হুলস্থুল
Advertisement
লাশবাহী গাড়ি থেকে নামলে তুমিএকাএবং অন্যান্য দিনের চেয়ে সম্মনিত পোশাকে; গরিব ও স্বভাব সুলভ বিষণ্নতায় দাঁড়ানো রোড লাইটের কাছাকাছি স্থির আমি—খালি হাতে বেরিয়েছি আজ।
কোথাও থেমে নেই কিছুলবণ ও গ্রন্থিত তাপমাত্রার মতন ছড়িয়েছো তুমি;ভূমিহীন বালক আমিপথের পথে বসে আছি চুপচাপ—অন্ধকার অরণ্যে।
দেখা হলে ফের মুছে দিও ঘুমছুঁয়ে দিও ঠোঁট—অলীক কুসুম জড়িয়ে নাকেতোমার ডাকেপ্রিয় ঘোর গুঁজে তলিয়ে যাবো নিখুঁত সাদায়।
Advertisement
****
জনতা ব্যাংক রোড
গোলাপি মলাটের তাশাহুদ বাজছে মৃদু কান্নায় জড়িয়ে যাচ্ছে ক্ষুধার তবলা,আহা কোকিলের এসরাজক্রমাগত সংকটে ফুটেছো একা—আমাদের পড়শি বাগানেফুলে-ফলে বেড়ে উঠছো আবার; অবিকল হাট ফেরত বাবার মতন।
না’র ওজনে চাপা পড়েছে জীবননাগরিক তীব্রতাও;তবুও ইচ্ছেরা হাঁটে—অনাগত ত্রাসের লোভেগলিমুখে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে সাদা পোশাকের কেউ।
Advertisement
আমাদের টানাটানির সংসারভুলেও শখের দোকান খোলে না কেউনুয়ে যাচ্ছে বাবাটা;জনতা ব্যাংক রোড ধরে যেতে যেতে বলি—কন্যা ভাগ্যের বাবাদের একটা টাকশাল থাকা ভালো!
****
বাতাসের কানে কানে
কোনো এক ভোরে তেজদাসকাঠী যাবো আবারপায়ে শিশির মেখেগোপনে একা একাহেঁটে যাবো তোমার দরোজায়।
যুদ্ধ থেমে যাওয়ার আগে অন্তত একবার মসজিদের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা নিঃসঙ্গ ইদগাহের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবোঅন্তহীন নিঃশ্বাসের শেষ ছায়ায়।পুরোনো রং দেখে দেখে হলুদ ফ্রক অবধি চোখে ছড়িয়ে দেবো ঘুম—
উষ্ণ স্পর্শে জ্বলে উঠবে ছোঁয়াচে ইশকুল;ধীর পায়ে পাশাপাশি কেঁদেকেঁদেশেষ বিকেলের গাঢ় চুম্বনে তলিয়ে যাবো আবার।
****
পরমা এসেছিল
ক্লান্তি মুখর উৎসব শুধুতাকিয়ে থাকে—পাশাপাশি সন্ধ্যায়একাকী গোলাপ বাগানে;মানুষহীন সংলাপ তবু ভিজে যায়অন্যত্র অতিকায় বৃত্তের মুখোমুখি।
সুরম্য সন্ধ্যায় এসেছিল পরমাগভীর কালোর মিছিল শেষেঅন্যসব জীবনের মতনঅস্থির, আলুথালু বেশে—হাতে ছিল জমানো পথের উৎসুক ধুলোথিতানো কান্নার নীরব ছয়লাব।
তবুও সে বিরতির গোসসা নিয়েছুটেছে গণিতের পা অবধি;থেমে থেমেমুছে গেছেএলোমেলো গলির গভীর সুর-তালে।
****
উনুন
ঘর পোড়া মানুষের মতো তাকিয়ে থাকিদেখি তুমি জ্বলছো, একা—সঙ্গমরত সাপের মতন গলে যাচ্ছোধীরেধীরেনিজের শরীর হারিয়েঅন্য শরীরের গভীরে।
আমারও বুক পুড়ে যায়নিজস্ব গঞ্জে গঞ্জে ছড়িয়ে যায় অগনিত সাপুড়ে মুখ;সমগ্র বন্দনার পাশে দাঁড়িয়ে যায় অদ্ভুত এক দেওয়াল—সামনে পেছনে সারি সারি তুমিঅথবা দীর্ঘ লাইনের আগুন;হইচইয়ের তাপে আমিও গলে যাই।তবুও তাকিয়ে থাকি—আগুনের গুনগুনেঅদৃশ্যের অজস্র সঙ্গমের মাঝে তোমাকে আবিষ্কারের ভরসায়।
