন, বালা হাতুন বেঁচে আছেন। তিনি অগ্নিদগ্ধ হলেও মারা যাননি। অনেকে নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে মেতেছেন বালার জীবন-মৃত্যু নিয়ে। একজন লিখেছেন, ‘আগেও আমরা বালাসহ অনেককেই দেখেছি পর্বের শেষদিকে মারা গেছেন বলে ধারণা দেয়া হয়। কিন্তু নতুন পর্বে দেখা যায় কোনো না কোনোভাবে তিনি বেঁচে উঠেছেন। আসলে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোকে নানারকম ক্রাইসিসে ফেলে বা মৃত্যুর আভাস দিয়ে সিরিজের পর্বগুলোতে টুইস্ট দেয়া হয়। তুরস্কের সিরিজগুলোতে এটা খুবই নিয়মিত একটা ব্যাপার।’
এক নারী ভক্ত লিখেছেন, ‘বালাকে কালিমা পড়তে দেখা গেছে, উসমানকে দেখা গেছে বালাকে জড়িয়ে কাঁদছেন। তবে আমার মনে হয় এখানে পরিচালক একটা টুইস্ট রেখেছেন। মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে মোঙ্গল ও বিধর্মীদের সাথে হাত মেলানো বেগম হাতুন যখন বালা হাতুনের আশ্রয়খানায় আগুনে ধরিয়ে দেন তখন পাশেই ছিল বালার মেয়ে হালিমা। সে তার মাকে উদ্ধার করবেই। কারণ সে বালাকে তার শত্রু মনে করে, তাকে মেরে নিজের প্রতিশোধ নিতে চায়। তাই সে বালা হাতুনকে বাঁচিয়ে রাখবে। ঘটনাক্রমে পরে জানতে পারবে সোফিয়ার বলা গল্প মিথ্যে। বালা হাতুন ও উসামন গাজীই তার মা-বাবা।’
আরেক দর্শক কুরুুলস উসমানের সিরিজ সংশ্লিষ্ট এক ফেসবুক গ্রুপে লিখেছেন, ‘বেগম হাতুন যাকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন বালা হাতুনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত দেখতে তাকে মেরে বালা পালিয়ে যাবে। উসমানরা যাকে দেখে কাঁদছে সে আসলে বেগম হাতুনের লোক। বালা হাতুন ফিরবেন নতুন পর্বে। এখনই তার মৃত্যু হবে না।’
Advertisement
এদিকে ইতিহাস বলছে, শেখ এদেবালির মেয়ে ও উসমান গাজীর স্ত্রী রাবিয়া বালা খাতুন ১৩২৪ সালে তুরস্কের বিলেসিকে ইন্তেকাল করেন। এরপর তাকে বিলেসিকে তার বাবার সাথে দাফন করা হয়েছিলো। সিরিজে এখন পর্যন্ত সেই সময় আসেনি। অর্থাৎ, ১৮১ পর্বে বালা হাতুন সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। তার মৃত্যু হয়নি। কীভাবে তিনি ফিরবেন সেটা এখনো অজানাই রেখেছেন সিরিজটির লেখক মেহমেত বোজদাগ ও পরিচালক মতিন গুনাই।
কুরুলুস উসমানে বালা হাতুন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তুরস্কের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ওজে টেরার। তিনি সিরিজটির প্রথম সিজন থেকেই উসমান চরিত্রের অভিনেতা বুরাক অ্যাজিভিটের বিপরীতে অভিনয় করছেন।
এলআইএ/জিকেএস