দেশজুড়ে

জমিদারের উত্তরাধিকার দাবি করে জমি হাতিয়ে নিতে দুই সহোদরের কাণ্ড

হবিগঞ্জের লাখাই থানার একজন জমিদার ছিলেন শ্যামা চরণ দাস চৌধুরী। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের তোপের মুখে পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে সপরিবারে ভারতবাসী হন। ওই জমিদারের উত্তরাধিকার দাবি করে সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়া এলাকার ৬১ শতক ভূমির মালিকানা নিতে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জের দুই সহোদরের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করেছেন আবুল খায়ের মিটু নামের এক ব্যক্তি।

Advertisement

গত ৩০ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে দুর্নীতির মামলাটি করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় আসামি করা হয়েছে তিনজনকে। তারা হলেন কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার হালালপুর গ্রামের মৃত রাস বিহারী দাসের ছেলে সন্তোষ কুমার দাস, তার ভাই পীযুষ কান্তি দাস ও হবিগঞ্জের লাখাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম।

আসামি সন্তোষ কুমার দাস অষ্টগ্রাম উপজেলার মোহনতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। মামলার বাদী আবুল খায়ের বর্তমানে শ্যামা চরণ দাস চৌধুরীর জমি লিজ নিয়ে বসবাস করছেন।

Advertisement

মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে সন্তোষ কুমার দাস ও পীযুষ কান্তি দাস নিজেদের হবিগঞ্জের লাখাই থানার রুহিতনসি গ্রামের শ্যামা চরণ দাস চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির উত্তরাধিকারী দাবি করে সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়া মৌজার ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৬১ শতক ভূমির মালিকানা পেতে সুনামগঞ্জের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইবুন্যালে একটি মামলা করেন। প্রাথমিক শুনানিতে বারবার অনুপস্থিত থাকায় এবং কয়েকদফা সময় নিয়েও চূড়ান্ত নির্ধারিত তারিখেও অনুপস্থিত থাকায় ২০১৪ সালে প্রত্যর্পণ ট্রাইবুন্যাল মামলাটি খারিজ করে দেন।

এরপর ট্রাইবুন্যালের তিনজন বিচারক শেখ রাজিয়া সুলতানা, মো. আমিরুল ইসলাম ও ইব্রাহিম মিয়া বদলি হন। পরে ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে দায়িত্বে আসেন কাঁকন দে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বাদীরা খারিজ হওয়া মামলাটি পুনঃবহাল করতে ৯ বছর ২১ দিন পরে ২০২৩ সালে আবেদন করেন। পরে আদালত ১০০০ টাকা খরচ ধার্য করে পূর্বনম্বরে পুনঃবহাল আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে খুব স্বল্পসময়েই নিজেদের পক্ষে রায় পান দুই সহোদর। আদালতের রায়ের পর প্রত্যর্পণ মামলার তফসিলভুক্ত সম্পত্তির লিজগ্রহীতারা রহস্য উদঘাটনে নামেন।

অনুসন্ধানে তারা জানতে পারেন, মামলার বাদী সহোদর লাখাই থানার রুহিতনসি গ্রামের যে শ্যামা চরণ দাস চৌধুরীর উত্তরাধিকারী দাবি করেন, সেই ব্যক্তি হবিগঞ্জের একজন জমিদার ছিলেন। নিজ এলাকায় তিনি ‘শ্যাম বাবু’ নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের তোপের মুখে পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকেই সপরিবারে ভারতবাসী হন। সিলেট অঞ্চলে ফেলে যান নিজ ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে থাকা বিপুল পরিমাণ সম্পদ। সেসব সম্পদের অনেকগুলোই এখন বিভিন্ন ব্যক্তি সরকার থেকে ইজারা নিয়ে ব্যবহার করছেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, কিশোরগঞ্জের দুই সহোদর সুনামগঞ্জের ভূমির উত্তরাধিকারী দাবি করলেও তার চেয়ে অধিকতর মূল্যবান সম্পত্তি শ্যাম বাবুর প্রাসাদতুল্য দ্বিতল বাড়ি ও তার ভাই অম্বিকা চরণ দাস চৌধুরীর বাড়ির সম্পত্তি নিয়ে কোনো দাবি উত্থাপন করেননি। সুযোগসন্ধানী ব্যক্তিদের যোগসাজশে সুনামগঞ্জে সম্পত্তি হস্তগত করতে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে না ভেবে ওই সম্পত্তিকে তারা টার্গেট করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তরাধিকারী সনদ তৈরি করে আদালতে উপস্থাপন করেন তারা।

Advertisement

মামলার আইনজীবী শহীদুজ্জামান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘জালিয়াতির মাধ্যমে জমিদারি ভূমি হস্তগত করতে দুই সহোদর অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। ওই ঘটনায় করা মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে দুদককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের সুযোগ নিয়ে দেশব্যাপী সরকারি সম্পত্তি লুটপাটের চেষ্টা অনাকাঙ্ক্ষিত। এমন জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটিত হলে ট্রাইবুন্যালের রায় বাতিল করেন হাইকোর্ট। মামলার বাদীকে এক কোটি টাকা জরিমানা আরোপ করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে মামলার অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ মামলার বাদী সন্তোষ কুমার দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, জমিদার শ্যামা চরণ দাস চৌধুরী সম্পর্কে তার বাবার মামা। জমিদারের কোনো সন্তান না থাকায় সেই সূত্রে তারা উত্তরাধীকারী। মামলার একটি রায় তাদের পক্ষে এসেছে। তবে মামলার বিষয়ে তার ছোট ভাই পীযুষ কান্তি দাস সবকিছু জানেন বলে সংযোগ কেটে দেন।

আহমেদ জামিল/এসআর/জিকেএস