ধর্ম

এতিম শিশুর দায়িত্ব নিতে তিন সাহাবির প্রতিযোগিতা

ইসলাম এতিম, অসহায়, বা দরিদ্র শিশুদের সাহায্য করতে, তাদের দায়িত্ব নিতে উৎসাহিত করে। কোরআনে ও হাদিসে বার বার এতিম শিশুদের সাহায্য করতে, আশ্রয় দিতে, তাদের জন্য ব্যয় করতে ও তাদের স্নেহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সদকা বা দান করার খাতসমূহের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, করার উপযুক্ত শ্রেণির বিষয়ে বলেন, তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে? বলে দিন, তোমরা যে সম্পদ ব্যয় করো তা পিতামাতা, নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য। আর তোমরা যে কোনো সৎকাজ করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা জানেন। (সুরা বাকারা: ২১৫)

Advertisement

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে অংশীদার করো না। আর পিতামাতার প্রতি সদয় হও, নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, নিকটবর্তী প্রতিবেশী, দূরবর্তী প্রতিবেশী, পাশে থাকা সঙ্গী, মুসাফির এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদয় হও। (সুরা নিসা: ৩৬)

আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, বিধবা ও মিসকিনের জন্য পরিশ্রমকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মতো মর্যাদার অধিকারী। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

সাহল ইবনে সা’দ (রা.) হতে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি ও এতিমের প্রতিপালক জান্নাতে একসাথে থাকব। (সহিহ বুখারি)

Advertisement

আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি নবিজির (সা.) কাছে গিয়ে তার হৃদয়ের কঠোরতার বিষয়ে অভিযোগ করলেন। নবিজি (সা.) তাকে বললেন, আপনি কি চান আপনার হৃদয় কোমল হোক এবং আপনার প্রয়োজন পূরণ হোক? তবে এতিমের প্রতি দয়া করুন, তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিন এবং তাকে নিজ খাবার থেকে খাওয়ান। এতে আপনার হৃদয় কোমল হবে এবং আপনার প্রয়োজন পূরণ হবে। (তাবরানি)

এতিমদের প্রতিপালন ও তাদের প্রতি দয়া করার ফজিলত সম্বলিত আরও বহু হাদিস বর্ণিত রয়েছে।

সাহাবায়ে কেরাম এতিমদের লালন-পালনের দায়িত্ব নিতে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা হতো। একজন এতিমের দায়িত্ব নিতে দুই/তিনজন সাহাবি এগিয়ে আসতেন।

যেমন বর্ণিত রয়েছে, ওহুদ যুদ্ধে শহিদ হজরত হামজার (রা.) এতিম মেয়ে উমামার প্রতিপালনের দায়িত্ব নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে তিনজন সাহাবি তার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হয়েছিলেন।

Advertisement

নবিজি (সা.) তখন ওমরাহ পালন করতে মদিনা থেকে মক্কায় গিয়েছিলেন। একদিন উমামা তাকে ‘চাচা’ বলে ডাকতে ডাকতে তার কাছে ছুটে আসে। আলী (রা.) শিশুটিকে কোলে তুলে নেন এবং বলেন তিনিই এই শিশুর প্রতিপালনের দায়িত্ব নেবেন। আলী (রা.) বলেন, তিনি উমামার চাচাতো ভাই এবং তিনিই প্রথম তাঁকে কোলে নিয়েছেন, তাই তার দায়িত্ব তাকেই দেওয়া হোক।

জাফর ইবনে আবি তালিবও (রা.) তার দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, তিনি উমামারও চাচাতো ভাই এবং তাঁর স্ত্রী উমামার খালা। খালা যেহেতু মায়ের মতো, তাই এই এতিম শিশুটি তার ঘরেই বেশি আদর-যত্নে থাকবে।

জায়েদ ইবনে হারিসাও (রা.) তার দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, উমামা আমার ভাইয়ের মেয়ে, যেহেতু তিনি ও হামজা (রা.) দুধ-ভাই ছিলেন।

আল্লাহর রাসুল (সা.) তিনজনের বক্তব্য শুনে উমামার লালন-পালনের দায়িত্ব জাফরকে (রা.) দেন এবং বলেন, খালা মায়ের মতো।

নবিজি (সা.) আলী (রা.) ও জায়দকেও (রা.) উৎসাহ দেন, নেক কাজে আগ্রহের জন্য তাদের প্রশংসা করেন।

সূত্র: মিরকাতুল মাফাতিহ, আল-বাদরুত তামাম ওএফএফ/জিকেএস