বাংলাদেশের মানুষের কাছে উগান্ডা নামটি বেশ পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই ট্রল শোনা যায় এটিকে ঘিরে। তবে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মতো ২০ দলের একটি তারাও। ক্রিকেটের দীর্ঘ পথচলা পেরিয়ে এবারই প্রথম বিশ্বকাপ খেলবে আফ্রিকার দেশটি।
২০১৯ সালে টি-টোয়েন্টির অফিসিয়াল মর্যাদা পায় উগান্ডা। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে স্বপ্ন বুনতে থাকে তারা। তিন বছরের পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়নে এখন বিশ্বকাপ স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে তাদের। ফুটবল, রাগবি সেভেনস এবং নেটবলকে পেছনে ফেলে একটু একটু করে উগান্ডায় জনপ্রিয় হচ্ছে ক্রিকেটও।
উগান্ডা দলের একজন আছেন, যার কথা আলাদা করে বলতেই হয়। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি খেলতে যাচ্ছেন ৪৩ বছর বয়সে। ফ্রাঙ্কো সুবুগা সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সবচেয়ে বেশি বয়সে বিশ্বকাপ খেলা ক্রিকেটার হয়ে যাবেন।
প্রায় ২৭ বছর ক্রিকেট খেলে অবশেষে বিশ্বকাপ খেলার স্বাদ পাচ্ছেন তিনি। মাত্র ১৭ বছর বয়সে আইসিসি ট্রফিতে উগান্ডার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সুবুগা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার ওই লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। ২৭ বছর পর আবার আন্তর্জাতিক ইভেন্টে খেলতে যাচ্ছেন তিনি। আসছে আগস্টেই ৪৪ পা দিতে যাওয়া এই ক্রিকেটারের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে অবশেষে!
সুবুগার সঙ্গে আছেন আরও কয়েকজন স্পিনার, তাদের দলের সবচেয়ে বড় শক্তিও এটি। গত বছর ৩০ ম্যাচে ৫৫ উইকেট নিয়েছেন আলপেশ রামজানি। তার সতীর্থ সেনিওন্দো সমান ম্যাচ খেলে পেয়েছিলেন ৪৯ উইকেট। তাদের উপস্থিতিতে উগান্ডা ‘স্পিন পাওয়ারহাউজ’ হয়ে উঠেছে।
ব্যাটিংয়ে দলটির সবচেয়ে বড় ভরসা রিয়াসাত আলি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচেও ২৮ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। একই ধরনের ব্যাটিংয়ের পুনরাবৃত্তি রিয়াসাত করতে চাইবেন বিশ্বকাপেও। সঙ্গে মিডিয়াম পেস বোলিংটাও জানেন তিনি।
আফ্রিকান অঞ্চলের বাছাই পর্ব ছিল সাত দলের মধ্যে রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে। ওখানে কেনিয়া ও টেস্ট খেলুড়ে দেশ জিম্বাবুয়েকে হারায় উগান্ডা। নামিবিয়ার সঙ্গে ওই অঞ্চল থেকে দ্বিতীয় দল হিসেবে জায়গা করে নেয় উগান্ডা।
৪ জুন আফগানিস্তান ও একদিন পর পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে মাঠে নামবে উগান্ডা। বিশ্বকাপে তাদের পরের ম্যাচ স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ৯ জুন। শেষ ম্যাচে ১৫ জুন উগান্ডা মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ডের।
জম্ম: ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯১ (কাম্পালা, উগান্ডা); বয়স: ৩২ বছর।
জাতীয় দলে ভূমিকা: ব্যাটার (ডানহাতি)
ব্যাকগ্রাউন্ড
আফ্রিকার দেশ উগান্ডা। বাংলাদেশে নামটা পরিচিত হতে পারে ট্রলের জন্য। তবে তারা এবার যাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। দলটির নেতৃত্বে থাকবেন ব্রায়ান মাসাবা।
৩২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার ডানহাতি ব্যাটার। প্রায় দশ বছর ধরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উগান্ডার প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছেন তিনি। গত দুই বছর ধরে আছেন অধিনায়কত্বের দায়িত্বে।
ক্যারিয়ার
উগান্ডার ওয়ানডে স্ট্যাটাস না থাকায় এই ফরম্যাটে তার খেলা হয়নি। টি-টোয়েন্টিতে সবমিলিয়ে ৫৯ ম্যাচে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন মাসাবা। ৩৫ ইনিংস ব্যাট করে ১৮.১২ গড় ও ১০৭.৯৪ স্ট্রাইক রেটে ৪৩৫ রান করেছেন তিনি। বল হাতে নিয়েছেন ১৯ উইকেট।
