বিপিএল বরাবরই অনিয়মের আসর। নানা অভিনব ঘটনা ঘটার ক্ষেত্র। অস্বাভাবিক ঘটনার মেলা। পারিশ্রমিক নিয়ে প্রতিবার বিপত্তি। ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক দিতে মালিকপক্ষে গাফিলতি, গড়িমসি-প্রতিবারের চিত্র। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
Advertisement
শুরু থেকেই পেমেন্ট নিয়ে নাটক চলছে। সঙ্গে নানা অভিনব ঘটনা, ক্রিকেটারদের ভোগান্তির খবর শোনা যাচ্ছে প্রায় দিনই। পেমেন্ট না পেয়ে প্র্যাকটিস বাতিল, বিদেশি ক্রিকেটারদের ম্যাচ থেকে বিরত থাকা, পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট না হয়ে জাতীয় দলের ক্রিকেটারের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক ব্যবহার, ক্রিকেটারদের পাওনা শোধে খোদ ক্রীড়া উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ, ফ্র্যাঞ্চাইজিদের পারিশ্রমিক শোধে কড়া নির্দেশ দেওয়া, তারপরও পেমেন্ট না দেওয়ায় একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে চলে যাওয়া।
এর মধ্যে আবার ফিক্সিং নিয়েও ফিসফাস, গুঞ্জন, কানাকানি, সন্দেহ! সব মিলিয়ে এবারের বিপিএলও মাঠের বাইরের ঘটনায় সয়লাব।
এসব নিয়েই কেটে গেল ৫ সপ্তাহ। আগামীকাল ৭ ফেব্রুয়ারি ফাইনাল। কোথায় দু’দলের ফাইনাল ভাবনা, লক্ষ্য ও পরিকল্পনার কথা লেখা হবে। ফরচুন বরিশাল আর চিটাগাং কিংস-কার শক্তি ও সম্ভাবনা কতটা, এসব নিয়ে রাজ্যের আলোচনা-পর্যালোচনা হওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে ফাইনালের আগের দিন পর্যন্ত মাঠের বাইরের ঘটনা নিয়েই নানা রটনা, গুঞ্জন, ফিসফাস চারদিকে।
Advertisement
ফাইনালের আগের দিন দুপুরে হঠাৎ শোনা গেল, চিটাগং কিংসের হোস্ট ইয়াশা সাগর চলে গেছেন। দল অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ফাইনালে উঠেছে। এখন দলের হোস্টের উচিত ছিল ক্রিকেটারদের উৎসাহ দেওয়া, উজ্জীবিত করা, অনুপ্রাণিত করা। কিন্তু তিনি চলে গেলেন ভারতে! তাও যতদূর জানা গেছে, কাউকে কিছু না জানিয়ে। প্রশ্ন জাগে-আসলে কী হলো?
ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং গত প্রায় ১০ বছর ধরে কানাডা প্রবাসী এই নারী হোস্ট হঠাৎ কেন, কী কারণে দেশ ছাড়লেন? তা নিয়ে নানা প্রশ্ন, কৌতূহল, গুঞ্জন।
প্রশ্নটা আরও জোরালো হয়েছে দুটি কারণে-
১. শোনা যাচ্ছে, চিটাগাং কিংসের পেমেন্ট নিয়েও বিপত্তি আছে।২. তাদের মালিক ক্রিকেটার পারভেজ ইমনের পারফরম্যান্সে অসন্তুষ্ট হয়ে কটু মন্তব্য করে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন।
Advertisement
তাই ইয়াশার চলে যাওয়ার ঘটনা আরও বেশি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
চিটাগং কিংসের লিগ্যাল নোটিশ?সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অসমর্থিত কিছু খবরে বলা হয়েছে, চিটাগং কিংস ইয়াশা সাগরকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে। এদিকে তার পাওনা পরিশোধেও নাকি গাফিলতি ছিল ফ্র্যাঞ্চাইজির। যে কারণে দল ফাইনালে ওঠার পরও ইয়াশা ঢাকা ছেড়েছেন।
আসল ঘটনা কী?এটি জানতে হলে দু’পক্ষের মন্তব্য জানা দরকার। যেহেতু ইয়াশা বাংলাদেশ ছেড়েছেন, তাই তার মন্তব্য জানা যায়নি। তবে চিটাগং কিংসের ইয়াকুব রাসেল জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন, কোয়ালিফায়ার-২ ম্যাচের আগে, ৩ ফেব্রুয়ারিই ভোরে কাউকে কিছু না বলে ভারত চলে গেছেন ইয়াশা সাগর।
তার পেমেন্ট নিয়ে কি কোনো সমস্যা ছিল? চিটাগং কিংস কি তার পারিশ্রমিক যথাসময়ে পরিশোধ করেনি? নাকি অন্য কোনো সমস্যা? এ প্রসঙ্গে ইয়াকুব রাসেল বলেন, ‘না, না। আমাদের মালিকপক্ষ ইয়াশার পেমেন্ট পরিশোধ করেছে। তার ৫০ শতাংশ এর বেশি পেমেন্ট দেওয়া হয়ে গেছে। তার সঙ্গে আমাদের পারিশ্রমিক নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। চুক্তির সময় আমরা তাকে ৫ হাজার ডলার দিয়েছি, পরে নির্ধারিত সময়ের কিছুদিন পর আরও ৫ হাজার ডলার দিয়েছি। পেমেন্ট কোনো ইস্যু না।’
তাহলে সমস্যা কোথায়?কী এমন ঘটল যে ফাইনালে ওঠার পরও দলের হোস্ট দেশ ছেড়ে চলে গেলেন? চিটাগং কিংসের মিডিয়া ম্যানেজারের ব্যাখ্যা, ‘আসল সমস্যা অন্য জায়গায়। ইয়াশার সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি ছিল, তিনি তার ২০ শতাংশ কাজও সম্পন্ন করেননি। আমাদের এক স্পন্সরের একটি প্রোগ্রামে তাকে হোস্ট হতে বলা হলে তিনি তা করতে অস্বীকৃতি জানান। সেখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। তাকে সে অনুষ্ঠানে হোস্ট হতে বলার পরও তিনি বারংবার অস্বীকৃতি জানান।’
ইয়াকুব রাসেল যোগ করেন, ‘ওই ঘটনার পর তিক্ততা বৃদ্ধি পায় এবং ইয়াশার সঙ্গে আর আমাদের মালিকপক্ষের কথা হয়নি। পরে আমরা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী লিগ্যাল নোটিশ পাঠাই।’
লিগ্যাল নোটিশের পরপরই দেশ ছাড়লেন ইয়াশা২ ফেব্রুয়ারি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর পর, ইয়াশার পাসপোর্ট চিটাগং কিংসের কাছেই ছিল। ভিসা বাড়ানোর জন্য হেড কোচ শন টেইট এবং আরও ৪-৫ জন ক্রিকেটারের পাসপোর্টের সঙ্গে ইয়াশার পাসপোর্টও রাখা হয়েছিল। কিন্তু তিনি অনেক হৈ-চৈ করে পাসপোর্ট নিয়ে নেন এবং ৩ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টায় গুলশানের টিম হোটেল (শেরাটন) থেকে অজানা গন্তব্যে চলে যান।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি ভারতে গেছেন এবং সেখানে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের হোস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেছেন।
এআরবি/এমএমআর/জিকেএস