****
রোজার সন্ধ্যা
নগরীর কৌশলে আস্ত একটা জীবন খুইয়েজীবন হারানো মাস্তানের মতন বসে আছি।অসহায়দুস্থকবরস্থ গণিতের মতন নীরব।দূর থেকে টের পাইমায়ের শরীর থেকে একটা দুঃখ দুঃখ ঘ্রাণ আসে,তবুও মা হাসেন,হয়তো কাঁদেনও...দেখি না কখনো।কেবল টের পাই উনুন ফেরত মুখোশ খুলেছড়িয়ে যাওয়া ক্লান্ত মাথায় মা নামিয়ে দিচ্ছেন সৌরজগত।
****
মুখোমুখি
বিষণ্ন দূরবীণে চোখ রেখে গেয়ে ওঠে দিন;কী এক বিভ্রম ফুটছে গোপনে—আরও অস্থির, উন্মাদকলহজুড়ে ডুবছে লাটাই। কেটে যাচ্ছো? যাও, গহীন সন্ধানে আবৃত হও তুমুল।নগণ্য এ তীর্থে ছোঁয়াচে কুঠার, কেটে দেয় ডাক;এবং অভ্যাস ফেরত মুখোমুখিফিরেছে কেবল, অভাবী ভ্রূ নিয়ে কাটাকাটি বিস্তর।ভুলে গেছি কবুলের বায়না ছিল সন্ধ্যা সন্ধ্যা নাচে,ঘিরে ছিল পশমি দরজা;বিশ্বাস রেখো নরম চোখাচোখি নিয়েআমাদেরও একদিন স্নান হবেঘুড়ির ব্যাকরণ ভুলে ছয়লাব হবে নিষিদ্ধ কোলাহল,কান্নার ঘ্রাণে তলিয়ে যাবে সমগ্র কাঁটাতার।
****
অবশিষ্ট
বিদায়ের পরে কী থাকে আর?গহীন প্রলয়ে ডুবে যাওয়া ছাড়া;অসুখের পাপড়ি ছড়িয়ে থাকে পথে পথে নির্ঘুম আঁকি—মন্থর কান্নায় মার্জিত মায়া লেপ্টে থাকে একা,দূর নয়; কাছাকাছি কোথাও জেগে থাকে সকালএলোমেলো শখের শয্যায় চুপচাপ।
অনাগত দেওয়ালের শরীর বৃত্তান্তে কোন ছবি?কে আবার ছইহীন নাওয়ের গলুইয়ে এখনরাত্তির নামায় গানের গলায়!বিদায়ের পরে কী থাকে আর?ধুলোমাখা চুম্বন ছাড়া।
****
কবর
পাশ দিয়ে হেঁটে যাওটের পাই, দেখা পাই না কভু;অনাথঅন্ধকার জড়িয়ে শুয়ে থাকি, একা—পড়শি দোকানে বসে থাকো তুমিক্ষুধার্ত, অস্থির আলেয়ার জানালা ছুঁয়ে উড়ে যায় ক্লান্ত চোখ আমার;তীঘ্ন শোকের উল্লাস তোমার বয়ে যায় দূরে...
আমাদের কোলাহল ফুরিয়েছে কবে;অজস্র জ্বরের জ্বালা নিয়ে ঠোঁটে নাকের পাঠ শেষে শুয়েছে কালোমিথ্যের আম্রেলায়—কেবল আমি মিশেছি আয়নায়সাদার শরীর জুড়ে গভীর আশ্রয়ে যেভাবে ফুটে থাকে ভাটফুল!
****
দাস
চেয়েছিলাম, সহজ—সুখি ঢেউ;সবুজ বৃক্ষের মতন সরল বাক্যবিটিভির রক্ষণশীল ছায়া ইচ্ছে হলে শুক্রবার ডিঙিয়ে চলে যাবো—পড়শির সিনেবক্সে। বিজ্ঞাপনের ধৈর্য পরীক্ষায় পাস করে স্থির নদীর মতন গন্তব্যের অপেক্ষায় কেটে যাবে দিন;কেবল ভালো লাগার জোড়ে পাড়া-মহল্লার নাট্যমঞ্চে ভেঙে দেবো রোদছড়িয়ে পড়বো বিকেলের ইশারায়ভাঁজে ভাঁজে রহস্য, বুদ্বুদ তুলবে চোখে-মুখে।
চেয়েছিলাম—কবি, বটবৃক্ষ;ইচ্ছে ছিল জীবনের সরলতাকে উল্টেপাল্টে ডুবে যাবো যাপনে—পাল্টে দিবো দেশ-দিন;
ছুঁতে পারিনি নিজেকেজীবনের ধুলোবালিতে মাখামাখি সব;কী হয়েছি এখন?...কর্পোরেট দাস!
****
বইয়ের নাম: জনতা ব্যাংক রোডকবির নাম: সানাউল্লাহ সাগরধরন: কবিতার বইপ্রকাশক: দেশ পাবলিকেশন্সপ্রচ্ছদ: আল নোমানস্টল নম্বর: ৬৮৬-৬৮৮।
এসইউ/এমএস