অধিনায়কত্ব
উগান্ডা টি-টোয়েন্টি স্ট্যাটাস পাওয়ার পর নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন মাসাবা। সবমিলিয়ে ৫৬ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ৪৪টিতে জয় এনে দিয়েছেন, হেরেছেন ৯টিতে। এখানে একটি রেকর্ডও আছে তার। বাবর আজমের পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয়ীদের তালিকায় মাসাবা আছেন দুই নম্বরে।
উগান্ডার জন্য ক্রিকেটের এই পথচলা স্বপ্নের মতো। প্রথমবারের মতো তারা যাচ্ছে আইসিসির যে কোনো ফরম্যাটের বিশ্বকাপে। এখানে স্মরণীয় কিছুই করে রাখতে চাইবেন দেশটির ক্রিকেটাররা। এক্ষেত্রে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন মাসাবা।
জন্ম: ৩০ এপ্রিল, ১৯৬৯ (দিল্লি, ভারত), বয়স: ৫৫
কোচিং ক্যারিয়ার ও অভিজ্ঞতা
কোচিং ক্যারিয়ারটা বেশ সমৃদ্ধ অভয় শর্মার। ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের রেলওয়ে ক্রিকেট দলের ৭ বছর কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ইংল্যান্ডে ব্যাটিং, ফিল্ডিং এবং উইকেট কিপিং কোচিংয়ের কোর্স সম্পন্ন করে আসার পর ভারতের ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হন।
যার অধীনে ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দল ও জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করেছেন ফিল্ডিং কোচ হিসেবে। দিল্লি রঞ্জি দলের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। এছাড়া রঞ্জিতে হিমাচল প্রদেশের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কাজ করেছেন ভারতের নারী দলের সঙ্গেও। ২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে ভারতীয় জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে তার অভিজ্ঞতাকেই বেছে নিয়েছে উগান্ডা।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলতে যাচ্ছে দেশটি। যে কোনো ফরম্যাটেই আইসিসিরি যে কোনো বিশ্বকাপে এটি উগান্ডার জন্য প্রথম। এমন টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়ার ঠিক আগে অভয়কে নিয়োগ দেয় দেশটির ক্রিকেট বোর্ড।
খেলোয়াড়ী জীবন
কখনো ভারতের হয়ে খেলতে পারেননি অভয়। তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দিল্লির হয়ে ৮৯ ম্যাচ খেলে ৪১০৫ রান করেছেন তিনি। লিস্ট-এ ক্রিকেটে ৪০ ম্যাচে করেছেন ৭৮০ রান। এরপর কোচিং জীবনে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন অভয়।
উগান্ডার কোচ
আফ্রিকার দেশ উগান্ডার প্রথম বিশ্বকাপ স্বপ্নযাত্রার সঙ্গী তিনি। তার সঙ্গে দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের তিন বছরের চুক্তিও আছে। তার হাত ধরে বিশ্বকাপে অপ্রত্যাশিত কিছু করতে পারলে নিশ্চিতভাবেই অভয় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন উগান্ডার মানুষের কাছে।
ব্রায়ান মাসাবা (অধিনায়ক), ফ্রেড আসেলাম (উইকেটকিপার), দিনেশ নাকরানি, কসমাস কেউটা, রিয়াজাত আলি শাহ, জুমা মিয়াগি, রজার মুকাসা, ফ্রাঙ্ক এনসুবুগা, রবিনসন ওবুয়া, রোনাক প্যাটেল, হেনরি সেনিয়োন্ডো, সিমন সেসাজি, আলপেশ রামজানি, কেনেথ ওয়াইসওয়া, বিলাল হাসান।
রোভিডেন্স স্টেডিয়াম, গায়ানা
আফগানিস্তান 183/5 (20 ওভার)
উগান্ডা 58/10 (16 ওভার)
ফল: আফগানিস্তান ১২৫ রানে জয়ী।
রোভিডেন্স স্টেডিয়াম, গায়ানা
পাপুয়া নিউগিনি 77 (20 ওভার)
উগান্ডা 78/7 (18.2 ওভার)
ফল: উগান্ডা ৩ উইকেটে জয়ী।
রোভিডেন্স স্টেডিয়াম, গায়ানা
ওয়েস্ট ইন্ডিজ 173/5 (20 ওভার)
উগান্ডা 39/10 (12 ওভার)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৩৪ রানে জয়ী।
ব্রায়ান লারা ক্রিকেট একাডেমি, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো
উগান্ডা 40/10 (18.4 ওভার)
নিউজিল্যান্ড 41/1 (5.2 ওভার)
ফল: নিউজিল্যান্ড ৯ উইকেটে জয়ী।